ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাব 

চাকরি ছাড়লে আর্থিক সুবিধা পাবে ২০ লাখ ফেডারেল কর্মী

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:০৫

আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ২০ লাখ পূর্ণকালীন বেসামরিক ফেডারেল কর্মীকে চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
সরকারের প্রশাসনিক আকার ছোট করে আনার যে পরিকল্পনা, তার অংশ হিসেবে এই প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
তাদের এই ‘বিলম্বিত ইস্তফা কর্মসূচির’ আওতায় কর্মীরা চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেতন ঠিকই পাবেন, তবে তাদেরকে কর্মস্থলে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে না; এই সময়ের মধ্যে তাদের কাজও কমিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে কিংবা একেবারে কোনো কাজ করা লাগবে না তাও হতে পারে।
ফেডারেল কর্মীদের কাছে পাঠানো এক ইমেইলে এমনটাই বলা হয়েছে; বার্তা সংস্থা রয়টার্স ওই ইমেইলটি দেখেছে।
এতে ফেডারেল কর্মীদেরকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেধে হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তাদেরকে জানাতে হবে- তারা এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে কি নেবে না।
যারা এ আর্থিক সুবিধা নিতে আগ্রহী, তারা তাদের সরকারি ইমেইল থেকে প্রস্তাব পাঠানো ইমেইলের রিপ্লাইয়ে লিখবেন ‘ইস্তফা দিচ্ছি’, নির্দেশনায় এমনটাই বলা হয়েছে।
অভিবাসন, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদ ও মার্কিন ডাক বিভাগে কর্মরতরা বাদে সরকারের প্রায় সব দপ্তরের কর্মীরাই ট্রাম্প প্রশাসনের এই প্রস্তাব পাচ্ছেন।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর যে কথা বলেছিলেন, তারই পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়ার এই নজিরবিহীন পদক্ষেপ এলো।
ডাক বিভাগ বাদ দিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের বেসামরিক কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ। এই কর্মীদের বিপুল সংখ্যক কর্মী নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করে। এর বাইরেও লাখ লাখ কর্মী প্রবীণ সৈনিকদের স্বাস্থ্যসেবা তত্ত্বাবধান, কৃষি পরিদর্শন, সরকারি তহবিল ব্যবস্থাপনা, অর্থ বিতরণসহ নানান কাজ করে।
কৃষিকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কর্মী সংখ্যা বিবেচনায় নিলে যুক্তরাষ্ট্রে মোট কর্মীর মধ্যে ফেডারেল কর্মীদের শেয়ার ২ শতাংশেরও কম, দশকের পর দশক ধরে এই সংখ্যা কেবল কমছেই।
ইমেইলে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ‘আরও দক্ষ, কম আমলাতান্ত্রিক এবং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খেয়ে বেশি দায়িত্ব নিতে পারে এমন কর্মীবহর’ দেখতে চায়।
সামরিক বাহিনী এবং কিছু সংস্থায় কর্মী সংখ্যা বাড়ানো হলেও পুনর্গঠন ও ছাঁটাইয়ের সাহায্যে অধিকাংশ সংস্থার আকারই ছোট করে ফেলা হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়, চাকরি থাকবেই ফেডারেল কর্মীদের এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না।
“এই মুহূর্তে, আপনার পদ বা আপনার সংস্থা থাকবেই এ বিষয়ে আমরা আপনাকে পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। কিন্তু যদি আপনার পদ চলেও যায়, তাহলেও আপনাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হবে। ফেডারেল কর্মীবহরের সংস্কার হবে তাৎপর্যপূর্ণ,” বলা হয়েছে এ ইমেইলে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এ প্রস্তাবকে ‘ভুয়া প্রস্তাব’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট সেনেটের টিম কেইন। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, এমন প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষমতাই প্রেসিডেন্টের নেই, তাছাড়া কর্মীরা হয়তো চাকরি ছাড়ার পরও প্রতিশ্রুত বেতন নাও পেতে পারেন।
কী পরিমাণ কর্মী ট্রাম্প প্রশাসনের এই প্রস্তাব গ্রহণ করবে, এর ফলে সেবার মাত্রা ও সরকারি ব্যয়ে কী প্রভাব পড়বে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এনবিসি নিউজ বলছে, হোয়াইট হাউজের প্রস্তাব গ্রহণ করে ৫-১০% কর্মী চাকরি ছাড়তে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে, তাতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার কোটি ডলার সাশ্রয় হতে পারে।
সাশ্রয়ের এই অঙ্ক সঠিক কিনা, রয়টার্স তা যাচাই করে দেখতে পারেনি।
সরকারের ব্যয় কমানোর প্রচেষ্টা দেখভালে ট্রাম্প বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন; তিনি প্রথমদিকে ৬ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ফেডারেল বাজেট থেকে ২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় কমানোর লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন। অবশ্য এখন তিনি বলছেন, অত টাকা তো দূর, সরকারি ব্যয় থেকে খুব বেশি টাকা কমানোই যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মীদের অনেকেই নানান শ্রমিকসঙ্ঘের সঙ্গে জড়িত, তাদের চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিতে নানান ব্যবস্থাও আছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের পাঠানো মেমোতে বলা হয়েছে, ফেডারেল সরকার এমন বিধিবিধান প্রয়োগ করবে যাতে নিয়োগকর্তা অগ্রিম নোটিস বা কারণ দর্শানো ছাড়াই কর্মী সংখ্যা কমিয়ে ফেলতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল পর্যায়ে আগাম অবসরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ডলার দেওয়ার নিয়ম বেধে দেওয়া আছে।
কর্মীদের কাছে ‘ফর্ক ইন দ্য রোড’ নামের স্বাক্ষরবিহীন মেমোটি পাঠানো হয়েছে নতুন একটি ইমেইল থেকে। hr@opm.gov নামের এই ঠিকানা ট্রাম্প প্রশাসন খুলেছেই অল্প কদিন হলো।
২০২২ সালে মাস্ক টুইটারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে ইমেইলটি পাঠিয়েছিলেন, তার সাবজেক্টের জায়গাতেও এই ‘ফর্ক ইন দ্য রোড’-ই লেখা ছিল।
এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউজের মন্তব্য চেয়ে রয়টার্স ইমেইল করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাড়া পায়নি।
প্রায় দেড় লাখ ফেডারেল কর্মীর সংগঠন ন্যাশনাল ট্রেজারি ইমপ্লয়িজ ইউনিয়ন তার সদস্যদের সতর্ক করে বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ইমেইলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনাকে প্রলুব্ধ করা বা ভয় দেখানো।
“এর পাল্টায় চাকরি না ছাড়তে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি আমরা,” বলেছে তারা।
বিভিন্ন সংস্থায় পাঠানো পৃথক এক ইমেইলে হোয়াইট হাউজের অফিস অব পারসোনেল ম্যানেজমেন্ট ‘বিলম্বিত ইস্তফা কর্মসূচি’ বিষয়ে আরও বিস্তারিত বলেছে।
যে ফেডারেল কর্মীরা এই প্রস্তাব গ্রহণ করবে তাদের দায়িত্ব দ্রুতই পুনর্বন্টন হবে কিংবা তাদের কাজ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তাদের বিলম্বিত ইস্তফার সময়সীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবেতন ছুটিতে পাঠানো হবে, বলা হয়েছে এতে।
এ সময়সীমার মধ্যে তারা অন্য একটি চাকরিও শুরু করতে পারেন, তা সত্ত্বেও তারা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অবসরকালীন সুবিধা নিতে পারবেন। সংস্থাগুলো সুনির্দিষ্ট কিছু পদের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব প্রত্যাহারও করে নিতে পারে।