আশঙ্কজনকভাবে নিউইয়র্কে হত্যা, প্রকাশ্যে দোকানে ডাকাতি, বন্দুক হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্রায়ান থম্পসনকে গুলি করে হত্যা ও জ্যাকসন হাইটসে প্রকাশ্যে স্বর্ণের দোকানে লুটসহ সিটির বিভিন্ন স্থানে একাধিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত দেড় মাসে সিটিতে প্রায় ১৮ জন খুন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্যমতে, নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠান ‘ইউনাইটেড হেলথ কেয়ার এর প্রধান ব্রায়ান থম্পসন গুলিতে নিহত হয়েছেন। নিউইয়র্ক পুলিশ বলছে, ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে’ ব্রায়ানকে হত্যা করা হয়েছে। সন্দেহভাজন হামলাকারীর খোঁজে তল্লাশি অভিযান চলছে। বুধবার ভোরের দিকে ম্যানহাটানের হিলটন হোটেলের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পেছন থেকে ব্রায়ানকে গুলি করা হয়। তাঁর শরীরের পেছনের অংশে ও পায়ে গুলি লাগে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ওই ব্যক্তির সিসি ফুটেজসহ ছবি এবং সেন্ট্রাল পার্কে ফেলে যাওয়া ব্যাকপ্যাক ও আলামত পেয়েছে এনওয়াইপিডি পুলিশ। সর্বশেষ রোববার সেন্ট্রাল পার্কের পুকুরেও ডুবুরি দিয়ে আলামত খুঁজতে অভিযান চালিয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে হত্যাকারী ওই ব্যক্তি বিমা প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক অথবা কর্মচারি হতে পারে।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের জনবহুল ৭৪ স্ট্রিটের একটি জুয়েলারীর দোকানে প্রকাশ্যে স্বর্ণ লুট করে নিয়েছে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ৩৪ এভিনিউয়ের ৭৪ স্ট্রিটে অবস্থিত আবিদ জুয়েলার্স এর সামনের ডিসপ্লে কাঁচ ভেঙে বেশ কিছু স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায় মুখোশধারী সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। প্রকাশ্যে এমন লুটের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়েছে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পুলিশ ও ফেডারেল গোয়েন্দারা ওই মুখোশধারীদের সন্ধানে ও এমন ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আবিদ জুয়েলার্সের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সিটির লোয়ার ম্যানহাটনে ১৭ জন-সেন্টের কাছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে অভিবাসী ইয়েরেমি কলিনো নামের এক কিশোর নিহত এবং তার সাথে থাকা আরেক কিশোর আহত হয়েছে।
ব্রঙ্কসে বুধবার ২৭ নভেম্বর বেলা পৌনে ৩টার দিকে ব্রঙ্কস কাউন্টি হল অফ জাস্টিসের ঠিক নীচে কনকোর্সের পূর্ব ১৬১ তম স্ট্রিট এবং মরিস অ্যাভিনিউয়ের কোণের কাছে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের বন্দুকের গুলিতে ২৯ বছর বয়সী এক ব্যাক্তি নিহতের হয়েছেন।
২৪ নভেম্বর রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ব্রুকলিনে আলবেনি অ্যাভিনিউ এবং ডেকাটার স্ট্রিটের কোণে একাধিক ব্যক্তি গুলিবি হয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ আহত হয়েছেন।
গত ১৯ নভেম্বর কুইন্সের জ্যামাইকা এভিনিউয়ের গায় বুলেভার্ডে ডাকাতির সময় পুলিশের গুলিতে হত্যাসহ একাধিক অপরাধমূলক মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
১৮ নভেম্বর ম্যানহাটনে ছুরিকাঘাতে দুই ব্যক্তি নিহত ও একজন আহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে একজনের বয়স ২৬ অপরজনের বয়স ৬৮ বছর। ছুরিকাঘাতের শিকার দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ সময় ছুরিকাঘাতে আহত হোন একজন নারী।
১৬ নভেম্বর কুইন্সে ফার রকওয়ে এলাকার ১০২৫ বিচ ২০তম স্ট্রিটে ও ব্রঙ্কসের ৬৮৯ ইস্ট ২৩৩ স্ট্রিটের ওয়েকফিল্ডে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেনি। নিহত দুজনের একজনের বয়স ২৫ এবং অন্যজনের বয়স ৩৫ বছর।
১০ নভেম্বর বিকেলের দিকে ব্রুকলিনে সাইপ্রেস হিলসের ১৮৬ ওয়ারউইক সেন্টের একটি ডে-কেয়ারের পাশে অবস্থিত একটি বাসায় বাবা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছে এনওয়াইপিডি পুলিশ। নিহতরা হলেন রুজভেল্ট সিমন্স (৯১) ও তাঁর মেয়ে জ্যাকুলিন ডেলিয়ন্স (৬৬)। গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন ব্যাক্তি লুইস কেরি (৪৬)। নিহত ও গ্রেপ্তার ব্যাক্তি একই ঠিকানার বাসিন্দা।
১০ নভেম্বর ব্রঙ্কসে বাসা থেকে ছুরিকাঘাত অবস্থায় কেডিম গ্র্যান্ট নামে ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যাক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এর আগে ৫ বোরোতে ১০ দিনে পৃথক গুলাগুলি ও বন্দুক হামলার ঘটনায় ১জন যুবক এবং ৫ কিশোর-কিশারী নিহত ও আরো তিনজন আহত হয়েছেন। শনিবার ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় ব্রুকলিনে একটি অ্যাপার্টম্যান্ট থেকে আযাম ডাওকিন্সকে (২৯) নামে এক যুবককে গলা এবং পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। নিউ লটে ২০৬০ পিটকিন অ্যাভিনিউপড অবস্থিত গ্রেস টাওয়ারস অ্যাপার্টমেন্ট ভবন থেকে তাঁকে উদ্ধার করে ব্রুকডেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় ডাওকিন্স মারা যান।
সোমবার ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্রঙ্কসের লংউড রেভ জেমস এ এভিনিউয়েতে ১৮ বছরের এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জশুয়া স্প্যারো নামের ওই যুবকের মাথা গুলি করে দুর্বিত্তরা।
গত ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার হারলেমে ১৬ বছর বয়সী ক্লারেন্স জোনসকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর পরের দিন শুক্রবার রাতে ব্রুকলিনে ১৫ বছরের এক কিশোরকে, শনিবার গ্রিন ফোর্ট হাউজিংয়ে ১৬ বছর এবং রোববার ক্রাউন হাউটসে ১৫ বছরের আরো ৩ কিশোরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এ দিকে নিউ ইয়র্কে ব্রুকলিনে হ্যালোইনের দিনে গুলাগুলির ঘটনায় দুইজন ও শনিবার ব্রঙ্কসে আরেকটি গুলাগুলির ঘটনায় আরো একজন আহত হয়েছেন।
এদিকে শনিবার ভোরে মেলরোসের কর্টল্যান্ড এভিনিউ এবং ইস্ট ১৫২তম স্ট্রীটের মোড়ে গুলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে একজন পুরুষ ডান পায়ে গুলিবদ্ধ হোন।