৫৪ বছর পর লুট হওয়া ১৮ শতকের একটি চিত্রকর্ম উদ্ধার করার তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। ২৬ জানুয়ারী শুক্রবার জন ওপির চিত্রকর্ম ‘দ্য স্কুলমিস্ট্রেস’ উদ্ধারের বিষয়টি জানায় এফবিআই।
ব্রিটিশ চিত্রকর্মটি ১৯৬৯ সালে ডাকাতরা লুট করে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ওপির এই কাজটি নিউজার্সির সাবেক আইন প্রণেতার সহায়তায় চুরি করা হয়েছিল এবং তারপরে এটি দক্ষিণ উটাহর শহর সেন্ট জর্জে পৌঁছানোর আগে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ডাকাত দলের কাছে ছিল।
এফবিআই বলেছে, ১১ জানুয়ারি ৯৬ বছর বয়সি ড. ফ্রান্সিস উডের কাছে চিত্রকর্মটি ফেরত দেওয়া হয়। তিনি চিত্রকর্মটির আসল মালিক ড. আর্ল উডের ছেলে।
এ বিষয়ে এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জন ওপি ‘দ্য স্কুলমিস্ট্রেস’ এঁকেছিলেন ১৭৮৪ সালে। ১৮৪ বছর পর ১৯৬৯ সালে চিত্রকর্মটি যখন চুরি হয় তখন এটি শোভা পাচ্ছিল নিউ জার্সির অভিজাত উড পরিবারের অন্দরমহলে।
পুলিশ ও এফবিআইয়ের তদন্তের ভিত্তিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে চিত্রকর্মটিকে উড পরিবারের ন্যায্য সম্পত্তি হিসেবে রায় দিয়েছে একটি মার্কিন আদালত। উড পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য এখন ফ্রান্সিস উড। বর্তমানে ৯৬ বছর বয়সী উড একজন চিকিৎসক।
চিত্রকর্মটি ফিরে পাওয়ার পর এটির অবস্থা সম্পর্কে ফ্রান্সিসের ছেলে ডেভিড উড বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে বলেছেন, ‘দু-একটি ছোটখাটো দাগ রয়েছে। তবে ২৪০ বছরের পুরোনো একটি পেইন্টিংয়ের জন্য এবং একটি অন্ধকার যাত্রার পরও এটি বেশ ভালো অবস্থায় আছে।’
গত ৫৪ বছর চিত্রকর্মটি যাদের কাছে ছিল, তারা এটির জন্য নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ডেভিড। তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ যে তারা পেইন্টিংয়ের যত্ন নিয়েছে।’
৪০ ইঞ্চি বাই ৫০ ইঞ্চির এই তৈলচিত্রটিতে একজন বয়স্ক নারীকে দেখা যায়, যিনি একটি পাঠশালায় শিশুদের পড়াচ্ছেন। সম্ভবত শিল্পী তাঁর মায়ের আদলে নারীটিকে এঁকেছেন। আর পাঠশালাটিও সম্ভবত চিত্রকর ওপি যেখানে বেড়ে উঠেছেন দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের সেই কর্নওয়াল অঞ্চলের।
চিত্রকর ওপি তাঁর সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী ছিলেন। ২০০৭ সালে তাঁর একটি পেইন্টিং ৫ লাখ ৮০ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছিল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকারও বেশি।
ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি আসল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া ‘দ্য স্কুলমিস্ট্রেস’ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীদের কাছে ছিল। পরে ২০২১ সালে ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের ওয়াশিংটন কাউন্টিতে একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্ম তাদের এক ক্লায়েন্টের বাড়িতে চিত্রকর্মটির অস্তিত্ব আবিষ্কার করে। ২০২০ সালে ওই ক্লায়েন্ট মারা যাওয়ায় তাঁর বাড়ির মালামাল নিলাম করছিল প্রতিষ্ঠানটি। পরে নিলামের জন্য চিত্রকর্মটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে তারা বুঝতে পারে, এটি ইংরেজ শিল্পী ওপির আঁকা একটি মাস্টারপিস।
মৃত ক্লায়েন্টের নাম প্রকাশ না করে অ্যাকাউন্টিং ফার্মের পক্ষ থেকে জানানো হয়—তাদের ক্লায়েন্ট ১৯৮৯ সালে ফ্লোরিডায় দোষী সাব্যস্ত গ্যাংস্টার জোসেফ কোভেলো সিনিয়রের কাছ থেকে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। সেই বাড়িতেই পেইন্টিংটি ছিল। পরে এটিকে ইউটাহ রাজ্যে নিয়ে আসা হয়।
যেখান থেকে চুরি হয়েছিল সেই উড পরিবারে চিত্রকর্মটি প্রবেশ করেছিল ১৯৩০ সালে। ইংল্যান্ড ভ্রমণে গিয়ে এটি তখনকার বাজারমূল্য অনুযায়ী সাড়ে সাত হাজার ডলার দিয়ে কিনেছিলেন ফ্রান্সিসের বাবা আর্ল লেরয় উড। পরে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে অবস্থিত নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন লেরয়।
তৎকালীন আদালতের নথি থেকে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে ৭ জুলাই জেরাল্ড ফেস্টা, জেরাল্ড ডোনারস্ট্যাগ এবং অস্টিন কাস্টিগ্লিওন নামে তিন ব্যক্তি উডের বাড়ি থেকে দুষ্প্রাপ্য মুদ্রার একটি সংগ্রহ চুরি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু চুরি ঠেকানোর জন্য সচল রাখা একটি অ্যালার্ম বেজে উঠলে তাঁরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। তবে ১৮ দিন পর অর্থাৎ ২৫ জুলাই তাঁরা আবারও ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং চিত্রকর্মটি চুরি করে নিয়ে যান।
১৯৭৫ সালে একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিন চোরের একজন জেরাল্ড ফেস্টা দাবি করেন—তৎকালীন রাজ্য সিনেটর অ্যান্থনি ইম্পেরিয়ালের নির্দেশে তাঁরা চুরিটি করেছিলেন।
ফেস্টা আরও জানান, তাঁরা তিন চোর মিলে অ্যান্থনি ইম্পেরিয়েলের বাগানবাড়িতে গিয়েছিলেন। পরে ইম্পেরিরিয়েলই তাঁদের জানান চিত্রকর্মটি উডের বাসভবনের ঠিক কোন জায়গাটিতে অবস্থান অবস্থান করছে। ইম্পেরিয়ালের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ কখনোই আমলে নেওয়া হয়নি।