ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুস-জালিয়াতির মামলায় শক্তিশালী তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তবে আদানির প্রত্যর্পণ শিগগিরই হবে বলে মনে করছেন না বলে বিশেষজ্ঞরা।
গত মাসে ব্রুকলিনের ফেডারেল প্রসিকিউটররা একটি অভিযোগপত্র প্রকাশ করেন, যেখানে গৌতম আদানিকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুস দিয়ে তার প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রিন এনার্জির উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনার জন্য প্রভাবিত করার অভিযোগ আনা হয়।
এছাড়া, আদানি যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য তার কোম্পানির দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম সম্পর্কে ভুয়া তথ্য প্রদান করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গৌতম আদানি, তার ভাতিজা সাগর আদানি ও আদানি গ্রুপের আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ জালিয়াতি এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই মামলায় অ্যাজুর পাওয়ার গ্লোবালের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন (এফসিপিএ) লঙ্ঘনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
অ্যাজুর পাওয়ার গ্লোবাল দাবি করেছে, তারা তদন্তে সহযোগিতা করেছে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এখন আর কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত নন। অন্যদিকে, আদানি গ্রুপ এই অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে এবং সম্ভাব্য সব আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গৌতম আদানি আটক অবস্থায় নেই। কিন্তু অভিযোগ গঠনের পর তিনি মাত্র দুইবার প্রকাশ্যে উপস্থিত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ৯ ডিসেম্বরের একটি অনুষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও উপস্থিত ছিলেন।
শক্তিশালী মামলা
অভিযোগ অনুযায়ী, সাগর আদানির মোবাইল ফোনে ‘ঘুসের নোট’ নামে পরিচিত হিসাবের নথি পাওয়া গেছে, যেখানে কথিত ঘুসের লেনদেনের তথ্য ছিল। এছাড়া, গৌতম আদানি নিজের ই-মেইলে একটি তল্লাশি ওয়ারেন্ট এবং গ্র্যান্ড জুরি সমন প্রেরণের তথ্য সংরক্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর স্টিফেন রেনল্ডস বলেছেন, অভিযোগে সহায়ক তথ্যের উল্লেখ থাকলে তা মামলাকে শক্তিশালী করে।
তবে প্রসিকিউটরদের কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। গৌতম আদানি যুক্তি দিতে পারেন যে, বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বিবৃতিগুলো সরাসরি তার মাধ্যমে তৈরি হয়নি। এছাড়া, ভারতের সাক্ষীদের সরাসরি সাক্ষ্য প্রদান করানো কঠিন হতে পারে। কারণ এতে দিল্লির অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে, যা ভারত সরকার দেবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রে এফসিপিএ লঙ্ঘনের ষড়যন্ত্রের শাস্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং জালিয়াতির জন্য সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
ব্রুকলিনের ফেডারেল প্রসিকিউটর ড্রু রোল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে প্রবেশ করতে হলে নিয়ম মেনে চলতে হবে। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলাটি কেবল একটি ঘুসের মামলা নয়। এটি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সিকিউরিটিজ মামলা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।