প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন অভিবাসন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন: 'গোল্ড কার্ড' এটি ধনী বিদেশিদের জন্য, যারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে রাজি। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, গোল্ড কার্ড হবে ধনী বিদেশিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার একটি নতুন বৈধ ভিসার সুযোগ। গত মঙ্গলবার, তিনি ওভাল অফিসে কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লাটনিকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন।
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস, কাজ এবং নাগরিকত্বের নিয়ম পরিবর্তন করছে। এতে অভিবাসনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করার প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ধনী বিদেশিদের জন্য আগেও একটি ব্যবস্থা ছিল, যাকে 'ইবি-ফাইভ' বলা হয়। ১৯৯০ সালে চালু হওয়া এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ পেতেন। তবে প্রায় এক দশক আগে এক ভেরমন্ট স্কি রিসোর্টের মালিকরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে এটি দুর্নীতির অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
নতুন গোল্ড কার্ড এবং 'ইবি-ফাইভ' ভিসা প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য একই—ধনী বিদেশিদের বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আনার সুযোগ তৈরি করা। ট্রাম্প বলেন, 'এটি নাগরিকত্বের একটি পথ হবে। ধনী মানুষ এই কার্ড কিনে যুক্তরাষ্ট্রে আসবে, তারা সফল হবে, অনেক অর্থ ব্যয় করবে, কর প্রদান করবে এবং অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।'
প্রতি গোল্ড কার্ডের মূল্য $৫ মিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব লাটনিক বলেন, এটি প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে।
লাটনিক মঙ্গলবার 'ইবি-ফাইভ' প্রোগ্রামকে ভুয়া, জালিয়াতি ও অর্থহীন বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই অযৌক্তিক 'ইবি-ফাইভ' প্রোগ্রাম রাখার চেয়ে আমরা এটিকে বন্ধ করে দেব।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা এটিকে ট্রাম্প গোল্ড কার্ড দিয়ে প্রতিস্থাপন করব, যা মূলত 'গ্রিনকার্ড গোল্ড।'
'গোল্ড কার্ড' এবং 'ইবি-ফাইভ' ভিসার মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো খরচ। 'ইবি-ফাইভ' ভিসার জন্য আবেদনকারীদের ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হয়, যা সাধারণত ব্যবসায় করা হয়। এছাড়া 'ইবি-ফাইভ' ভিসায় আরো কিছু শর্ত থাকে, যেমন—বিনিয়োগটি ১০টি স্থায়ী পূর্ণকালীন চাকরি তৈরি বা রক্ষা করতে হবে।
ট্রাম্প জানান, 'ইউ.এস. হয়তো এক মিলিয়ন বা তার চেয়ে বেশি 'গোল্ড কার্ড' বিক্রি করতে পারে। প্রতি কার্ডের দাম ৫ মিলিয়ন ডলার হলে, ১ মিলিয়ন গোল্ড কার্ড বিক্রি করলে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হতে পারে। আর যদি ১০ মিলিয়ন কার্ড বিক্রি করা হয়, তবে মোট আয় হবে ৫০ ট্রিলিয়ন ডলার।'
ট্রাম্প যোগ করেন, 'আমাদের ৩৫ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে। এটি ভালো হবে, তাই দেখা যাক।'
লাটনিক বলেন, 'মার্কিন সরকারকে ৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার পাশাপাশি, গোল্ড কার্ড আবেদনকারীদের অন্যান্য মানদণ্ডও পূরণ করতে হবে। তাদের অবশ্যই যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, আমরা নিশ্চিত করব যে তারা ভালো গ্লোবাল নাগরিক।'
'ইবি-ফাইভ' ভিসার জন্য বার্ষিক আবেদনকারীর সংখ্যা ট্রাম্পের পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক কম। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সর্বশেষ অভিবাসন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া ১২ মাসের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার মানুষ 'ইবি-ফাইভ' ভিসা পেয়েছেন। যদি প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার মানুষ গোল্ড কার্ড পেয়ে থাকেন, তবে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় করবে।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস নামক একটি কোম্পানি যা অভিবাসন পরামর্শ সেবা দেয়, অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ধনী বিনিয়োগকারীদের জন্য শীর্ষ অভিবাসন গন্তব্য। তারা ধারণা করছে যে, ২০২৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম নিট কোটিপতি আগমন ঘটেছে, যেখানে গত বছর প্রায় ৩ হাজার ৮০০ বিদেশী কোটিপতি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন।
বিনিয়োগকারী ভিসা বিশ্বব্যাপী সাধারণ। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, ১০০টিরও বেশি দেশ ধনী ব্যক্তিদের জন্য 'গোল্ডেন ভিসা' অফার করে থাকে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, গ্রীস, মাল্টা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ইতালি অন্তর্ভুক্ত।
নাগরিকত্বের যোগ্যতা কংগ্রেস নির্ধারণ করে, তবে ট্রাম্প বলেছেন যে গোল্ড কার্ডের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, 'আমরা আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে পরিষ্কারভাবে কাজ করেছি। এটি পুরোপুরি বৈধ। এটা গ্রিন কার্ডের মতো, তবে আরও উন্নত এবং এটি নাগরিকত্বের জন্য একটি রাস্তা, যেখানে ধনী ব্যক্তিরা প্রতিভাবান ব্যক্তিদের দেশটিতে আসতে সাহায্য করবে, অর্থাৎ কোম্পানিগুলি তাদের কর্মীদের এনে দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতি পেতে সাহায্য করবে।'