ডেস্ক রিপোর্ট
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০ সালের দুই প্রার্থী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যেই হবে এবং আগের মতো ক্ষমতাসীনের বিদায় ঘটবে বলে অনেকে ধারণা করছে। যদিও অধিকাংশ আমেরিকান তাদের কাউকে নিয়েই খুব উৎসাহী নয়। পরপর দুটি নির্বাচনে একই প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা (যদি এবার হয়) একটি বিরল ঘটনা। দেশটিতে নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থীর ফের দাঁড়ানো স্মরণকালের ইতিহাসে নেই। যদি তাই হয় এবং ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউজে যান তবে সেটা সে দেশের জন্য যেমন তেমনি অন্য অনেক দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কী ঘটতে পারে দেখা যাক। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অর্থ ও নারীসহ নানা ধরনের কেলেংকারির অভিযোগ রয়েছে। তিনি একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন যা দেশের অর্থনীতির অনুকূলে হলেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুকূলে নয়। লক্ষণীয়, রিপাবলিকান পার্টি প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে এমন এক প্রার্থী বেছে নিচ্ছে যিনি গণতান্ত্রিক রীতিনীতির তোয়াক্কা করেন না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, নারীর অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিটি ইস্যুতেই যিনি ভিন্নমত পোষণ করেন। বাইডেনের সাফল্য-ব্যর্থতা যাই থাক তিনি ট্রাম্পের পথে দেশকে নিয়ে যাননি। তবে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তিনি ট্রাম্পের পুরোপুরি উলটোপথে হাঁটেননি।
অনেকের আশঙ্কা, ট্রাম্প আসলে তিনি দেশের খোল-নলচে বদলে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আগের থেকে কিছুই অনুমান করা যায় না। তিনি ছিলেন ন্যাটোবিরোধী যা দেশটির ইউরোপের মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক দূরত্ব তৈরি করেছিল। তবে দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হলে তিনি যে ঠিক তাই করবেন তাও বলা যায় না। হতে পারে তিনি বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। ইউক্রেন, চীন ও মধ্যপ্রাচ্য-এই তিনটি এখন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রধান ইস্যু। এই ইস্যুগুলোতে দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি কী তার ওপর দেশটির ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতি অনেকটা নির্ভর করে।
বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শুরু থেকে ব্যস্ত আছে। রিপাবলিকান পার্টির অনেকে মনে করেন কিয়েভের পক্ষ যুদ্ধে জেতা বা রাশিয়ার কাছে বেহাত হওয়া ভূখণ্ড পুনর্দখল করা সম্ভব নয়। ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রত্যাহার করে নেবেন। ইউক্রেন পুরোপুরি ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। ট্রাম্প স্পষ্ট বলেছেন, তিনি এক দিনে যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তিনি ক্ষমতায় এলে এই ক্ষেত্রে মার্কিন নীতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটবে। বাইডেন যদি দ্বিতীয় মেয়াদে টিকে যান তাহলে কী হবে তা নিশ্চিত বলা যায় না। হতে পারে তিনি বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখবেন অথবা ভিন্ন কিছু করবেন তবে সে সম্ভাবনা কম। আগের নির্বাচনে ইস্যুটি ছিল না। বাইডেনকে নির্বাচনের আগেই কিছু একটা করতে হবে যেন ভোটাররা বুঝতে পারে যুদ্ধ এখনো ইউক্রেনের অনুকূলে। করদাতাদের দেওয়া অর্থ যে বেকার যাচ্ছে না সেটা প্রমাণ করতে হবে। ইতিমধ্যেই আটকে দেওয়া রাশিয়ার সম্পদ থেকে ইউক্রেনকে সহায়তা করার কথা বাইডেন প্রশাসন বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চীনের সঙ্গে অঘোষিত বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে ছিলেন। অনেকের ধারণা, সেটা যথেষ্ট বিবেচনাপ্রসূত ছিল না। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমেনি। চীনের বিভিন্ন পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। বাইডেন সেই নীতি থেকে সরে যাননি। চীনে রপ্তানির ওপর তার প্রশাসনও বিধিনিষেধ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে চীনের অগ্রসরমান প্রযুক্তি খাত এর টার্গেট ছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের কারণ দেখিয়েছেন যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। ভবিষ্যতে যিনিই ক্ষমতায় আসুন, চীনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি খুব বেশি হেরফের হবে বলে মনে হয় না।
একইভাবে মধ্যপ্রাচ্য নীতিতেও উল্লেখযোগ পরিবর্তন আশা করা যায় না। সামান্য কিছু পরিবর্তন হতে পারে। চলমান ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ যেন আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ না নেয় সে ব্যাপারে ওয়াশিংটন অবশ্যই সতর্ক থাকবে। অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্য মানেই তেলের ঊর্ধ্বমূল্য, বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থিরতা ও মুক্ত বিশ্বের প্রতি আস্থার সংকট। ট্রাম্প এর আগে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করেছিলেন। ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি কাউন্সিলর অফিস বন্ধ করে দেন। এছাড়া আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মতো কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে আশপাশের আরব দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন শুরু করেছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্থাপিত হলে বাইডেন প্রশাসন সেটা নিজের কৃতিত্ব হিসেবে ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে পারত। কিন্তু গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি হামলা হিসাবনিকাশ পালটে দিয়েছে। এই যুদ্ধ তার হোয়াইট হাউজ থেকে তার বিদায়ের সূচন্য করতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রত্রিয়া পুনরুজ্জীবনে তার প্রশাসনের কোনো আগ্রহ ছিল না, যেমনটা ছিল না ট্রাম্প প্রশাসনের। লক্ষণীয়, তাদের দুজনের পররাষ্ট্রনীতিতে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। ইউরোপ ও কিছু বৈশ্বিক ইস্যু বাদ দিলে উভয়ের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।