পিপিএল-এ স্থানান্তরের শেষ দিন ২৮ মার্চ : ১ এপ্রিল শুরু

হোম কেয়ার সিডিপ্যাপ সার্ভিসে বড় পরিবর্তন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৩ মার্চ ২০২৫, ১৫:১৩


বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে নিউইয়র্ক স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্টের হোম কেয়ার সার্ভিস। বিশেষ করে কনসুম্যার ডাইরেক্টেড পারসোন্যাল এ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রাম-সিডিপ্যাপ। নিউইয়র্ক মেডিকেইড স্টেট সোস্যাল সার্ভিসেস আইনের আওতায় মেডিকেইড প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সিডিপ্যাপ। কর্মক্ষমতাহীন, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন এমন বয়স্ক নারী-পুরুষ তাদের ব্যক্তিগত সেবার জন্য সহায়তাকারী নিয়োগ দিতে পারেন। নিউইয়র্কে আগে থেকে এই সুবিধা বহাল থাকলেও ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে শুরু হয় সিডিপ্যাপ হোম কেয়ার সেবার প্রচলন। বিগত কয়েক বছরে কমিউনিটিতে বড় ধরণের ব্যাপকতা পেয়েছে সিডিপ্যাপ। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী আমেরিকান ভোগ করে আসছেন সিডিপ্যাপ সুবিধা। এনিয়ে বেশ অনেকগুলো ব্যবসা সফল হোম কেয়ার সেবাদানকারী এজেন্সি গড়ে উঠেছে। নিউইয়র্ক জুড়ে প্রায় ৬ শতাধিক ছোটবড় হোম কেয়ার সার্ভিস কোম্পানী কাজ করছিলো। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আড়াই লক্ষাধিক বয়স্ক মানুষ নিয়মিত সেবা গ্রহণ করছে। সেবাদান কাজে নিয়োজিত রয়েছে অর্ধমিলিয়নেরও অধিক মানুষ। যাদের সিংহভাগই পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধু-বান্ধব।
সেবা প্রদানের মাধ্যমে যারা মুখ দেখেছে আর্থিক স্বচ্ছলতার। চলমান এই হোমকেয়ার সার্ভিস তথা সিডিপ্যাপ সেবায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে নতুন আইন করেছেন নিউইয়র্ক স্টেট গর্ভনর ক্যাথি হকুল। গত বছরের মাঝামাঝি আনীত নতুন আইনের কার্যকারিতা শুরু হবে আগামী ১এপ্রিল থেকে। নতুন নিয়মে সকল হোম কেয়ার সার্ভিসের সরাসরি কার্যক্রম খর্ব করে তা ন্যস্ত করা হয়েছে একমাত্র ফিসকাল ইন্টারমেডিয়ারি বা আর্থিক মধ্যসত্বভোগী পাবলিক পার্টনারশীপস এলএলসি তথা পিপিএল’র নিকট। জর্জিয়ায় আটলান্টা ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানকে সিডিপ্যাপ’র পুরো বেতন এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদির ব্যবস্থাপনার পূর্ণ কর্তৃত্ব অর্পন করেছে। ফলে বিদ্যমান হোমকেয়ার সার্ভিসগুলোর এক্ষেত্রে কোন ধরণের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এসব ফিসকাল ইন্টারমেডিয়ারী বা মধ্যসত্বভোগী এজেন্সিগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। চাকুরী হারাতে হবে অনেক সেবাদানকারীকে। পরিবারের সদস্যরা বঞ্চিত হবেন সেবা কর্ম থেকে। বয়স্ক সেবা গ্রহণকারীদের কমে যাবে সুযোগসুবিধা। নিউইয়র্ক স্টেটের ২০২৪-২৫ বছরের বাজেটে অর্থ বাঁচাতে গভর্নর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একক পিপিএল তার ক্ষমতাবলে ৩৭টি হোমকেয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে তার সাথে সম্পৃক্ত করে পিপিএল এর সাবকন্ট্রাক্ট দিয়েছে। এরমধ্যে একমাত্র বাংলাদেশী হোম কেয়ার কোম্পানী ডিএইচকেয়ার পিপিএল সুবিধা পেয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে নূতন আইন কার্যকর করতে আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে ২লাখ ৫০ হাজার সিডিপ্যাপ সুবিধাভোগীকে অবশ্যই পিপিএল এ স্থানান্তরিত হবে। অন্যথায় তারা সিডিপ্যাপ সুবিধা হারাবেন। এমএলটিসি প্ল্যানস এবং যারা স্থানীয় কাউন্টির সোস্যাল সার্ভিসেস থেকে সিডিপ্যাপ পা্েচ্ছ তারাও এই আইনের আওতাভূক্ত হবেন। বিদ্যমান ৬ শতাধিক হোমকেয়ার কোম্পানীর পরিবর্তে পিপিএল একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছে। নিউইয়র্ক স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্ট চাচ্ছে ২৮ মার্চের মধ্যে কমপক্ষে ২লাখ ৪০ হাজার সিডিপ্যাপভোগী এবং ৫লক্ষাধিক ব্যক্তিগত সেবাদানকারী পিপিএলএ স্থানান্তরিত হোক। এদিকে গত ১০মার্চ পর্যন্ত ১লাখ ১৫ হাজার সিডিপ্যাপ ভোগী পিপিএলএ নিবন্ধিত হয়েছেন বলে হেলথ ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে। যে কেউ ইমেইল, অনলাইন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পিপিএলএ অন্তর্ভূক্ত হতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন ভাষায় হটলাইন ফোনে যোগাযোগ করা যেতে পারে। বাংলাভাষী ফোন: ১-৮৩৩-২৭৮-৫৭৮১।

ফিসকাল ইন্টারমেডিয়ারি থেকে পিপিএল এ সিডিপ্যাপ ব্যবস্থাপনা চলে যাওয়ায় হোমকেয়ার গ্রহীতা এবং এই পেশায় সেবাদানকারীদের মাঝে ভীতির সঞ্চার হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। পিপিএল বিগত ২৫ বছর যাবত ২১টি স্টেটে ৫০টির অধিক প্রোগ্রামে দক্ষতার সাথে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই নিউইয়র্কে ১হাজার ২০০ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে নতুন কার্যক্রমের জন্য। এদিকে কোন কোন হোমকেয়ার এজেন্সি পিপিএল নিয়ে নানা ধরণের মিথ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আলবেনী প্রশাসন। বিশেষ করে সিডিপ্যাপ সুবিধাভোগীদের ল্যাকসার মাধ্যমে সেবাদানে প্রতিশ্রুতি সহ নানাবিধ প্রচেষ্টা চালানোর অভিযোগে গত ১০মার্চ এক ডজনের অধিক প্রতিষ্ঠানকে সতর্কতামূলক চিঠি প্রদান করেছে নিউইয়র্ক হেলথ ডিপার্টমেন্ট। নতুন এই আইনের বিরুদ্ধে হোম কেয়ার এজেন্সির মামলা এবং লবিংয়ের পরও শেষ পর্যন্ত তারা সফলকাম হতে পারেনি। হোমকেয়ার তথা সিডিপ্যাপ সেবায় পরিবর্তনের বিষয়টি স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।