ট্রাম্পের শপথের আগেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরার পরামর্শ 

ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন আগামী ২০ জানুয়ারি। আর এর আগেই মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরতে বলেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণের পরপরই কিছু দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন ট্রাম্প—এমন উদ্বেগের কারণে বেশ কয়েকটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে এবং তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই অর্থনীতি ও অভিবাসন নিয়ে বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে সই করবেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, বিশেষ করে ২০১৭ সালে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-গবেষকদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। যাঁরা শপথ গ্রহণের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভ্রমণে থাকতে পারেন, তাঁদের ভ্রমণ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক ব্যুরো এবং ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের (আইআইই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয় ও চীনাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ দুই দেশ মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদেশি শিক্ষার্থীর ৫৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বিভাগের সহযোগী ডিন ও পরিচালক ডেভিড এলওয়েল ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরপরই এক পোস্টে বলেন, ‘ফেডারেল প্রশাসনে পরিবর্তনের ফলে উচ্চশিক্ষা এবং অভিবাসন ও ভিসা সম্পর্কিত নীতি ও নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে।’ তিনি ছাত্রদের শীতকালীন ছুটিতে ভ্রমণের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ ভ্রমণ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণকে প্রভাবিত করতে পারে।’

এলওয়েল আরও উল্লেখ করেন, প্রশাসন পরিবর্তনের ফলে বিদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটের কর্মীসংখ্যা হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সময় বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার জন্য নতুন ভিসার প্রয়োজন হতে পারে, তারা যেন দীর্ঘ ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সম্ভাবনা বিবেচনা করে এবং বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখে। যেকোনো ধরনের বিলম্ব তাদের যথাসময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।’

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস, অ্যামহার্স্ট তাদের বিদেশি শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বলেছে, ‘ইউমাসের অভিবাসন স্পনসরশিপের আওতায় থাকা বিদেশি শিক্ষার্থী, গবেষক, শিক্ষক এবং কর্মী যাঁরা শীতকালীন ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভ্রমণ করবেন, তাঁরা (ট্রাম্পের) শপথগ্রহণের আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করুন।’
ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটির ম্যাগাজিন ওয়েসলিয়ান আরগুস জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক ও অনথিভুক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীবিষয়ক কার্যালয় জানিয়েছে, ‘শপথগ্রহণের দিনটি ২০ জানুয়ারি, সোমবার। সে সময় এবং স্প্রিং বা বসন্ত সেমিস্টারের পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সমস্যা এড়াতে ১৯ জানুয়ারি বা তার আগে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সবচেয়ে নিরাপদ।’
এর আগে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদের শুরুতে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সাত মুসলিম দেশের—ইরাক, সিরিয়া, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন—নাগরিকদের ওপর ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয় এবং সিভিল রাইটস সংগঠনগুলো তীব্র সমালোচনা করে। তাই অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আন্তর্জাতিক ছাত্রদের যেন তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করতে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করছে।