গার্সিয়াকে মার্চে এল স্যালভদারে বিতাড়ন করে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই থেকে দেশটির কুখ্যাত এক কারাগারে বন্দি এ ব্যক্তি। ট্রাম্প প্রশাসনের অনাগ্রহের কারণে তিনি অ্যামেরিকায় ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এল স্যালভাদরের ঝামেলাপূর্ণ জীবন থেকে রেহাই পেতে কৈশোরে অ্যামেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া। অ্যামেরিকায় এসে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন ম্যারিল্যান্ডে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্তে উলট-পালট হয়ে গেছে তার সে জীবন।
গার্সিয়াকে মার্চে এল স্যালভদারে বিতাড়ন করে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই থেকে দেশটির কুখ্যাত এক কারাগারে বন্দি এ ব্যক্তি। ট্রাম্প প্রশাসনের অনাগ্রহের কারণে তিনি অ্যামেরিকায় ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
এমন বাস্তবতায় অ্যামেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে আলোচিত নাম গার্সিয়া। আজকের এ এক্সপ্লেইনারে গার্সিয়ার বেড়ে ওঠা, তাকে বিতাড়নের কারণ এবং তাকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা নিয়ে রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে করা হবে বিস্তারিত আলোচনা।
কে এই গার্সিয়া
স্যালভাদর থেকে আসা কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া ম্যারিল্যান্ডে বসবাস করছিলেন। অ্যামেরিকান নাগরিক জেনিফার ভাস্কেজ সুরাকে বিয়ে করেন তিনি। এ দম্পতির এক সন্তান অ্যামেরিকার নাগরিক। গার্সিয়াকে বিয়ে করার আগে দুটি সন্তান ছিল তার স্ত্রীর।
গার্সিয়া ২০১৯ সাল থেকে অ্যামেরিকায় শিট মেটাল শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। আইনজীবীদের মতে, গার্সিয়া কখনও অপরাধে অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হননি।
শৈশব
গার্সিয়া এল সালভাদরে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে তার পরিবার বারিও ১৮ গ্যাংয়ের কাছ থেকে হুমকি ও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছিল। এ গ্যাং তাদের পারিবারিক পুপুসা ব্যবসার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল, যা গার্সিয়ার জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এ হুমকির কারণেই তিনি কিশোর বয়সে স্যালভাদর ছেড়ে অ্যামেরিকায় পাড়ি জমান।
অ্যামেরিকায় পাড়ি
গার্সিয়া ২০১১ সালের দিকে ১৬ বছর বয়সে বৈধ অনুমোদন ছাড়া অ্যামেরিকায় প্রবেশ করেন। ম্যারিল্যান্ডে বসবাস শুরু করার পর তিনি ২০১৯ সালে অভিবাসন আদালত থেকে স্যালভাদরে নির্বাসন থেকে সুরক্ষা পান। এক অভিবাসন বিচারক রায়ে জানান, স্যালভাদরে ফিরলে তিনি গ্যাংয়ের নিপীড়নের শিকার হতে পারেন। এ কারণে তাকে অ্যামেরিকায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আইনি ঝামেলা
গার্সিয়া ২০১৯ সালে ম্যারিল্যান্ডের এক হোম ডিপোর পার্কিং লটে গ্রেপ্তার হন। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস তাকে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে সন্দেহ করে। এমনটি করা হয় একজন গোপনীয় তথ্যদাতার তথ্য এবং গার্সিয়ার পোশাকের (শিকাগো বুলসের হ্যাট এবং হুডি) ওপর ভিত্তি করে। সে সময় তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি এবং তাকে নির্বাসন প্রক্রিয়ায় রাখা হয়।
অভিবাসন বিচারক তার আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেও স্যালভাদরে নির্বাসনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেন। কারণ তিনি সেখানে গ্যাংয়ের হুমকির সম্মুখীন হতে পারেন। গার্সিয়াকে ২০২৫ সালে এসে আবার গ্রেপ্তার করা হয় এবং ভুলভাবে স্যালভাদরে নির্বাসিত করা হয়, যা তার ২০১৯ সালের সুরক্ষা আদেশের লঙ্ঘন।
এল স্যালভাদরে বিতাড়ন
গত ১৫ মার্চ গার্সিয়াকে অ্যামেরিকা থেকে স্যালভাদরে বিতাড়ন করা হয়, যাকে ট্রাম্প প্রশাসন ‘প্রশাসনিক ভুল’ দাবি করে। হাই-প্রোফাইল বিতাড়িতদের তিন ফ্লাইটের একটিতে ছিলেন গার্সিয়া। এসব ফ্লাইটে কথিত ভেনেযুয়েলার গ্যাং সদস্যদেরও পাঠানো হয়।
ট্রাম্প প্রশাসন এমএস-১৩ গ্যাংকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে এবং দাবি করে, গার্সিয়া এ গ্যাংয়ের সদস্য। যদিও তার আইনজীবীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। গার্সিয়াকে এল স্যালভাদরের কুখ্যাত টেররিজম কনফাইনমেন্ট সেন্টার-সেকটে পাঠানো হয়।
ফেরত আনার বিষয়ে কী বলছে ট্রাম্প প্রশাসন
ট্রাম্প প্রশাসন গার্সিয়ার বিতাড়নকে প্রাথমিকভাবে ‘প্রশাসনিক ভুল’ হিসেবে স্বীকার করলেও তাকে ফিরিয়ে আনার বাধ্যবাধকতা নেই বলে দাবি করে। প্রশাসনের যুক্তি, এল স্যালভাদর সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং দেশটিকে গার্সিয়ার মুক্তির বিষয়ে বাধ্য করতে পারে না অ্যামেরিকা।
প্রশাসন আরও দাবি করে, গার্সিয়া এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য, যা এখন বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। এ কারণে গার্সিয়ার ২০১৯ সালের সুরক্ষা আদেশ আর বৈধ নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১২ এপ্রিল বলেছিলেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানবেন, কিন্তু তার প্রশাসন আদালতের নির্দেশ পালনে ইচ্ছার অভাব দেখিয়েছে।
গার্সিয়া কি ফিরতে পারবেন অ্যামেরিকায়
গার্সিয়ার অ্যামেরিকায় ফিরে আসা অনিশ্চিত। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সত্ত্বেও এল স্যালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলের অনিচ্ছা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের আদালতের নির্দেশ পালনে অনীহা এ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। সেনেটর ভ্যান হলেনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিরা চাপ সৃষ্টি করলেও স্যালভাদর ও অ্যামেরিকার বর্তমান প্রশাসনের অনিচ্ছা গার্সিয়ার ফিরে আসার সম্ভাবনাকে সংকুচিত করেছে। তবে ট্রাম্পের ওপর বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপ এবং আইনি লড়াইয়ে হয়তো সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখতে পারেন এ অভিবাসী।