ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বিজয় দিবস উদযাপনের সমাবেশে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর উপ-সহকারী মন্ত্রী আফরিন আক্তার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখে এবং আশা করে আগামী ৫০ বছরে দুদেশের মধ্যে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উঠবে।’
আফরিন বলেন, ‘গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে দুদেশের জনগণ, সরকার ও অর্থনীতির মধ্যে, অসাধারণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।’ আফরিন আক্তার দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর বলেও উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে আফরিন আক্তার আরো বলেন, ‘মাত্র কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে অর্থনৈতিক শক্তিতে সম্প্রসারিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি সত্যিই গর্ব করার মতো গল্প যে, বাংলাদেশ লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বের করে এনেছে এবং প্রজন্মের মধ্যে মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করবে, যা সত্যিই অসাধারণ।’
বাঙালি জাতির দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা লড়াই এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছিলেন তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে ১৬ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। গৌরবময় বিজয় দিবস স্মরণে দূতাবাসের দিনব্যাপী কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন আফরিন আক্তার। অর্থনৈতিক সহযোগিতার বাইরেও আফরিন আক্তার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্য দিয়ে দিনের প্রথম পর্বের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে সকল শহিদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্বে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানসহ বিশিষ্টজনেরা এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রদূত ইমরান তার বক্তব্যে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। রাষ্ট্রদূত ৩০ লাখ শহিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত দুই লাখ নারীর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
মহান বিজয় দিবসকে বাঙালি জাতির জন্য একটি গৌরবময় দিন বলে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। রাষ্ট্রদূত ইমরান জাতির পিতা ও ৩০ লাখ শহিদের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান।
বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনের কর্মসূচি। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও তাদের সহধর্মিণীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা জেমস ব্রেনন ফ্ল্যানিগান প্রখ্যাত কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতা বাংলায় আবৃত্তি করেন। বাংলাদেশি-আমেরিকান সাংস্কৃতিক সংগঠন ধ্রুপদী’র শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গানের সাথে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন।
দিনব্যাপী কর্মসূচির দুই পর্বের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাউন্সেলর শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি ও ফার্স্ট সেক্রেটারি মো. আতাউর রহমান। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দূতাবাসে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন ঢাকার সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিক্যাট, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এবং সপরিবারে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ।