মিশিগান সফরে প্রকাশ্যে এলো বাইডেনের আরব-আমেরিকানদের বিরোধ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৪

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মিশিগান সফরে আরব-আমেরিকান ভোটারদের সঙ্গে উত্তেজনা প্রবল হয়ে উঠেছে। গাজা পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে অঙ্গরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব-আমেরিকান জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সফরে এই জনগোষ্ঠীর মানুষদের বসবাস থাকা ডিয়ারবোর্নে যাননি তিনি। এমনকি এই সম্প্রদায়ের কোনও নেতার সঙ্গে বৈঠকও করেননি। তার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন না প্রতিবেশী জেলা থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি রাশিদা তালেব। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য হিল এ খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মিশিগান সফরে গিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাইডেন। এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন এক রেস্টুরেন্টের মালিকের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। ডেট্রয়টে ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স (ইউএডব্লিউ)-এর হলে তিনি বক্তব্যও দিয়েছেন।
২০২০ সালের নির্বাচনে ইউনিয়ন সদস্যদের মধ্য থেকে ১৪ শতাংশ পয়েন্ট পেয়ে জিতেছিলেন বাইডেন; যেখানে ৮৭ শতাংশই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার। কিন্তু গাজা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনার মুখে এবারের নির্বাচনে জয় নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন তিনি। নভেম্বরের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে পারেন তিনি।   
এবারের সফরে বাইডেন ডিয়ারবোর্নে যাননি। যদিও সেখানে আরব-আমেরিকানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারপরও কোন আরব-আমেরিকান নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি বাইডেন। গাজা যুদ্ধের সবচেয়ে স্পষ্টবাদী সমালোচক রাশিদা তালেব তার সফরসঙ্গী হননি। এছাড়া বাইডেনের সফরের প্রতিবাদে বুধবার রাতেই ডিয়ারবোর্নে জড়ো হয়েছিলেন কিছু মানুষ। এসময় তারা ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়াচ্ছিলেন এবং ‘বাইডেন নিপাত যাক’ স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন। 
হোয়াইট হাউজ প্রকাশিত সফরসূচিতে নির্দিষ্ট এলাকার নাম উল্লেখ না করে ডেট্রয়েটের মেট্রোপলিটন এলাকা সফর করার কথা বলা হয়েছিল। এই স্পষ্টতার অভাব বা এর কোনও কারণ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ক্যারিন জ্যেন-পিয়েরে সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্দিষ্ট কোনও উদ্বেগ সম্পর্কে তিনি অবগত নন। বিস্তৃতভাবে আমি বলতে চাই, হামাস-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতধারী আমেরিকানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট। মিশিগান ও দেশের মুসলিম-আরব আমেরিকান নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা। 
তিনি আরও বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা আসন্ন দিনগুলোতে মিশিগান সফর করবেন। এ সময় তারা ইসরায়েল ও গাজার সংঘাতসহ তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সরাসরি শুনবেন।
হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলকেই সমর্থন দিয়েছেন এবং গাজায় ত্রাণ সরবরাহ, জিম্মি মুক্তি এবং বেসামরিক নাগরিকদের নির্যাতন বন্ধে ইসরায়েলকে অনুরোধের পরিবর্তে যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারপর থেকেই বাইডেনের ওপর নাখোশ মুসলিম ভোটাররা। এখনও তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে।
এপির এক বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাইডেন ৬৪ শতাংশ মুসলিম ভোট পেয়েছিলেন, যেখানে ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩৫ শতাংশ। আর গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর, অক্টোবরে আরব-আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের সমর্থন ১৭ শতাংশে নেমে আসে।
আরব-আমেরিকান ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন তারা কাকে ভোট দেবেন তা নিশ্চিত নয়। এমনকি গত সপ্তাহে মিশিগান সফরের সময় বাইডেনের প্রচার ব্যবস্থাপক জুলি শ্যাভেজ রদ্রিগেজের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেছিলেন কিছু মানবাধিকার কর্মী।
মিশিগান একটি গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য। ২০২০ সালে এখানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এক লাখ ৫৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন বাইডেন। তবে সম্প্রতি রাজ্যের এক ভোটাভুটিতে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ৫ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন তিনি।