যুক্তরাষ্ট্রে আরব তথা মুসলিম কমিউনিটিতে বড় ধরনের আস্থার সঙ্কটের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২০২৪ সালের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সামনে রেখে তাকে হোচট খেতে হচ্ছে। গাজা যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকার জের হিসেবেই এই ধাক্কা আসছে। যা সামলে ওঠা হয়তো কষ্টকরই হবে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে। সবশেষ বাইডেন ক্যাম্পেইন টিমকে মিশিগানে আরব তথা মুসলিম নেতাদের রক্তচক্ষু দেখতে হলো। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে আসতে হলো ক্যাম্পেইন নেতাদের।
মিশিগানে আরব ও মুসলিম নেতারা বাইডেন ক্যাম্পেইনের নেতাদের কথা শুনতেই চাইলেন না। শুক্রবার বিকেলে ছিলো এই কর্মসূচি। মুসলিম নেতাদের বক্তব্য হোয়াইটহাউজ তাদের ভোটারদের ভোট যেনে মুফতে পাওয়া মনে করছে। আর অব্যহত ভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে ইসরাইলকে। আর তারই মদদে গাজায় নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।
ওইদিন ডেট্রয়েটে বাইডেন ক্যাম্পেইনের নেতারা গিয়েছিলেন এই আলোচনার জন্য। ডেট্রয়েট যুক্তরাষ্ট্রে আরবি ভাষাভাষীদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটির বাস। বাইডেন ক্যাম্পেইন অবশ্য সেখানে গাজা যুদ্ধ ও তাদের ভোটারদের উদ্বেগ নিয়েই আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা শুনতেই রাজি হন নি মুসলিম নেতারা।
কতিপয় মুসলিম ও আরব নেতা প্রথমে অবশ্য আশ্বাস দিয়েছিলেন, সভাটি হতে পারে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর তা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার প্রশাসন। ইসরায়েলি নৃশংসতায় অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ায় বাইডেনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা। এতে বাইডেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে মুসলিমদের এক হওয়ার ডাক দিয়ে আসছেন নেতারা।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে আবার লড়বেন বাইডেন। কিন্ত নির্বাচনের ফলনির্ধারণী (সুইং স্টেট) দেশটির অন্তত ছয়টি অঙ্গরাজ্যের মুসলিম নেতারা আসন্ন নির্বাচনে বাইডেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে মুসলিমদের এককাট্টা করার ঘোষণা দেন।
মিশিগান এর মধ্যে অন্যতম একটি সুইং স্টেট যা এখন এই বিরোধীতা আরও স্পষ্ট করলো।
সম্প্রতি করা এক জরিপে দেখা গেছে, আরব–আমেরিকান মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপকভাবেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন বাইডেন। ২০২০ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম তাকে সমর্থন করতেন। কিন্তু বিগত চার বছরের মধ্যেই এতে বড় ধস নেমেছে।
এতে মিশিগানের মতো রাজ্যগুলোয় জয়–পরাজয় নির্ধারণী হয়ে উঠতে পারেন মুসলিম ভোটাররা। কারণ, গত নির্বাচনে এ রাজ্যে বাইডেন মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। আরব–আমেরিকান ইনস্টিটিউটের হিসাবে, মিশিগানের ভোটারদের মধ্যে ৫ শতাংশ মুসলিম।
এছাড়াও উইসকনসিনের মতো রাজ্যে মুসলিম ভোটার আছে প্রায় ২৫ হাজার। গত নির্বাচনে এই রাজ্যে বাইডেন জেতেন মাত্র ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। অ্যারিজোনায় মুসলিম ভোটার ২৫ হাজারের বেশি। গতবার রাজ্যটিতে মাত্র সাড়ে ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পান বাইডেন।
এতে সুইং রাজ্যগুলোতে বাইডেনকে সত্যিই বিপাকে পড়তে হবে বাইডেনকে।