নিউইয়র্কের দোকান মালিক শন রাফেতির কথাই ধরুন। ৪০ বছর ধরে এখানে শপরাইট নামের একটি চেইন গ্রোসারির ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে আসছেন। তিনি জানালেন, আগে তার দোকানে যা কিছু অবিক্রিত থেকে যেতো তা ভাগারে ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু এখন তা করা হয় না। নিউইয়র্ক স্টেট জুড়ে একটি কর্মসূচির অংশ হিসেবে অবিক্রিত খাবারের মধ্যে যেগুলো খাওয়ার সেগুলো ডোনেট করার সুযোগ রয়েছে। নিউইয়র্কের বেশ কিছু সংগঠন এভাবে খাদ্য সংগ্রহ করে। আর সে খাবারগুলো তাদের মাঝেই বিতরণ করে যারা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
তার খাদ্যহীনের খাবার যোগানোর চেয়েও ভাগারে পচে গলে খাবারগুলো থেকে যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃস্বরণের সুযোগ ছিলো সেটা থেকেই পরিবেশকে রক্ষা করে এই প্রক্রিয়া। অনেক সময়ই স্রেফ ভাগার থেকেই তুলে আনা হয় খাবারহুলো। তারা তুলে আনে শাক-সব্জি, ডিম, সিরিয়াল ও অন্যান্য খাবার। পরে তা ক্ষুধার্ত পরিবারগুলোতে বিলিয়ে দেওয়া হয়।
বিশ্বে উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশই আবার পরে নষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এই নষ্ট হওয়ার মাত্রা আরও বেশি। মোট উৎপাদিত খাদ্যের ৪০ শতাংশই নষ্ট করা হয়। হার্ভার্ড ফুড ল' অ্যান্ড পলিসি ক্লিনিকের তথ্য বলছে যুক্তরাষ্ট্র এই নষ্ট করে ফেলা খাবারে ২১৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। তথ্য হচ্ছে বছরে ৬৩ টন খাবার নষ্ট করা হয়, যার মধ্যে ৫২.৪ টনই ফেলা হয় ভাগারে। আর ১০ টন খাবার উৎপাদনস্থলেই ফের নষ্ট হয়।
এই যে নষ্ট করা হচ্ছে, এর চেয়েও উদ্বেগের হচ্ছে এর প্রভাব। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক এমিলি বোর্ডের দেওয়া তথ্য বলছে, বছরে ৮% থেকে ১০% গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃস্বরণ ঘটে খাদ্য বর্জ্য থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০% পানি ব্যবহৃদ হয় খাদ্য উৎপাদন। আর যখন আমরা সেই খাবারই স্রেফ ফেলে দেই, তার মানেই হচ্ছে আমরা পানির উৎস থেকে পানি তুলে ফেলে দিচ্ছি ভাগারে।
উদ্বৃত্ত খাদ্য দিয়ে কিছু একটা করা যায় কি না, সে ব্যাপারে এখন সচেতনতা বাড়ছে। ২০১৫ সালে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার অ্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি ২০৩০ সালের মধ্য খাদ্য নষ্টের মাত্রা ৫০% কমিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করে।
তারই জের ধরে বেশ কিছু বেসরকারি উদ্যোগ সামনে আসে যারা খাদ্য বাঁচানোর কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি স্টেট ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া আইন পাশ করে খাদ্য নষ্ট কমিয়ে আনা, কম্পোস্ট সারে রূপান্তর আর খাদ্য ডোনেট করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।