ইসরায়েলকে মদদ দেওয়ার অভিযোগে বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৫৫

গাজায় যে বর্বর গণহত্যা চালাচ্ছে, তা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং উল্টো এই যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আল জাজিরা গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জো বাইডেন ছাড়াও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় আদালতে।
এদিকে ফরাসি গণমাধ্যম লো ফিগারো জানিয়েছে, ইসরায়েলের সমর্থনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন যে অবস্থান নিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় নিয়োজিত ফ্রান্সের দশজন রাষ্ট্রদূত তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
অন্যদিকে আল জাজিরার আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে বৈশ্বিক আন্দোলন বেগবান হচ্ছে; ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার যুদ্ধবাদী মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করে গণস্বাক্ষর অভিযানে এরই মধ্যে আঠারশর মতো মানুষ সই করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী নেতা জেরেমি করবিন ও স্প্যানিশ রাজনীতিক আয়োন বেলারা উরতেগা।
৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। শরণার্থী শিবির ও হাসপাতাল, শিক্ষালয় ও উপাসনালয়- এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে দখলদার রাষ্ট্রটি বোমা হামলা করেনি। অমানবিক, বর্বর, জঘন্য ও অগ্রহণযোগ্য বলে নিন্দা ও প্রতিবাদের সুর বিশ্বব্যাপী জোরালো হলেও যুদ্ধবাদী নেতা নেতানিয়াহু কোনো আহ্বানেই এখন পর্যন্ত সাড়া দেননি। মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ করে আসছে।
গাজাবাসী যে অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, একে ‘পৃথিবীর নরক’-এর সঙ্গে তুলনা করেছে জাতিসংঘ।
৭ অক্টোবর হামাস ‘হঠাৎ’ হামলা করেছিল ইসরায়েলে; এতে এক হাজার দুশর মতো মানুষ নিহত হন। এ ছাড়া আড়াইশ জনকে জিম্মি করে হামাসের সশস্ত্র বাহিনী। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ হঠাৎ হামলা ছিল না; বরং টানা ৫৬ বছর ধরে গাজায় যে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের শিকার ফিলিস্তিনিরা, এরই প্রতিশোধ নিতে হামাস সেদিন ‘পরিকল্পিত’ হামলা চালায়।
হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে অভিহিত করে আসছে ইসরায়েল ও এর পশ্চিমা মিত্ররা। কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা গাজাবাসী হামাসকে স্বাধীনতার জন্য লড়াকু যোদ্ধাগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। হামাসের পক্ষে রয়েছে ইরান ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়া মনে করছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনকেই একমাত্র সমাধান।
৩৯ দিনের চলমান আগ্রাসনে অন্তত ১১ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশু। আরব ও লাতিন আমেরিকাসহ অনেক অঞ্চলের নেতারা অবিলম্বে যুদ্ধ থামানোর জন্য আহ্বান করে এলেও ইসরায়েল কোনো কথাই কানে তুলছে না। উল্টো সম্প্রতি হাসপাতালে হামলা বাড়িয়েছে; এমন অমানবিক চিত্র যে, হাসপাতালগুলো কবরস্থানে পরিণত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহল গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের জন্য দাবি জানিয়ে এলেও বাইডেন প্রশাসন সেদিকে কোনো ভ্রƒক্ষেপই করেনি। উপরন্তু ইসরায়েল সরকারকে কৌশলগত ও কূটনৈতিক সহযোগিতা এবং অর্থ ও অস্ত্রসহায়তা দিয়ে আসছে।
মামলায় অভিযোগের শুরুতে সিসিআর লিখেছে, ‘ইসরায়েল সরকারের নেতারা গাজায় গণহত্যা চালানোর স্পষ্ট অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন। তারা ফিলিস্তিনিদের জন্তু-জানোয়ারের মতো অমানবিক বৈশিষ্ট্যে আখ্যায়িত করেছেন।’
এমন মনোভাব ও হত্যাযজ্ঞ স্পষ্টতই গণহত্যার প্রকাশ্য অপরাধের প্রমাণ বহন করছে বলে দাবি সিসিআরের। তারা বলছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বোমা হামলা শুরু করার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন দেশটির প্রতি অটল সমর্থন ব্যক্ত করেন। চলমান সংঘাতের মধ্যে এই সমর্থনের বিষয়টি বারবারই ব্যক্ত করছেন তিনি ও তার মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা।
সিসিআরের আইনজীবী আস্থা শর্মা পোখারেল আল জাজিরাকে বলেছেন, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন ও ফেডারেল আইনের অধীনে এই গণহত্যা প্রতিরোধ এবং এই গণহত্যায় সমর্থন বন্ধ করার জন্য মার্কিন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি সুযোগে বাইডেনের সরকার ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো তারা ইসরায়েলকে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। তারা ইসরায়েলে আরও অর্থ ও অস্ত্র পাঠাতে চাচ্ছেন।
মামলার বাদীদের একজন মার্কিন নাগরিক লাইলা আল-হাদ্দাদ। তিনি চলমান সংঘাতে গাজায় বসবাস করা অন্তত পাঁচ স্বজনকে হারিয়েছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমার দেওয়া করের অর্থ আমার ফুফু ও ফুফাতো ভাইদের হত্যা করার জন্য পাঠানো হয়েছে।’
সিসিআরের মামলায় ইসরায়েলকে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার সামরিক সহায়তা বন্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা তথা তখন নতুন গড়ে ওঠা ইসরায়েল রাষ্ট্রের কারণে নিজের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হন ফিলিস্তিনিরা। আর ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েলি ক্রমবর্ধমান দখলদারিত্বের বাধ্য শিকার অবরুদ্ধ গাজাবাসী।