ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি

৯০ শতাংশ কমেছে অবৈধ অভিবাসীদের সীমান্ত অতিক্রম

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:৩৬

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের পর দিন ২১ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ দক্ষিণ সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করা অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে ৯০ শতাংশ কমে গেছে। প্রবীণ সীমান্ত এজেন্ট মাইকেল ব্যাঙ্কস ফক্স নিউজের ‘ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, সীমান্ত টহল কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হওয়া অপরাধী অভিবাসীদের বিচারের হার ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মাইকেল ব্যাঙ্কস অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বা কোন্ সময়সীমার সাথে তুলনা করে এই ৯০ শতাংশ হ্রাসের দাবি করেছেন, তা স্পষ্ট করেননি।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) টেক্সাসের জননিরাপত্তা বিভাগ প্রকাশিত পরিসংখ্যান দেখায় যে, লোন স্টার স্টেটে (টেক্সাস) সীমান্ত অতিক্রমের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক সময় ব্যস্ত থাকা দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের এল পাসো, রিও গ্র্যান্ড ভ্যালি, লারেডো, ডেল রিও এবং বিগ বেন্ড সেকশনে মাত্র ৩৯৬ জন অবৈধ অভিবাসী আটক হয়েছেন।
মাইকেল ব্যাঙ্কস বলেন, ‘মার্কিন সীমান্ত টহল বাহিনী জানে কীভাবে কাজ সম্পন্ন করতে হয়, কীভাবে সীমান্ত সুরক্ষিত করতে হয়। আমাদের শুধু এমন একজন প্রেসিডেন্ট দরকার ছিল যিনি আমাদের ক্ষমতায়ন করবেন-একজন শক্তিশালী নেতা যেমন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও একজন সচিব, নোয়েমের মতো, যিনি জানেন কীভাবে আমাদের সীমান্ত নিরাপদ করতে হবে।’
শুধু ডেল রিও-তেই বাইডেন প্রশাসনের অধীনে প্রতিদিন হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসন ঘটত। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই সংখ্যা বিশেষভাবে বেড়ে যায়, যখন মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ১৪ হাজারের বেশি হাইতিয়ান অভিবাসী সীমান্তে উপস্থিত হয়েছিল।
এদিকে, দ্য পোস্টের কাছে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্যাট্রোল হেফাজতে থাকা অভিবাসীদের সংখ্যা গ্রীষ্মের তুলনায় ৫০০ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে সংস্থাটির হেফাজতে মাত্র দেড় হাজার অবৈধ অভিবাসী রয়েছে- যা জুন মাসের তুলনায় নগণ্য, যখন ১০ হাজারের বেশি অভিবাসী আটকে রাখা হয়েছিল।
তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ পথে প্রবেশের চেষ্টাকারী অভিবাসীদের সংখ্যায় এই বিপুল পরিমাণ হ্রাস- ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর সীমান্ত নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতির সরাসরি ফলাফল। সীমান্তে কর্মরত কর্মকর্তারাও এই সত্যটি স্বীকার করেছেন। একজন বর্ডার প্যাট্রোল এজেন্ট দ্য পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের দেশের সীমান্ত কখনো কোনো প্রেসিডেন্ট এত কঠোরভাবে কার্যকর করেননি, যেমনটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করছেন।’
অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন আবার কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ’ (আটক করে ছেড়ে দেওয়ার নীতি) এখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এবং চোরাকারবারিদের নতুন কৌশল খুঁজতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
ট্রাম্প প্রশাসন পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে অভিবাসনবিরোধী অভিযানও তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে প্রগতিশীল অভিবাসন-বন্ধুসুলভ শহরগুলোতে। নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে পরিচালিত অভিযানে প্রথম ৯ দিনে ৭ হাজার ২০০’-এর বেশি অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
একজন সীমান্ত কর্মকর্তার মতে, ডিপোর্টেশন ফ্লাইট এখন নিয়মিত চলছে। মাত্র কয়েকজন ফিরে গেলেই বাকিরা বুঝতে পারবে যে তাদের আর ছাড়া হবে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা জানত, আগের প্রশাসন আইন কার্যকর করছে না। এখন তারা বুঝতে পারছে, এই প্রশাসন শুধু কথা বলছে না- কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর পরিণতি রয়েছে।’
নিউইয়র্ক সিটিতে, যা বাইডেন প্রশাসনের সময় জাতীয় অভিবাসন সংকটের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল, এখন নতুন অভিবাসীদের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
শহর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটির আশ্রয় ব্যবস্থায় মাত্র ২০০ নতুন অভিবাসী যোগ হয়েছে, যেখানে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিল ৬০০। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির কর দাতাদের তহবিলে পরিচালিত বিগ অ্যাপল আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৬ হাজার অভিবাসী রয়েছে- যা নির্বাচনের সপ্তাহের তুলনায় ১২ হাজার কম।
টেক্সাসের সাবেক সীমান্ত বিষয়ক কর্মকর্তা মাইকেল ব্যাঙ্কস বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করেছেন যে, ফেডারেল বাহিনী নিষ্পাপ ‘আবুয়েলা’ (দাদী-নানী) ও পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে- এমন দাবি ভিত্তিহীন প্রচারণা ছাড়া কিছুই নয়।
তিনি বলেন, ‘এটি পুরোপুরি ভুয়া প্রচারণা যে, আমরা স্কুলবাস ও শিশুদের লক্ষ্য করছি। এটি হাস্যকর। আর যদি ‘আবুয়েলা’ নিয়ে কথা বলতে হয়, আমার নিজের দাদী একজন অভিবাসী, যিনি মেক্সিকো থেকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই ‘আবুয়েলাদের’ টার্গেট করছি না, কিংবা এমন কাউকে নয়, যারা এই দেশে বৈধভাবে রয়েছেন। আমাদের কাছে সেই অধিকারই নেই। আমরা শুধুমাত্র অপরাধীদের লক্ষ্য করছি এবং যারা অবৈধভাবে এই দেশে ঢোকে আইন ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা নিচ্ছি।’