যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হচ্ছে

বাড়তে পারে বাণিজ্যযুদ্ধ
ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:২৭
আপডেট  : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:৩০
চীনের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ। ফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা আমদানি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে আগামী সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে। এটি বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে আরও কিছু দেশের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ নতুন শুল্ক কার্যকর করার পরপরই গত ৪ ফেব্রুয়ারি পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় বেইজিং।
গত শুক্রবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শিগগির অন্যান্য দেশের ওপরও ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপের পরিকল্পনা করছেন, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্ক নতুনভাবে গঠন করা হবে। তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি কোন দেশগুলো এই নতুন শুল্কের আওতায় আসতে পারে। তবে ইঙ্গিত দিয়েছেন, এটি ব্যাপক পরিসরে কার্যকর হবে এবং এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতিও কমতে পারে।
আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এছাড়া মার্কিন অপরিশোধিত তেল, কৃষিযন্ত্রপাতি ও বৃহৎ ইঞ্জিনবিশিষ্ট গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে, চীনের কর্তৃপক্ষ মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলের বিরুদ্ধে একটি অ্যান্টি-মনোপলি (একচেটিয়া ব্যবসা) তদন্ত শুরু করে। একই সঙ্গে, ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগারের মার্কিন মালিক প্রতিষ্ঠান পিভিএইচ’কে বেইজিং তার তথাকথিত ‘অবিশ্বস্ত সংস্থা’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
চীন ২৫টি বিরল ধাতুর রপ্তানিতেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, যা বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পণ্য ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
শুক্রবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে হোয়াইট হাউএজ এক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, আমি আগামী সপ্তাহে পাল্টা বাণিজ্য ব্যবস্থা ঘোষণা করবো, যাতে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সমানভাবে আচরণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। যদিও কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি সার্বজনীন শুল্ক থেকে কিছু দেশকে ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছেন।
ট্রাম্প বহুবার অভিযোগ করেছেন, মার্কিন গাড়ি আমদানির ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শুল্কহার অনেক বেশি, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘বৈষম্যমূলক’। গত সপ্তাহে ট্রাম্প বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইউরোপীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ‘খুব শিগগির’ কার্যকর হবে। তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কার্যকরের পরদিন বেইজিং ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেছে, ওয়াশিংটন চীনের ওপর ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগ’ করছে যে, দেশটি কৃত্রিম ওষুধ ফেন্টানাইলের (ফেন্টানাইল) বাণিজ্যে ভূমিকা রাখছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) করা এক অভিযোগে চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন শুল্ককে ‘বৈষম্যমূলক ও সুরক্ষাবাদী’ বলে উল্লেখ করেছে এবং দাবি করেছে, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম লঙ্ঘন করছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন সম্ভবত এই বিষয়ে কোনো ইতিবাচক রায় পাবে না। কারণ ডব্লিউটিওর বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি প্যানেল বর্তমানে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না।
আশা করা হচ্ছিল, ট্রাম্প শিগগির চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি আলোচনায় তাড়াহুড়ো করতে চান না।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাণিজ্য সংক্রান্ত তার বহু নীতিই পরিবর্তিত হয়েছে। শুক্রবার তিনি চীন থেকে ছোট পার্সেল আমদানির ওপর শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন, যা ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
এ আদেশের ফলে ৮০০ ডলার বা তার কম মূল্যের আমদানির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ (ইউএসপিএস) ও অন্যান্য সংস্থাগুলো তা বাস্তবায়নে হিমশিম খাচ্ছিল। এ অবস্থায় ইউএসপিএস প্রথমে চীন থেকে পার্সেল গ্রহণ বন্ধ করে দিলেও পরদিন তা ফের চালু করে।
গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে আলোচনার সুযোগ রেখে পরে তা এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন।

সূত্র: বিবিসি