অল্টারনেটিভস টু ডিটেনশন-এটিডি প্রোগ্রামে তালিকাভুক্ত অভিবাসীদের পায়ে জিপিএস মনিটর যুক্ত করা বাড়ানোর নির্দেশনা পেয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস।
ফেডারেল সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ একটি নথির বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯ জুন অনুমোদিত একটি মেমোতে এটিডি প্রোগ্রামে তালিকাভুক্ত সব ব্যক্তির গোড়ালিতে মনিটর যুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয় আইস কর্মীদের। এটিডিতে প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসী নথিভুক্ত রয়েছেন।
অভিবাসন মামলার নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষারত এসব অভিবাসী ট্র্যাকিং বা বাধ্যতামূলক চেক-ইনের জন্য সম্মতি জানান। বর্তমানে এসব অভিবাসীর মধ্যে ২৪ হাজার ব্যক্তি তাদের পায়ের গোড়ালিতে মনিটর পরছেন। এ ধরনের গোড়ালি মনিটর নির্দেশিকার পদক্ষেপকে বিতর্কিত ২০ বছরের পুরোনো নজরদারি প্রথার একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
অভিবাসী ও তাদের আইনজীবীরা এ পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, সরকারের ভারী কালো গোড়ালি ব্যান্ড ব্যবহার শারীরিকভাবে অস্বস্তিকর। এটি ব্যবহারকারীদের ওপর সামাজিক কলঙ্ক আরোপ করছে।
তাদের ভাষ্য, এ ধরনের মনিটরের ব্যবহার ব্যক্তিদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে। অভিবাসীদের অনেকেরই কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড বা আদালতের অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিসের ইতিহাস নেই।
এক সাক্ষাৎকারে আইসের মুখপাত্র এমিলি কোভিংটন মেমোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে তিনি বলেছেন, প্রশাসন অভিবাসন আইন মেনে চলা নিশ্চিত করার জন্য গোড়ালি মনিটরকে ‘প্রয়োগকারী হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে। জবাবদিহিতার জন্য এটি অবাক করার মতো কিছু নয়।
এমিলি দাবি করেন, আইস এখনও কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয় এবং কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ট্র্যাকিং প্রযুক্তি প্রয়োজন, সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের যথেষ্ট বিচক্ষণতা রয়েছে।
ফ্লোরিডার বোকা র্যাটনভিত্তিক বেসরকারি কারাগার সংস্থা জিও গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিআই ইনকর্পোরেটেড ট্র্যাকিং প্রোগ্রামটি পরিচালনা করছে। জিও গ্রুপ ট্রাম্পের ২০২৪ সালের প্রচার এবং উদ্বোধন কমিটিতে ১.৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছিল।
আইসের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে কর্মকর্তারা বিআই ছাড়াও অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পনির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করছে। কেননা বিআইয়ের সক্ষমতা আইসের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণে সক্ষম নাও হতে পারে বলে মনে করছেন পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত একজন কর্মকর্তা।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এ নীতি অনেককেই অবাক করেছে। গত সপ্তাহে ভার্জিনিয়ার চ্যান্টিলিতে অবস্থিত একটি আইস ফিল্ড অফিসের কক্ষে প্রায় ৫০ জন অভিবাসী ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
আইসের একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য দেন মক্কেলের সঙ্গে থাকা ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি মেগান ব্রডি। তিনি জানান, এখানে থাকা প্রত্যেককেই হয় হার্ডওয়্যার পরতে হবে নয়তো আটক থাকতে হবে।
আইসের তথ্য অনুযায়ী, বেশির ভাগ অনুমোদনহীন অভিবাসীর আদালতের শুনানিতে উপস্থিত থাকতে হবে অথবা তাদের মামলা প্রক্রিয়াধীন থাকাকালীন মাঠ পর্যায়ের অফিসে চেক-ইন করতে হবে। যদিও বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে এ সংখ্যা পরিবর্তিত হয়।
অভিবাসী অধিকার গোষ্ঠী অ্যামেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল ফেডারেল তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৮৩ শতাংশ আটকহীন অভিবাসী আদালতে সব শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
অভিবাসন কার্যক্রমের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের একটি ছোট অংশ এটিডিতে নথিভুক্ত। এর জন্য তাদের একটি ট্র্যাকিং ডিভাইস পরতে হবে অথবা একটি অ্যাপ ব্যবহার করে ভার্চুয়াল চেক-ইন করতে হবে। পাশাপাশি তাদের বাড়িতে বা বিআই অফিসে কেস ম্যানেজারদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে হবে।
এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩ শতাংশ এটিডিতে অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে গোড়ালির মনিটর ব্যবহার করা হয়, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এটিই একমাত্র অভিবাসী মনিটরিং প্রযুক্তি, যার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারি থেকে ৪ হাজার ১৬৫ জন নতুন ব্যক্তিকে মনিটর পরতে বাধ্য করা হয়েছে।
কলোরাডোর বোল্ডারে অবস্থিত বিআইয়ের কারখানায় তৈরি এ ডিভাইসগুলোর একটি পরা মানে গোড়ালিতে ভারী কিছু একটা থাকা। ছয় আউন্স ওজনের ডিভাইসটির ভার একটি আইফোনের প্রায় সমান। এ ছাড়া এ ডিভাইসগুলো যারা পরেন, তাদের গায়ে ক্ষত বা ফুসকুড়িও দেখা যায়।
২