নিউইয়র্কের ৫০ শতাংশ কর্মজীবিকেই তাদের পরিবারের শেষ প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারেন না। কোভিড-১৯ এর আগেও অনেক নিউইয়র্কারকে লড়তে হয়েছে ক্ষুধা নিবারণের সংগ্রামে। ৩০ লাখ নিউইয়র্কারকে পরিবারের প্রধান খরচগুলো- ঘরভাড়া, ইউটিলিটি বিল এমনকি খাবার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। ট্রু কস্ট অব লিভিং শীর্ষক সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সিটি হারভেস্ট নামের একটি সংস্থা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিউইয়র্ক সিটির সঙ্গে কাজ করছে সংস্থাটি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে গৃহায়ণের উচ্চ খরচ, খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, সরকারের প্রধান প্রধান কিছু সহায়তা কর্মসূচি বাতিল হয়ে যাওয়া এসবই এর কারণ।
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এমন নিউইয়র্কারদের অনেকেই জানেনা, তাদের পরবর্তী বেলার খাবার কোথা থেকে আসবে, কিভাবে আসবে, কখন আসবে। পরিবারগুলোকে তাদের বাধ্যতামূলক খরচ যেমন ঘরভাড়া, ইউটিলিটি বিল, শিশুযত্ন ও চিকিৎসাখাতে ব্যয়ের পর খাবার খরচই কমিয়ে আনতে হয়।
রিপোর্টে দেখানো হয়েছে নিউইয়র্কে এখন একটি প্রিস্কুল-বয়সী শিশু ও একটি স্কুলগোয়িং শিশু ও দুই জন প্রাপ্তবয়ষ্কের একটি পরিবারের বার্ষিক আয় ১০০,০০০ ডলার না হলে আর চলে না। নগরের পাঁচটি বোরোর সবক'টিরই পরিস্থিতি এমন।
এ অবস্থায় নগরীর ১.২ মিলিয়ন নিউইয়র্কার তাদের নিজেদের ও পরিবারের ভরণ-পোষণ জোটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সিটি হারভেস্টের পক্ষ থেকে দীর্ঘসময় ধরে সহায়তা দেওয়া হচ্ছিলো এমন অনেক প্রান্তিক কমিউনিটির মানুষ এখন খাদ্যা অনিরাপত্তায় দিনাতিপাত করছেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমরা জানি, নগরের সবস্থানে সবার জন্য ক্ষুধা-মন্দার পরিস্থিতি একরকম নয়। বিভিন্ন রঙের জনগোষ্ঠীর ওপর এর প্রভাব প্রকট। আর তা হয়েছে স্রেফ সিস্টেমের ব্যর্থতা ও দশকের পর দশক ধরে চলে আসা অসমতা নীতির কারণে।
সিটি হারভেস্ট বলছে, কোথা থেকে এলো তা কোনো বিষয় হতে পারে না। কোনো নিউইয়র্কারের ক্ষেত্রেই এটা কাম্য নয় যে তাকে ভাবতে হবে, পরের বেলার খাবার কোথা থেকে আসবে!
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, নিউইয়র্কের প্রতি ৫টি শিশুর মধ্যে ১টি শিশু খাদ্যা অনিরাপত্তায় রয়েছে।
গেলো ৫ বছর ধরে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ যখন নিউইয়র্কের কোনায় কোনায় আঘাত হানছে তখন তার প্রভাব গিয়ে পড়ছে শিশুদের উপর। গত বছর নগরের ফুড প্যান্ট্রিস, স্যুপ কিচেন ও কমিউনিটি ফুড প্রোগ্রামগুলোতে শিশুদের নিয়ে হাজির হওয়ার সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৬৭% বেড়েছে। ফুড প্যান্ট্রিগুলোতে বিভিন্ন বয়সের মানুষের হাজির হওয়ার মাত্রা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে এই বছরে।
কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের পর থেকে চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট ও এমার্জেন্সি এসএনএপি বরাদ্দের মতো কর্মসূচিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ফুড প্যান্ট্রি ও স্যুপ কিচেনে সার্বিকভাবে উপস্থিতির হার ২০১৯ এর তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
খাদ্য অনিরাপত্তা বিভিন্নভাবেই দেখা দেয়। কখনো পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তিটির কাজ হারানো এবং একটি নতুন কাজ পাওয়ার মাঝখানের সময়টি, আবার কখনো একজন বয়ষ্ক যার নির্ধারিত একটি অংক দিয়ে মাস চালিয়ে নিতে হয় তখন খাদ্য অনিরাপত্তা তার চেহারা দেখায়।