নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সহযোগিতা করায় ডেপুটি মেয়র ও শীর্ষ উপদেষ্টা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে মেয়রের সহযোগিতার কারণে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারী ডেপুটি মেয়ররা হলেন- মেরিয়া টোরেস-স্প্রিংগার, অ্যান উইলিয়ামস-আইসম, মীরা যোশি এবং চন্সি পার্কার। সিটি হলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পদত্যাগগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে না এবং তারা আগামী কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত অবস্থান করবেন, যাতে বদলির প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
এর আগে ম্যানহাটনের প্রাক্তন ইউএস অ্যাটর্নি মেয়র এবং বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে ‘কুইড প্রো কো’ চুক্তির অভিযোগ তুলেছিলেন। এ পদত্যাগগুলোর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, তারা বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে অ্যাডামসের বিরুদ্ধে মামলার চার্জ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তের পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখার সুযোগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে কিছু আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাও পদত্যাগ করেছেন, যারা অ্যাডামসের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
এই পদত্যাগের পর সোমবার প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয় এবং বিভিন্ন নিউইয়র্ক সিটি নেতারা, সিটি কাউন্সিল স্পিকারসহ, মেয়র অ্যাডামসকে পদত্যাগ করতে আহ্বান জানান। অন্যদিকে নিউইয়র্ক সিটির কিছু কাউন্সিল মেম্বার অ্যাডামসের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং দাবি করেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার রাজনৈতিক সম্পর্ক সিটির মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অ্যাডামস এসব দাবি অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, আমি কখনো ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করিনি। আমি শুধুমাত্র নিউইয়র্ক সিটির ৮.৩ মিলিয়ন নাগরিকদের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মেয়র গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের পদত্যাগ না করার জন্য বা অন্তত সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছেন। পদত্যাগকারী ডেপুটি মেয়ররা তাদের পদে কত দিন পর্যন্ত থাকবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে তারা নিজেদের দায়িত্বের সুষ্ঠু হস্তান্তরের জন্য কিছু সময় ধরে থাকবেন। মেয়র অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই চারজন দুর্দান্ত জনসেবক ছিলেন এবং আমাদের শহর পুনর্গঠনের জন্য তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের বিদায় আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক, কিন্তু বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো দেখে আমি তাদের সিদ্ধান্ত বুঝতে পারি।
পদত্যাগকারী ডেপুটি মেয়ররা সিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, যেমন অপারেশন, আবাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শ্রম, স্বাস্থ্য ও মানবসেবা, অবকাঠামো এবং জননিরাপত্তা। অ্যাডামস প্রশাসনের জন্য এটি একটি বড় আঘাত। কারণ তিনজন ডেপুটি মেয়রই অ্যাডামসের প্রথম দিককার সহযোগী ছিলেন। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুলও এ পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখছেন এবং অ্যাডামসকে তার পদ থেকে সরানোর জন্য তার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করার ব্যাপারে চিন্তা করছেন।
পদত্যাগকারী ডেপুটি মেয়ররা হলেন, মেরিয়া টোরেস-স্প্রিংগার: আবাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শ্রমশক্তি বিভাগের ডেপুটি মেয়র। তিনি ২০২৩ সালে এই পদে নিযুক্ত হন এবং ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অ্যাডামস প্রশাসনে যোগ দেন।
মীরা যোশি: অপারেশন বিভাগের ডেপুটি মেয়র। তিনি অ্যাডামস প্রশাসনের প্রথম সদস্য ছিলেন এবং ২০২২ সালে এই পদে যোগ দেন।
অ্যান উইলিয়ামস-আইসম: স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের ডেপুটি মেয়র। তিনি শহরের স্বাস্থ্যসেবা নীতি এবং অভিবাসী সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। চন্সি পার্কার: জননিরাপত্তা বিভাগের ডেপুটি মেয়র। তিনি অক্টোবর ২০২৩-এ পদে যোগ দেন। এ ঘটনাগুলোর ফলে অ্যাডামসের প্রশাসনের পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে এবং এর পরিণতি সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।
অ্যাডামসের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে কুইড প্রো কুয়ো কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠার পর তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শত শত মানুষ। ১৭ ফেব্রুয়ারি রোববার ম্যানহাটনের রাস্তায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। টানা বৃষ্টির মধ্যেও বিক্ষোভকারীরা গভর্নর ক্যাথি হোকুলের কাছে আহ্বান জানান, তিনি যেন সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে মেয়র অ্যাডামসকে অপসারণ করেন। প্রতিবাদকারীরা দাবি করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে অ্যাডামস অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। যা নিউইয়র্কের মূল্যবোধের পরিপন্থী। তাদের অভিযোগ, নিজের স্বার্থরক্ষার জন্য তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করেছেন।
সম্প্রতি টম হোমানের সঙ্গে বৈঠকে অ্যাডামস নিউইয়র্কের রাইকার্স আইল্যান্ড কারাগারে আটক অভিবাসীদের শনাক্তের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। হোমান জানান, তারা বন্দিদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকদের শনাক্ত করে জননিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবস্থা নিতে চান।
এই বৈঠকের দিনই অ্যাডামসের বিরুদ্ধে ফেডারেল দুর্নীতি মামলার প্রধান প্রসিকিউটর আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি অভিযোগ করেন, মেয়র অ্যাডামস ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে সহযোগিতা করলে বিচার মন্ত্রণালয়ের মামলা প্রত্যাহার করা হতে পারে—এমন একটি সমঝোতার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
যদিও অ্যাডামস ও তার আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রোববার কুইন্সের এক গির্জায় ভাষণ দেওয়ার সময় মেয়র অ্যাডামস বলেন, প্রতিটি নতুন স্তরে নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, নিউইয়র্কে ৮৩ লাখ মানুষ বাস করে। সেখানে সবাই কি বিক্ষোভে নেমেছে? অন্যদিকে, গভর্নর ক্যাথি হোকুল বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এখনো মেয়রকে অপসারণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন যতক্ষণ না অ্যাডামস দায়িত্ব ছাড়েন।