মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। এরই মধ্যে একটি খসড়া নির্বাহী আদেশে আফ্রিকার দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া এবং বেশিরভাগ দূতাবাস ও কনস্যুলেট বন্ধের কথা বলেছেন তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে ঢেলে সাজানোর এই নির্বাহী আদেশ এ সপ্তাহেই স্বাক্ষর করতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর এই আদেশে জলবায়ু, নারী অধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অভিবাসন ও অপরাধবিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনাকারী অফিস ও পদগুলোও বিলুপ্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। এই খসড়া আদেশ অনুযায়ী, পূর্ণ কাঠামোগত পুনর্গঠন ও রূপান্তর চলতি বছরের ১ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, এই খসড়া নির্বাহী আদেশের বিভিন্ন উপাদান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাক্ষর করার আগে পরিবর্তিত হতে পারে। পররাষ্ট্র দপ্তরকে সুশৃঙ্খল করা, অপচয় ও জালিয়াতি কমানো, যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি প্রদর্শন ও পররাষ্ট্র দপ্তরকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সংযুক্ত করা-ই এই নির্বাহী আদেশের মূল লক্ষ্য।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই আদেশ বাস্তবায়িত হয়, তবে তা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে এবং বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উপস্থিতি ও কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
এদিকে, নিউইয়র্ক টাইমস যখন এই বিষয়ে প্রথম খবর প্রথম প্রকাশ করে, তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে লিখেছিলেন, এটা ভুয়া সংবাদ।
যা যা রয়েছে নতুন আদেশে-
অঞ্চলভিত্তিক পুনর্গঠন:
খসড়া আদেশে চারটি ‘আঞ্চলিক কোর’ গঠন করে বর্তমান আঞ্চলিক ব্যুরোগুলো একত্র করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো-
ইউরেশিয়া কোর (ইউরোপ, রাশিয়া ও মধ্য এশিয়া) মধ্যপ্রাচ্য কোর (আরব রাষ্ট্র, ইরান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান), লাতিন আমেরিকা কোর (মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল) এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কোর (পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ)।
কানাডায় কূটনৈতিক উপস্থিতি কমানো
এই প্রস্তাবে কানাডায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উপস্থিতি ব্যাপকভাবে কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। “নর্থ আমেরিকান অ্যাফেয়ার্স অফিস” নামে একটি ছোট দল কানাডার কার্যক্রম পরিচালনা করবে, যা সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর অফিসের অধীনে থাকবে।
এই আদেশে জলবায়ু, নারী অধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অভিবাসন ও অপরাধবিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনাকারী অফিস ও পদগুলোও বিলুপ্ত করার প্রস্তাব রয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন
খসড়া আদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ‘ফরেন সার্ভিস অফিসার টেস্ট’ বাতিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে প্রার্থীকে তার মনোভাব ও কার্যক্রমের মধ্যে ‘প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য’ রয়েছে কি না, তা মূল্যায়নের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে।
কর্মীদের জন্য বিকল্প প্রস্থান পরিকল্পনা
যেসব বিদেশি কূটনীতিক বা নাগরিক কর্মচারী নতুন আঞ্চলিক কাঠামোতে কাজ করতে চান না অথবা প্রশাসনের স্বার্থ রক্ষায় অনিচ্ছুক, তারা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘এককালীন বাইআউট ও ট্রানজিশন প্রোগ্রামের’ মাধ্যমে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারবেন।
সূত্র: সিএনবিসি