৪ দিনে আটক প্রায় ৫ হাজার : কর্মী সংকটে বিভিন্ন খাতে অচলাবস্থা

আমেরিকাজুড়ে গ্রেফতার আতঙ্কে অবৈধ অভিবাসীরা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:০১

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী অভিযানে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করাসহ অবৈধভাবে বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ বন্ধে যেসব হুমকি প্রদান করতেন, গত ২০ জানুয়ারি তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর তা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স (আইস) এবং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আনডকুমেন্টেড বা কাগজপত্রবিহীন ইমিগ্রান্টদের জন্য মূর্তিমান আতংকে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্টেটের বিশেষ করে বড় সিটিতে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির কর্মকাণ্ডে মুখর এলাকাগুলোর যেসব স্থাপনা বা সমাবেশস্থলে অবৈধ ইমিগ্রান্ট থাকতে পারে প্রতিদিনই আইস এজেন্টরা সেসব স্থানে হানা দিয়ে গ্রেফতার করছে।
নিউইয়র্ক সিটি থেকে বাংলাদেশীসহ বহুসংখ্যক ইমিগ্রান্টকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে এমন একাধিক বাংলাদেশী আছেন, যারা এসাইলাম চেয়ে আবেদন করেছেন। গ্রেফতার আতংকে জ্যাকসন হাইটসের অন্যতম দক্ষিণ এশীয় ইমিগ্রান্টস্থল হিসেবে বিবেচিত ডাইভারসিটি প্লাজায় এখন আর তেমন ভিড় পরিলক্ষিত হয় না। স্লটারহাউজগুলোতে যারা কাজ করতেন, তাদের বেশির ভাগই অবৈধ ইমিগ্রান্ট বলে আইস এর কাছে তথ্য থাকায় এবং সিটির অনেক স্লটার হাউজে আইস অভিযান পরিচালনা করায় সেসব স্থানে লোকসংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আইস এর হাতে ৪,৮২৯ জন ইমিগ্রান্টকে আটক করেছে এবং বেশ কয়েকটি ফ্লাইটে প্রায় এক হাজার ইমিগ্রান্টকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন দিনে আইস ৩,১০৪ জন অবৈধ ইমিগ্রান্টকে আটক করেছে।
এনবিসি নিউজের এক রিপোর্টে দেখা গেছে যে আইস গত রোববার একদিনেই প্রায় ১,২০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছিল, যার মধ্যে ৫২ শতাংশের বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটানোর রেকর্ড থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে আইস এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানান হয়েছে। অবশিষ্টরা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইনে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করেও যদি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হওয়ার প্রক্রিয়া অবলম্বন করে, তারা তাদের বিষয় নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বাস করতে পারেন।
কিন্তু অনেকে অনুপ্রবেশ করেও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে চলে। ওবামার সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ইমিগ্রান্ট সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ বলে অনুমান করা হতো, এখন তা নি:সন্দেহে বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, প্রাথমিকভাবে তারা অপরাধী ইমিগ্রান্টদের টার্গেট করেই আটকাভিযান পরেচালনা করছে। জানাা গেছে, আইস প্রতি সপ্তাহে তিনটি বড় সিটিতে বড় ধরনের ইমিগ্রেশন অভিযান চালাবে। একটি সূত্র অভিযানগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে “অল হ্যান্ডস অন ডেক”। দেশে আইস এর ২৫টি ফিল্ড অফিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তাদের দ্বারা দৈনিক আটকের কোটা ১২০০ থেকে ১৫০০ পূরণ করতে হবে।
নিউইয়র্কে ব্যাপক অভিযান : নিউইয়র্ক সিটিতে আইস মঙ্গলবার ২৮ জানুয়ারি সকালে অভিযান পরিচালনার সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম উপস্থিত ছিলেন। অপহরণ, হামলা এবং চুরির অভিযোগ থাকা অন্তত ২০ জন ইমিগ্রান্টকে আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান এবং বলেন, এ ধরনের অপরাধীদের রাস্তায় থাকতে দেওয়া হবে না। আইস এর নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিস জানিয়েছে, তারা নিউইয়র্কের এফবিআই অফিস এবং অন্যান্য ফেডারেল সংস্থার সাথে একত্রে ‘ইমিগ্রেশন আইন বাস্তবায়ন ও বিদেশি অপরাধীদের আটক করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিযান শুরু করেছে।
নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের প্রধান মুরাদ আওয়াদেহ এই অভিযানকে ‘ভীতি সৃষ্টিকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এসব অভিযান অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করা নয়, বরং অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। মেয়র অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা ফেডারেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের শহরের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করতে প্রস্তুত। তবে, আমাদের লক্ষ্য থাকবে শহরের বাসিন্দাদের, নাগরিকদের এবং অভিবাসীদের সুরক্ষা প্রদান করা।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, যারা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করবেন, তাদেরকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং নির্বাসিত করা হবে। প্রসঙ্গত, এই অভিযান নিউইয়র্ক সিটিতে এক সপ্তাহব্যাপী অভিবাসন অভিযানের অংশ হিসেবে চালানো হয়। যেখানে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এই অভিযানের ফলে নিউ ইয়র্কের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। অভয়ারণ্য শহরগুলির নেতারা কংগ্রেসে এই অভিযান নিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য তলব করা হয়েছে। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
ইমিগ্রান্ট বিরোধী অভিযানে বিভিন্ন খাতে অচলাবস্থা: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পর বড় বড় শহরগুলোতে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির মধ্যে সৃষ্ট আতংকে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি, নিউজ স্ট্যান্ডসহ নানান সেক্টরে। জানা গেছে, নিউইয়র্কে আগে থেকেই ৫ লাখের অধিক অবৈধ অভিবাসী ছিলেন। গত চার বছরে সে সংখ্যায় যোগ হয়েছে আড়াই লাখ। এসব অভিবাসীর অনেকেই রেস্টুরেন্ট, নিউজ স্ট্যান্ড অথবা গ্রোসারি স্টোরে কাজ করছেন। ট্রাম্পের অভিযান শুরু হওয়ায় সবাই এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। এর ফলে রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। কারণ সিটিজেনদের নিয়োগ করলে ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টা হিসেবে বেতন (১৬.৫০ ডলার করে) দিতে হবে।
অবৈধদের তার অর্ধেকেরও কম দিয়েই চালিয়ে নেওয়া যায়। একইভাবে লস অ্যাঞ্জেলেস সিটিতেও সাড়ে ৯ লাখের মতো অবৈধ অভিবাসী আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন, ডেনভার, আটলান্টা, সিয়াটল, মায়ামি, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগোসহ বিভিন্ন সিটিতে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা মাঠে নেমেছেন।
চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি স্টোর এবং নিউজ স্ট্যান্ডসহ খুচরা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় পরিশ্রমী মানুষের পেটে লাথি মারার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত সংগঠন এবং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ফ্লোরিডার রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান মারিয়া সালাজার অভিবাসী তাড়ানোর ঢালাও অভিযান বন্ধের জন্য কংগ্রেসে বিল পাসের দাবি জানিয়েছেন। ওয়াশিংটন ডিসি, ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন, আটলান্টা, নেওয়ার্ক, মিয়ামিসহ একাধিক শহরে অপরাধের অভিযোগে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। আরেক খবর অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসীর গর্ভে কিংবা নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় আগত নারীর ঔরসে জন্ম নেওয়া সন্তানের নাগরিকত্বের সুযোগ বাতিলের যে আদেশ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি জারি করেছিলেন, সে আদেশ ‘স্পষ্টতই অসাংবিধানিক’ অভিহিত করে তার কার্যকারিতা ২৩ জানুয়ারি সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ওয়াশিংটন স্টেটের সিয়াটল ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট জজ জন কোহেনুর। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সিটি, মানবাধিকার সংগঠন এবং ২২টি স্টেটের পক্ষ থেকে পৃথক পাঁচটি আদালতে দায়েরকৃত মামলার একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এদিন। প্রাথমিক শুনানিতেই বিচারক ওই আদেশের বিরুদ্ধে সাময়িক স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা অন্য সব আদালতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, গুরুতর অপরাধে দি ত/চিহ্নিতরা ছাড়াও মামুলি অপরাধে লিপ্ত কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পরিপূরক একটি বিল ২২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে (২৬৩-১৫৬) পাস হয়েছে। রিপাবলিকানদের সঙ্গে বেশ ৪৬ জন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যানও ছিলেন এ বিলের পক্ষে।
কানেকটিকাটের তিন সিটিতে আইস এর অভিযান
বাংলা প্রেস জানিয়েছে যে, কানেকটিকাট স্টেটের বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়েছে আইস এজেন্টরা। ইস্ট হার্টফোর্ড, উইলিম্যান্টিক এবং ব্রিজপোর্টে আইসিই এজেন্টদের উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে। কমিউনিটি নেতারা বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, আইসিই এজেন্টরা যদি আপনার দরজায় আসে, তবে আপনার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ইস্ট হার্টফোর্ডের মেয়র কনর মার্টিন কমিউনিটির সদস্যদের উদ্দেশে একটি বিবৃতিতে বলেছেন, আমি আমাদের কমিউনিটির মধ্যে ভয় এবং আতঙ্ক অনুভব করেছি। প্রায় আটজন এজেন্ট সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। রোববার তার শহরে একটি অভিযানের পর তিনি বাসিন্দাদের মনে করিয়ে দেন যে আইসিই এজেন্টরা বিচারকের স্বাক্ষরিত পরোয়ানা ছাড়া আপনার বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না।
মার্টিন বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো ইস্ট হার্টফোর্ডের সমস্ত বাসিন্দাকে তথ্য জানানো। যাতে তারা নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায়ন পায়। ইস্ট হার্টফোর্ড পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে তারা একটি সৌজন্যমূলক কল পেয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল যে আইসিই বার্নসাইড অ্যাভিনিউতে একটি কন্ডো কমপ্লেক্স এলাকায় থাকবে। তবে পুলিশ বলেছে যে তারা এই অভিযানের অংশ ছিল না এবং কেউ আটক হয়েছে কি না তা পরিষ্কার নয়।
একই ধরনের পরিস্থিতি ব্রিজপোর্টেও দেখা গেছে। যেখানে পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে যে তারা শুনেছে আইসিই শহরে আছে। তবে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
স্কুলে যেতে শিশুরা ভীত, অনেক মা-বাবার কাজ বন্ধ
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস), এফবিআই ও ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (ডিইএ) বিচার বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা ইমিগ্রান্ট বিরোধী অভিযান শুরু করার পর অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। শেকাগোতে অনেক অভিবাসী তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না বা নিজেরাও কাজে যেতে পারছেন না আটক হওয়ার ভয়ে।
ইমিগ্রান্টবাহী বিমান নামতে দেয়নি কলম্বিয়া ;যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো অবৈধ অভিবাসীবোঝাই দুটি সামরিক উড়োজাহাজ নামতে বাধা দিয়েছে কলম্বিয়া সরকার। আর এতে বেজায় চটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, কলম্বিয়া থেকে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন তিনি। জারি করা হবে নিষেধাজ্ঞাও। এমন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যেও পাল্টা শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, কলম্বিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসা ‘সব পণ্যে’ ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক ‘অবিলম্বে’ কার্যকর হবে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত করবে তাঁর প্রশাসন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেন, তিনিও মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবেন। ট্রাম্প ও পেত্রোর এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা গেছে গত ২৬ জানুয়ারি । যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো অবৈধ অভিবাসীবোঝাই দুটি সামরিক উড়োজাহাজ কলম্বিয়ায় অবতরণে বাধা দেন তিনি।
গুস্তাভো পেত্রো বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের অপরাধীদের মতো চিহ্নিত না করে, বেসামরিক উড়োজাহাজে পাঠানো হলে বরং গ্রহণ করা যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অভিবাসীদের অবশ্যই মর্যাদা আর সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠাতে হবে।’ মার্কিন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির অংশীদার সিবিএস নিউজকে জানান, অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে সান দিয়েগো থেকে উড়াল দেওয়া দুটি সামরিক উড়োজাহাজ কলম্বিয়ায় অবতরণের কথা ছিল। কিন্তু জটিলতার কারণে পরে সেটা বাতিল করা হয়েছে। ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছেন তিনি। এক নির্বাহী আদেশে অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এমন নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অবৈধ অভিবাসীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। তাদের ধরার পর সামরিক উড়োজাহাজে চাপিয়ে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এমন খবর ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। যাহোক, কলম্বিয়ার পক্ষ থেকে অভিবাসীবোঝাই সামরিক উড়োজাহাজ নামতে না দেওয়া ঘটনায় রোববার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখান ট্রাম্প।
নিজের ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প ‘জরুরি ও সিদ্ধান্তমূলক প্রতিশোধের’ ঘোষণা দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, কলম্বিয়ার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করবে তাঁর প্রশাসন। কলম্বিয়ার সরকারি কর্মকর্তা এবং দেশটির সরকারের মিত্র ও সমর্থকদের ভিসা ‘অবিলম্বে বাতিল’ করা হবে। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এসব পদক্ষেপ কেবল শুরু। তাঁর প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে জোর করে আসা অপরাধীদের গ্রহণ এবং ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কলম্বিয়া সরকারকে নিজেদের আইনি বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করতে দেবে না।’
ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এক্স পোস্টে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ট্রাম্পের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার শুল্ক আরোপের ঘটনা আমাকে ভীত করছে না। কারণ, কলম্বিয়া সৌন্দর্যের দেশ হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের হৃৎপিণ্ড।’ সেই সঙ্গে গুস্তাভো পেত্রো যুক্তরাষ্ট্র থেকে কলম্বিয়ায় নির্ধারিত ব্যক্তিদের ‘সম্মানের সঙ্গে’ ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করতে তাঁর প্রেসিডেনশিয়াল উড়োজাহাজ ব্যবহারের প্রস্তাব দেন।