করপোরেট আমেরিকায় বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তির (ডিইআই) নীতি নিয়ে বিতর্ক নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে। একসময় ব্যাপকভাবে গৃহীত এই নীতি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর।
২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ও বেসরকারি খাতে ডিইআই নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়, প্রশিক্ষণ চালু করে এবং অফিস সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনে। তবে এখন এই নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি সংস্থাগুলো ডিইআই কর্মসূচি বাতিল করছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের বৈচিত্র্য সংক্রান্ত কার্যক্রমের তথ্য নির্দিষ্ট ই-মেইলে পাঠাতে। একইভাবে, স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের মতো সরকারি সংস্থাগুলো ডিইআই সম্পর্কিত পরামর্শক চুক্তি বাতিল করছে।
সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ডিইআই থেকে সরে আসতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অ্যাফার্মেটিভ অ্যাকশন নিষিদ্ধ করার পর বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হয়।
আমাজন, ওয়ালমার্টসহ অনেক বড় কোম্পানি এরই মধ্যে তাদের ডিইআই কার্যক্রম বাতিল করেছে। গুগল সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, তারা কর্মী নিয়োগে বৈচিত্র্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্ধারিত লক্ষ্য পরিত্যাগ করছে।
তবে, অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি ডিইআই থেকে সরে আসার পরিবর্তে এর নতুন নামকরণ করছে। ম্যাকডোনাল্ড’স তাদের ‘ডাইভার্সিটি টিম’কে ‘ইনক্লুশন টিম’ নাম দিয়েছে, আর টার্গেট ‘সাপ্লায়ার ডাইভার্সিটি’ শব্দটি বদলে ‘সাপ্লায়ার এনগেজমেন্ট’ ব্যবহার করছে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিইআই নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে। সরকারি চুক্তি পেতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিইআই সম্পর্কিত কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার শপথ নিতে হবে। সরকারি সংস্থাগুলো এখন ‘সবচেয়ে খারাপ ডিইআই অপরাধীদের’ তালিকা প্রকাশের নির্দেশ পেয়েছে, যা করপোরেট দুনিয়ায় ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, করপোরেট আমেরিকায় ডিইআই’র প্রতি একসময় যে সমর্থন দেখা গিয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সংস্কৃতি-সংগ্রামের এই নতুন ধাপে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তবে ডিইআই নীতি কতটা টিকে থাকবে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপের কী প্রভাব পড়বে, তা জানতে এখনো খানিকটা অপেক্ষা করতে হবে।