নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন, এমন বর্তমান-সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের আগাম ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শীর্ষ সহযোগীরা।
আলোচনা সম্পর্কে অবগত একাধিক সূত্র এই তথ্য দিয়েছে। তবে সূত্রগুলো এ কথাও বলেছে, আলোচ্য আগাম ক্ষমার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, অপরাধ করেননি, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনে প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন, এমন ব্যক্তিদের বাইডেনের আগাম ক্ষমা করা উচিত কি না, মূলত তা নিয়ে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা তর্ক–বিতর্ক, আলাপ-আলোচনা করছেন।
হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এই আলোচনার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অবগত আছেন। তবে তিনি নিজে বিস্তৃত পরিসরের আলোচনায় অংশ নেননি।
আগাম ক্ষমা করা বা না করার বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত বাইডেনই নেবেন বলে জানান কর্মকর্তারা।
ফৌজদারি অপরাধের ঘটনায় গত রোববার প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর ছেলে হান্টারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা করেন। যদিও আগে বাইডেন বারবার বলেছিলেন, তিনি তাঁর ছেলেকে ক্ষমা করবেন না।
বাইডেনের এই সিদ্ধান্তের পর তাঁর প্রশাসনের বর্তমান-সাবেক কর্মকর্তাদের প্রেসিডেন্টের আগাম ক্ষমাসংক্রান্ত আলোচনায় গতি আসে।
গত শনিবার ট্রাম্প তাঁর হবু প্রশাসনের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এফবিআই) পরিচালক হিসেবে কাশ প্যাটেলের নাম ঘোষণা করেন। তিনি ট্রাম্পের সমালোচকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁর এমন অঙ্গীকার হোয়াইট হাউস ও বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শঙ্কিত করে তুলেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বাইডেনের আগাম ক্ষমার জন্য যাঁদের বিবেচনা করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক রিপাবলিকান সদস্য লিজ চেনি, শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি, ক্যালিফোর্নিয়ার নবনির্বাচিত সিনেটর অ্যাডাম শিফ, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মার্ক মিলে।
ট্রাম্পের কড়া সমালোচক লিজ চেনি। অ্যান্টনি ফাউসি বাইডেনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। করোনা মহামারিকালে বাইডেন প্রশাসনের সাড়ার (রেসপন্স) কাজে সমন্বয়ে সাহায্য করেছিলেন তিনি। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম অভিশংসন প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অ্যাডাম শিফ। মার্ক মিলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে অভিহিত করেছেন বলে একটি বইয়ে এসেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগাম ক্ষমাসংক্রান্ত আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাঁদের মধ্যে আছেন হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জেফ জিয়েন্টস, হোয়াইট হাউসের কৌঁসুলি এড সিসকেল।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
একটি সূত্র বলেছে, এই মুহূর্তে প্রশ্ন হলো, আগাম ক্ষমার জন্য যাঁদের নাম বিবেচনা করা হচ্ছে, তাঁরা আদৌ তা চান কি না।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে এই সপ্তাহের শুরুর দিকে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি আরও লোকজনকে ক্ষমার আদেশ জারি করতে পারেন।
ক্ষমা করার বিষয়ে মার্কিন সংবিধান দেশটির প্রেসিডেন্টকে বিস্তৃত ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়নি, এমন ক্ষেত্রে কাউকে আগাম ক্ষমার বিষয়টি মূলত অপ্রয়োজনীয়।
আগাম ক্ষমাসংক্রান্ত আলোচনার বিষয়টি নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন গণমাধ্যম পলিটিকো।