যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব বাতিলে অভিযান জোরদার হচ্ছে 

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৩


অভিবাসনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যারা মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের নাগরিকত্ব পুনঃপরীক্ষা করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ন্যাচারালাইজড মার্কিন নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করার পরিকল্পনা করছে। নিউইয়র্ক টাইমস-এর হাতে আসা অভ্যন্তরীণ নির্দেশনার উদ্ধৃতি দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে প্রশাসনের এমন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন দমন নীতির একটি নতুন ও আরও আক্রমণাত্মক ধাপ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)-এর মাঠপর্যায়ের দপ্তরগুলোতে পাঠানো নির্দেশনায় ২০২৬ অর্থবছরে প্রতি মাসে ১০০ থেকে ২০০টি ডিন্যাচারালাইজেশন মামলা বিচার বিভাগের অফিস অব ইমিগ্রেশন লিটিগেশনে পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণ হলে আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা নজিরবিহীনভাবে বেড়ে যাবে। তুলনামূলকভাবে, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বিচার বিভাগে এ ধরনের মামলা হয়েছে মোট ১২০টির কিছু বেশি।
ফেডারেল আইন অনুযায়ী, নাগরিকত্ব পাওয়ার সময় প্রতারণা বা কিছু নির্দিষ্ট ও সীমিত পরিস্থিতিতেই কেবল কাউকে নাগরিকত্বচ্যুত করা যায়। তবে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ট্রাম্প প্রশাসন বৈধ ও অবৈধ—উভয় ধরনের অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সব ধরনের আইনি উপায় প্রয়োগে আগ্রহী। এতে অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, কাগজপত্রে অনিচ্ছাকৃত বা সামান্য ভুল থাকা সত্ত্বেও অনেক মানুষ হয়রানির শিকার হতে পারেন।
এই নির্দেশনা এমন এক সময়ে এলো, যখন ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন পথ সংকুচিত করছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশে বাধা, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে আশ্রয় আবেদন সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা এবং প্রধানত আফ্রিকান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা। প্রশাসনের দাবি, এসব পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তা ও মার্কিন মূল্যবোধ রক্ষায় সহায়ক।
ইউএসসিআইএসের মুখপাত্র ম্যাথিউ জে. ট্রাগেসার *নিউইয়র্ক টাইমস*-কে বলেছেন, অবৈধভাবে নাগরিকত্ব অর্জনকারীদের চিহ্নিত করা সংস্থার প্রতারণাবিরোধী কর্মসূচির অংশ। তার ভাষায়, যারা নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ায় মিথ্যা বলেছেন বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে সাবেক ইউএসসিআইএস কর্মকর্তাদের একটি অংশ এই উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সাবেক কর্মকর্তা সারা পিয়ার্স বলেন, মাসিক কোটা নির্ধারণ করে নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টা এই প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক রূপ দিতে পারে এবং লাখ লাখ ন্যাচারালাইজড নাগরিকের মধ্যে অকারণ ভয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে, কঠোর অভিবাসন নীতির সমর্থকেরা বলছেন, ভুলভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে আরও শক্ত অবস্থান নেওয়া জরুরি। সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের প্রধান মার্ক ক্রিকোরিয়ানের মতে, এখনো পর্যাপ্ত সংখ্যায় ডিন্যাচারালাইজেশন হয়নি এবং এতে নির্দোষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ ন্যাচারালাইজড নাগরিক রয়েছেন। গত বছর ৮ লাখের বেশি মানুষ নতুন নাগরিকত্ব পেয়েছেন, যাদের বেশিরভাগের জন্ম মেক্সিকো, ভারত, ফিলিপাইন, ডোমিনিকান রিপাবলিক বা ভিয়েতনামে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের কঠোর মানদণ্ডের কারণে বাস্তবে কাউকে নাগরিকত্বচ্যুত করা এখনো কঠিন প্রক্রিয়া। তবুও, নাগরিকত্ব বাতিলের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর এই পরিকল্পনা ন্যাচারালাইজড মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।