যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়া একটি ‘হাস্যকর’ ধারণা। আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা নেওয়ার পর তিনি এই নিয়ম বদলে ফেলতে চান। আর এটা করা হলে ট্রাম্পের আমলে আর কেউ জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারবেন না।
ট্রাম্প যদি সত্যি সত্যি জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়ার জন্য প্রচলিত নিয়ম বাদ দিয়ে দেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চালু থাকা বিশেষ এই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে।
এই নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় জন্ম নেওয়া যেকোনো শিশু জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়ে যায়। ওই শিশুর বাবা–মা যে দেশেরই নাগরিক হোন না কেন, নবজাতক মার্কিন নাগরিক বিবেচিত হয়। ট্রাম্পের হাত ধরে এই নিয়ম দ্রুত পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ট্রাম্প একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমরা এটা বদলে ফেলতে চলেছি।’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদেও এ বিষয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে নিয়ম বদলের মতো কঠোর কোনো পদক্ষেপ তখন তিনি নেননি। এখন নিয়ম পরিবর্তনের কথা তুলেছেন ট্রাম্প।
নয়াদিল্লির আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সার্কেল অব কাউন্সেলসের অংশীদার রাসেল এ স্ট্যামেটস বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি দেশ এই নিয়ম অনুসরণ করে না। ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, এই নিয়মের অপব্যবহার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের নাগরিক হওয়ার জন্য আরও কঠোর মানদণ্ড থাকা উচিত।’
মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। কাজেই দেশটিতে এটা সাংবিধানিক আইন। এতে পরিবর্তন আনতে গেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হবু প্রশাসনকে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও এই নিয়মের ঘোর বিরোধীরা মনে করেন, এটা এখন রীতিমতো ‘বার্থ ট্যুরিজম’ বা ‘জন্ম পর্যটন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অন্তঃসত্ত্বা নারী শুধু সন্তান জন্মদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় প্রবেশ করেন। এর ফলে ওই সন্তান জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে যায়। বাবা–মা নিজ দেশে ফিরলেও সন্তানের মার্কিন নাগরিকত্ব থেকে যায়।
নাম্বার্সইউএসএর গবেষণা পরিচালক এরিক রুয়ার্ক বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, শুধু সীমান্ত অতিক্রম করা এবং একটি সন্তান থাকায় কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়াটা মোটেও সমীচীন নয়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি পরিবারগুলোতে ভাঙন চাই না। কাজেই পরিবারে ভাঙন দেখতে না চাইলে, পরিবারের সদস্যদের সবাইকে একসঙ্গে রাখতে চাইলে, একটাই সমাধান—তাদের সবাইকে ফেরত পাঠানো।’ এর অর্থ হলো, পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে রাখার যুক্তিতে বৈধ নাগরিকেরাও ট্রাম্পের খড়্গের নিচে পড়তে পারেন।
২০২২ সালের জনশুমারির তথ্য উল্লেখ করে পিউ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে,
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৮ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক বসবাস করেন। তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ বা ৩৪ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছে।
অর্থাৎ, তাদের সবাই প্রচলিত আইন অনুযায়ী জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক।
এখন ট্রাম্প যদি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আনেন, তাহলে এই প্রায় ১৬ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়বেন।
যাহোক, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এককভাবে সংবিধান সংশোধন করতে পারবেন না। আর নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার সীমিত করে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ জারির চেষ্টা সংবিধানের লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটা একটা আশার কথা।
অভিবাসনপন্থী হিসেবে পরিচিত ক্যাটো ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্স নাওরাস্তেহ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমি তাঁর (ডোনাল্ড ট্রাম্প) এমন অবস্থানকে খুব একটা গুরুত্ব দিই না। তিনি প্রায় এক দশক ধরে এ কথা বলে আসছেন।’
অ্যালেক্সের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আনার বিষয়টি এগিয়ে নিতে নিজের আগের শাসনামলে কিছুই করেননি।