যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়দের গড় আয়ু বেশি, আদি আলাস্কাবাসীদের কম

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:০৬

যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য পুরোনো সমস্যা। এই বৈষম্য আরও গভীর হয়েছে কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে। গবেষকেরা মানুষের মধ্যে আয়ুষ্কালের পার্থক্যকে বৈষম্যের প্রমাণ হিসেবে হাজির করছেন। দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে জনগোষ্ঠী ভেদে গড় আয়ুর পার্থক্য সর্বোচ্চ ২০ বছর।
যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়, স্থানীয় হাওয়াইয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের বাসিন্দাদের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। তাঁদের আয়ুষ্কাল ৮৪ বছর। অন্যদিকে আমেরিকান ইন্ডিয়ান ও আদি আলাস্কাবাসীর গড় আয়ু সবচেয়ে কম। তাঁদের আয়ুষ্কাল ৬৩ দশমিক ৬ বছর। অর্থাৎ এই দুই জনগোষ্ঠীর গড় আয়ুর পার্থক্য ২০ বছরের কিছু বেশি।
নতুন এক গবেষণা প্রবন্ধে এই বৈষম্য তুলে ধরেছে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট। ‘যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জনগোষ্ঠী: যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বৈষম্যের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ’ শিরোনামের প্রবন্ধটি আজ শুক্রবার ল্যানসেটের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্যের ব্যাপ্তি ও গভীরতা সত্যিকার অর্থে উদ্বেগজনক।’
একজন ব্যক্তি কোথায় বাস করেন, বসবাসের স্থানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যক্তির জাতিগত ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়—এসব বিষয় আয়ুষ্কালের ওপর প্রভাব ফেলে। গবেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে আযুষ্কালের পার্থক্য শতাব্দীর শুরু থেকেই ছিল। গত দুই দশকে পার্থক্য আরও বেড়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির সময় তা নাটকীয়ভাবে খারাপের দিকে যায়।
দুই দশক আগে একদল গবেষক আয়ুষ্কালের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে আটটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে প্রথম বৈষম্যটি সামনে এনেছিলেন। ‘এইট আমেরিকাস’ নামের ওই গবেষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতের বৈষম্যকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। বর্তমান গবেষণায় সেই আটটির পাশাপাশি আরও দুটি দলকে যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ বৈষম্য যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে ১০ শ্রেণির জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে। এতে ২০০০ থেকে ২০২১ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জনগোষ্ঠী
ল্যানসেটের নিবন্ধে গড় আয়ুর ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে যে ১০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, সেগুলো হলো—
‘যুক্তরাষ্ট্র-১’ বলতে এশীয়, স্থানীয় হাওয়াইয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের বাসিন্দাদের বোঝানো হয়েছে। ২০২১ সালে তাদের গড় আয়ু ছিল ৮৪ বছর। ২০০০ সালে তা ছিল ৮৩ দশমিক ১ বছর।
‘যুক্তরাষ্ট্র-২’ বলতে লাতিন জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। ২০২১ সালে তাদের গড় আয়ু ছিল ৭৯ দশমিক ৪ বছর। এর আগে ২০০০ সালে তা ছিল ৮০ দশমিক ৪ বছর। অর্থাৎ তাদের আয়ু কমেছে।
‘যুক্তরাষ্ট্র-৩’ বলতে মূলত শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে কিছু আমেরিকান ইন্ডিয়ান ও স্থানীয় আলাস্কাবাসী রয়েছে। ২০২১ সালে তাদের গড় আয়ু ৭৭ দশমিক ২ বছর। ২০০০ সালে তা ছিল ৭৭ দশমিক ৫ বছর।
‘যুক্তরাষ্ট্র-৪’-এও শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী। তবে তারা বসবাস করে আইওয়া, উত্তর ডাকোটা, দক্ষিণ ডাকোটা, মিনেসোটা, নেব্রাস্কা এলাকায়। এসব এলাকায় মাথাপিছু আয় কম। ২০২১ সালে সেখানকার বাসিন্দাদের গড় আয়ু ছিল ৭৬ দশমিক ৭ বছর। এর আগে ২০০০ সালে তা ছিল ৭৭ দশমিক ৬ বছর।
‘যুক্তরাষ্ট্র-৫’ মূলত দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাতিন জনগোষ্ঠী। এরা বাস করে অ্যারিজোনা, কলোরাডো, নিউ মেক্সিকো ও টেক্সাসে। ২০০০ সালে তাদের গড় আয়ু আগে ছিল ৭৭ দশমিক ৮ বছর। ২০২১ সালে হয়েছে ৭৬ বছর।
‘যুক্তরাষ্ট্র-৬’ বলতে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। ২০২১ সালে তাদের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। এর আগে ২০০০ সালে ছিল ৭২ বছর।
‘যুক্তরাষ্ট্র-৭’-এর অধীনেও রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী। তবে তারা জনবহুল বড় বড় মেট্রোপলিটন শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাস করে। আগে তাদের গড় বয়স ছিল ৭০ দশমিক ৬ বছর। সর্বশেষ বেড়ে হয়েছে ৭১ দশমিক ৫ বছর।
‘যুক্তরাষ্ট্র-৮’-এ রয়েছে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী। তারা অ্যাপালাচা ও নিম্ন মিসিসিপি উপত্যকায় বাস করে। তাদের মাথাপিছু আয় কম। ২০০০ সালে এই জনগোষ্ঠীর গড় বয়স ছিল ৭৪ দশমিক ৮ বছর। ২০২১ সালে তা হয়েছে ৭১ দশমিক ১ বছর। তাদের গড় বয়স অনেক কমেছে।
‘যুক্তরাষ্ট্র-৯’ কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর আরেকটি দল। তারা মেট্রোপলিটন এলাকায় বসবাস করে না। থাকে নিম্ন মিসিসিপি উপত্যকা বা দেশের সর্ব দক্ষিণে। কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে তাদের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে কম। ২০০০ সালে তাদের গড় বয়স ছিল ৭০ দশমিক ৫ বছর। ২০২১ সালে হয়েছে ৬৮ বছর। অর্থাৎ তাদের গড় বয়স আড়াই বছর কমেছে।
‘যুক্তরাষ্ট্র-১০’ জনগোষ্ঠীর বাস দেশের পশ্চিমাঞ্চলে। তারা আমেরিকান ইন্ডিয়ান ও স্থানীয় আলাস্কাবাসী। তাদের আয়ুষ্কাল ৬৩ দশমিক ৬ বছর। ২০০০ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। অর্থাৎ তাদের গড় আয়ু কমেছে প্রায় ৯ বছর।
গড় আয়ু সবচেয়ে কম ‘যুক্তরাষ্ট্র-১০’ বা আমেরিকান ইন্ডিয়ান ও আদি আলাস্কাবাসীর। গবেষকেরা বলছেন, এদের গড় আয়ু দুই দশক ধরে ক্রমাগতভাবে কমেছে। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিমার আওতা কম, বেকারত্ব বেশি এবং শিক্ষার হার কম। তাঁরা আরও বলছেন, বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম বছরে ‘যুক্তরাষ্ট্র ২, ৫, ৬, ৭, ও ৯’-এ গড় আয়ু কমে যাওয়ার পেছনে কাজ করেছিল সুশৃঙ্খল বর্ণবাদ।
গবেষণা প্রবন্ধের শেষ দিকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্যের ব্যাপ্তি ও গভীরতা সত্যিকার অর্থে উদ্বেগজনক। ধনসম্পদ থাকার পরও এ দেশে অনেক মানুষ এমন পরিবেশে বাস করেন বা তাঁদের স্বাস্থ্য এমন যে, মনে হয় তাঁরা সম্পূর্ণ অন্য কোনো দেশের মানুষ। এই বৈষম্যের পেছনে রয়েছে সম্পদ ও সুযোগের অসম ও অন্যায্য বণ্টন।