‘নিউইয়র্ক সিটির আবাসন সমস্যার সমাধান কবে নাগাদ হবে? সম্ভব এ বছর নয়।’ নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত রিপোর্টের শিরোনামে পাঠকের মনে হতে পারে, সিটির আবাসন সমস্যা সদ্য শুরু হওয়া নতুন বছরে শেষ না হলেও এর পরের বছর বা তার পরের বছর সমাধান হবে। কিন্তু আদৌ কি সিটির আবাসন সমস্যার সমাধান সম্ভব? অ্যালবেনিতে আইন প্রনেতারা প্রতিবছর পালা করে সিটির আবাসন সমস্যা নিয়ে বিতর্ক করেন। বিদ্যমান আবাসন আইনে সংশোধন আনেন সিটিবাসীর আবাসন সমস্যা লাঘবের জন্য। কিন্তু তাতে বাস্তব কোনো সমাধান হয় না।
সিটিবাসীর নিত্য শিরপীড়ার কারণ আবাসন। তা সত্বেও আইনপ্রনেতারা মনে করছেন যে নিউইয়র্ক সিটির আবাসন সমস্যা সমাধানে তারা বড় ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে সফল হবেন। সিটিতে বাড়িভাড়া যখন হু হু করে বাড়ছে, সীমিত আয়ের লোকজন প্রতিনিয়ত বর্ধিত বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল অংশ ভাড়াটেদের জন্য নতুন নিরাপত্তামূলক বিধিবিধান তৈরির চেষ্টা থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন না বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুল তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন যে, নিউইয়র্ক সিটির আশপাশের শহরতলীগুলোতে আরো আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো স্টেট সরকারের ওপর ক্রমাগ চাপ সৃষ্টি করছে তাদের জন্য স্থায়ী কর রেয়াতের আইন পাস করতে। তারা অবশ্য বলছেন যে তারা যদি কর রেয়াতের সুবিধা লাভ করেন তাহলে তাদের পক্ষে নতুন অ্যাপার্টমেন্টগুলোকে আরো সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় করা সম্ভব হবে। কিন্তু আইনপ্রনেতারা রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর এ ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে রাজি নয়।
নিউইয়র্ক টাইমস মনে করছে যে, আবাসনের ক্ষেত্রে নতুন বছর ফেলে আসা ২০২৩ সালের চেয়ে বেশি সঙ্কটাপন্ন হবে। গত দেড় বছরে সিটিতে আগত প্রায় পোনে দুই লাখ ইমিগ্রান্টের আবাসন ব্যবস্থা করতে সিটি ও স্টেট প্রশাসনের সঙ্গীন অবস্থা দাঁড়িয়েছে। সিটির হোমলেস আশ্রয়কেন্দ্রগুলো উপচে পড়ছে। উচ্চ সূদ হার ও কররেয়াত মেয়াদের অবসানে নতুন অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ সঙ্কটে পড়েছে, যার ফলে সিটির আবাসন ঘাটতি আরো গভীর হতে যাচ্ছে।
নিউইয়র্কে বাড়িভাড়া ও বাড়ির মূল্য এখন সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা নিম্ন আয়ের সিটিবাসীর প্রাত্যহিক জীবনের ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে এবং এ কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন নিউইয়র্ক সিটি থেকে দেশের অন্যান্যা স্থানে চলে যাচ্ছে, যেখানে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়ি কেনা যায় এবং কম ভাড়ায় বাড়ি পাওয়া যায়। গণমাধ্যমের এক হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ লোক নিউইয়র্ক ছেড়ে স্থায়ীভাবে অন্য স্থানে গেছে। এসব বিবেচনায় স্টেট কর্মকর্তা ও আইনপ্রনেতারা ২০২৩ সালে দৃশ্যত বেশ চেষ্টা করেছে আবাসন সমস্যার সহনীয় সমাধান বের করতে, তারা আবাসন সঙ্কট লাঘবে ক্যালিফোর্নিয়া ও ম্যাসাচুসেটসের মতো কোয়ালিশন বিল্ডিং পলিসি গ্রহণের জন্যও চিন্তাভাবনা করেছেন।
কিন্তু নিইউয়র্ক সিটিতে আবাসন সুবিধা উন্নয়নের কোনো চেষ্টাই সম্ভবত অন্য স্টেটের মতো সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল এই সিটির রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পক্ষে লবিং গ্রুপগুলো অত্যন্ত ক্ষমতাধর। ভাড়াটে অধিকার নিয়ে কাজ করে যেসব সংগঠন তারাও শক্তিশালী, যার ফলে প্রগতিশীল ডেমোক্রেটরা রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো চাপের কাছে সহজে মাথা নত করার অবস্থায় নেই।
ভাড়াটেদের নিরাপত্তার নতুন ব্যবস্থা নিশ্চিত হলেই তারা কোম্পানিগুলোর কিছু সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করতে আগ্রহী। স্টেট গভর্নর হকুল বলেছেন যে, আইনপ্রনেতাদের পক্ষ থেকে আগাম আশ্বাস না পেলে তিনি ২০২৪ সালে তার উচ্চাভিলাষী আবাসন পরিকল্পনা হাউজে পুনরায় উত্থাপনের জন্য পাঠাবেন না। এর আগে এটি যখন উত্থাপন করা হয়েছিল তখন আইনপ্রনেতারা এর প্রতিরোধ করেছিলেন।