চার্লি কার্ক কীসে বিশ্বাস করতেন, ইসলাম নিয়ে কী বলতেন?

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:৪১

অ্যামেরিকার রক্ষণশীল তরুণদের আন্দোলনে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন চার্লি কার্ক।
টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি নতুন প্রজন্মের ডানপন্থি কর্মীদের চিন্তাধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন।
অভিবাসন, বর্ণ, জেন্ডার, জলবায়ু পরিবর্তন ও বন্দুক রাখার অধিকার নিয়ে কার্কের অবস্থান তাকে অ্যামেরিকার রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
অনেকের কাছে তিনি ছিলেন নির্ভীক রক্ষণশীল কণ্ঠস্বর, আবার অনেকের কাছে বিভাজন সৃষ্টিকারীদের মুখপাত্র।
ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে বুধবার শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কার্ক। এর আগে তাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল ট্রান্সজেন্ডার অধিকার ও বন্দুক সহিংসতা নিয়ে।
কার্কের মৃত্যু একদিকে রক্ষণশীল মহলে শোক ও প্রশংসা জাগিয়েছে। অন্যদিকে সমালোচকদের চোখে তিনি থেকে গেছেন বিভেদ সৃষ্টিকারী চরিত্র হিসেবে।

জেন্ডার আইডেন্টিটি ও ধর্ম
কার্ক তাঁর জনপ্রিয়তা গড়ে তুলেছিলেন তথাকথিত ‘র‍্যাডিকাল জেন্ডার আইডিওলজি’র বিরোধিতা করে। তিনি এল.জি.বি.টি.কিউ. সম্প্রদায়ের অধিকারের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং দাবি করতেন খ্রিষ্টান রক্ষণশীলদের মূল্যবোধ হুমকির মুখে।
চার্চ ও স্টেইট আলাদা রাখার ধারণা তিনি প্রত্যাখ্যান করতেন এবং বলতেন অ্যামেরিকার জনজীবনে খ্রিষ্ট ধর্মকেদৃশ্যমান ভূমিকা নিতে হবে।
কার্ক ২০২১সালে চালু করেন TPUSA Faith, যার লক্ষ্য ছিল চার্চকে একত্রিত করা। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের ও অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, জেন্ডার সংক্রান্ত প্রগতিশীল মতবাদ সমর্থনের ক্ষেত্রে যেন তারা অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন।

অভিবাসন ও জনমিতি
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে কার্ক দৃঢ়ভাবে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট থিওরি সমর্থন করতেন।
এ তত্ত্ব অনুযায়ী, অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীরা শিগগিরই শ্বেতাঙ্গ অ্যামেরিকানদের স্থান দখল করবে।
কার্ক আরও এগিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, ইহুদিরা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাপক অভিবাসনকে উৎসাহ দিচ্ছে শ্বেতাঙ্গ শক্তি দুর্বল করার জন্য।
সমর্থকদের কাছে তিনি অ্যামেরিকার পরিচয় রক্ষাকারী এক কণ্ঠস্বর হলেও সমালোচকদের চোখে এটি ছিল বিপজ্জনক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।

বন্দুকের অধিকার ও সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী
কার্ক ছিলেন সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট তথা সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর এক দৃঢ় সমর্থক। বন্দুক নিয়ন্ত্রণের প্রায় সব প্রচেষ্টা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
২০২৩ সালে TPUSA Faith-এর এক ইভেন্টে তিনি বলেন, বন্দুকের অধিকার ‘স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য’ অপরিহার্য।
তিনি স্বীকার করেছিলেন, বন্দুক সংস্কৃতির কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে, কিন্তু এটিকে তিনি স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মূল্য হিসেবে বর্ণনা করেন।
তার সমাধান ছিল, বন্দুক কমানো নয়, বরং অ্যামেরিকানদের হাতে আরও বেশি বন্দুক তুলে দেওয়া।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ
যখন তরুণ রক্ষণশীল ভোটারদের বড় অংশ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত হচ্ছিল, কার্ক তখন জলবায়ু বিজ্ঞানকে ব্যঙ্গ করতেন। তিনি বলতেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক ঐকমত্য নেই।
২০২৪ সালের শেষের দিকে টার্নিং পয়েন্ট ইউকেতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি ‘অর্থহীন বাজে কথা’ বলে জলবায়ু পরিবর্তননিয়ে উদ্বেগকে উড়িয়েদেন।

বাকস্বাধীনতা ও ক্যাম্পাস আন্দোলন
বাকস্বাধীনতা ছিল কার্কের রাজনৈতিক ব্র্যান্ডের কেন্দ্রে। টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বড় আকারের রাবারের বিচ বল রাখত, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতামত লিখতে পারতেন। এর উদ্দেশ্য প্রতীকীভাবে মত প্রকাশের অধিকার অনুশীলন।
তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খোলা বিতর্কে বসতে আমন্ত্রণ জানাতেন এবং যেসব বিশ্ববিদ্যালয় তার ইভেন্ট সীমিত বা কড়াকড়ি করতে চাইত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতেন।
সমালোচকরা বলতেন, কার্কের বাকস্বাধীনতা আন্দোলনে ভণ্ডামি রয়েছে। কারণ টিপিইউএসএর প্রফেসর ওয়াচলিস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানানো হয়েছিল ‘বামপন্থি’ অধ্যাপকদের নাম দেওয়ার, যেটি অনেকের কাছে এক ধরনের ভয় দেখানোর কৌশল হিসেবে বিবেচিত।

বর্ণ ও নাগরিক অধিকার
বর্ণ নিয়ে কার্কের সবচেয়ে বিতর্কিত অবস্থানগুলো প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, ১৯৬৪ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্ট ছিল একটি ‘ভুল পদক্ষেপ’।
তার মতে, ওই আইন অ্যামেরিকান রাজনীতিতে শ্বেতাঙ্গবিরোধী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।
তিনি মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি ‘ভয়ংকর’ ব্যক্তি ছিলেন এবং তাকে অতিমাত্রায় সম্মান দেওয়ার ফলে অ্যামেরিকা বর্ণ নিয়ে অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে গেছে।
কার্ক দৃঢ়ভাবে অ্যাফার্মেটিভ অ্যাকশন বিরোধী ছিলেন এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসনকে কোটা প্রথায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন।
মিনেসোটার ম্যানকাটোতে ২০২১ সালে একবক্তৃতায় তিনি জর্জ ফ্লয়েডকে ‘একজন নষ্ট লোক’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন তিনি কোনো মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য নন।
ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডে পুলিশের হাতে ২০২০ সালে দেশব্যাপী প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল।

ইসলাম নিয়ে চার্লি কার্কের দৃষ্টিভঙ্গি
কার্ক প্রায়ই বলেছেন যে, ইসলাম ‘পশ্চিমা সভ্যতা’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি যুক্তি দিতেন, ইসলাম ও পশ্চিমা মূল্যবোধের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও নীতিগত ফারাক আছে।
অভিবাসন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রসার সম্পর্কে কার্ক বলেন, মিলিয়ন মিলিয়ন মুসলিমদের আমদানি পশ্চিমের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে।

বিভাজিত উত্তরাধিকার
চার্লি কার্কের রাজনৈতিক জীবন ছিল একুশ শতকের অ্যামেরিকার তীব্র আদর্শগত বিভেদের প্রতিফলন। সমর্থকদের চোখে তিনি ছিলেন সাহসী, সত্যভাষী, যিনি প্রগতিশীল মতবাদকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
সমালোচকদের কাছে তিনি ষড়যন্ত্র ছড়ানো ও বর্ণবাদী বিভাজন উসকে দেওয়া বিতর্কিত এক ব্যক্তি।


তথ্যসূত্র:টিবিএন২৪