মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় স্বপ্নের দেশ। এ দেশে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের পাশাপাশি মুসলমানদের উপস্থিতিও কম নয়। তবে মুসলিম কমিউনিটির ঈদ উদযাপন এখানে অনেকটাই ভিন্ন। কারণ মুসলিম দেশগুলোর মতো যুক্তরাষ্ট্রে ঈদের দিনটিকে তেমনভাবে উদযাপন করা হয় না। অনেকটা সাধারণ দিনের মতো করেই দিনটিকে উদযাপন করেন দেশটিতে বসবাসরত মুসলিম জনগোষ্ঠি। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেদের মত করে আয়োজন করেন নানা ধরণের অনুষ্ঠান।
দেশটিতে বসবাসরত মুসলিম জনগোষ্ঠির কাছে ঈদ উদযাপন নির্ভর করে ঈদের দিনটি কবে পড়েছে তার ওপর। কারণ সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া অন্যকোনো দিন যদি ঈদ উদযাপন হয়, সেই ক্ষেত্রে ঝামেলার শেষ নেই। এমন কি ঈদের নামাজটিও পড়া সম্ভব হয় না অনেকের। যারা ফ্যামিলি নিয়ে থাকেন তাদের ওই দিনটিতে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যায়।
তবে যদি সপ্তাহিক ছুটির দিন মানে শনি বা রোববার ঈদ হয় সেই ক্ষেত্রে যারা প্রবাসে অফিসিয়াল জব করেন তাদের জন্য একটু সুবিধা। তবে কেউ যদি তার কর্মরত অফিসে আগে থেকেই বলে রাখে ধর্মীও হলিডে আছে। সেই ক্ষেত্রে তারা সম্মানের সঙ্গে ছুটি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর সব থেকে বড় মুসলিম কমিউনিটি মিশিগান স্টেটে বসবাস করেন। এছাড়াও নিউইর্য়ক, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউজার্সি, পেনসেলভেনিয়ায় মুসলিম কমিউনিটির বসবাস বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে এই ষ্টেটগুলোতে ঈদ উদযাপনের ধরণ অনেকটাই একই রকম হয়।
মিশিগান স্টেটে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন রাজনৈতিক নেতা মিনহাজ রাসেল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রবাসে ঈদ আনন্দ আসলে দেশের মতো হয় না। পরিবেশ এবং সামাজিক একটি ব্যাপার আছে। বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন করা অনেক আনন্দের।’
সাধারণত যে স্টেটগুলোতে বরফ বা বেশি ঠাণ্ডা থাকে সেই স্টেটগুলোতে মসজিদ বা ইনডোর স্টেটেডিয়ামে ঈদের নামাজ আদায় করেন এখানে বসবাসরত মুসলমানরা। আর যদি গ্রীষ্মকালে ঈদের নামাজ হয় সেই ক্ষেত্রে মসজিদ, পার্ক বা আউটডোরে ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন বসবাসরত মুসলমানরা।
নিউইর্য়কে ৩০ বছর ধরে বসবাস করেন ব্যাবসায়ী মো. আজমত আলী। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে ঈদ উদযাপন করি। এখানেও অনেক বাংলাদেশি পরিবার আছে। আমরা ঈদের দিন সবাই একসঙ্গে হতে পারি। ঈদের সময় বাংলাদেশি কমিউনিটি অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেগুলো অনেক উপভোগ করি। আমার কাছে এখানে ঈদে ভালোই লাগে।’
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছাড়াও সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, নাইজেরিয়া, ফিলিস্তিন, সোমালিয়া, আলেজেরিয়া, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম নাগরিকরা বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে পুরো দেশ জুড়ে যদি বলতে হয় সেই ক্ষেত্রে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে।
মিশিগানে বসবাসরত গাড়ি ব্যাবসায়ি গিয়াস তালুকদার। তিনি অনেক বছর আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে বসবাস করেছেন। বর্তমানে মিশিগানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এখানে ঈদের আনন্দ আমাদের বাংলাদেশের মতো হবে না। কারণ এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক বসবাস করেন। তবে মিশিগান স্টেটে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সব থেকে বড় মুসলিম কমিউনিটির বসবাস। তাই এখানে ঈদের আমেজটা একটু বেশি। তবে ছোট বেলায় বাংলাদেশে ঈদের আনন্দ এখনও অনেক মিস করি।’