যুক্তরাষ্ট্রে ইনফ্ল্যাশন (মুদ্রাস্ফীতি) চলছে। এই ইনফ্ল্যাশনের কারণে মানুষের কষ্ট দিন দিন বাড়ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম। গ্যাসের দাম বাড়ার পর কিছুটা কমতে শুরু করলেও তা এখনো নাগালের বাইরে। ইনফ্ল্যাশন কমাতে এবং সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে ফেডারেল সরকার। এজন্য সিনেটে পাস করা হয়েছে ইনফ্ল্যাশন রিডাকশন অ্যাক্ট ২০২২। এই আইন পাস করার পরে অন্যান্য যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এটি প্রেসিডেন্টের
স্বাক্ষরের জন্য তার কাছে পাঠানো হবে। প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর আইনটি কার্যকর করা হলে তা ইনফ্ল্যাশন কমার বিষয়ে সহায়ক হবে বলে বাইডেন প্রশাসন আশাবাদী। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে গত ৭ আগস্টডেমোক্র্যাটরা জলবায়ু ও কর সংক্রান্ত আইন অনুমোদন করেন। ৫১-৫০ ভোটে এটি পাস হয়। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনেটের ৫০ জন সদস্য ভোট দেন। এই আইনটি পাস করার জন্য সিনেটে সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রয়োজন ছিল। ভাইস প্রেসিডেন্ট একটি ভোট দিয়ে আইনটি পাস করেন। এখন এটি প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের জন্য যাবে। প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর এটি কার্যকর করা হবে। আইনটি পাস হওয়ার পর সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এই আইনটি পাস করার মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটরা অনেকটাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। কারণ এটি পাস করার জন্য অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চলছিল। আইনটি পাস হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট একটি বিবিৃতি দেন। ৭ আগস্ট রবিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিলটির প্রতি সমর্থন দেয়ায় সিনেট ম্যাজরিটি লিডার চাক শুমার এবং সিনেট ডেমোক্র্যাটিক ককাসের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান। এর জন্য যে সমঝোতার প্রয়োজন ছিল সেটিও তুলে ধরেন। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে যে সমঝোতার প্রয়োজন হয় সেই বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
সিনেট ডেমোক্র্যাটরা অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে এটি পাস করতে চাইছিলেন । তবে এই বিলে রিপাবলিকানদের সমর্থন ছিল না। শেষ পর্যন্ত সকল বিরোধিতা মোকাবিলা করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, স্বাস্থ্য সেবার খরচ কমানো এবং বেশি লাভজনক কর্পোরেশনগুলোর ওপর কর বাড়াতে ও ফেডারেল ঘাটতি কমানোর জন্য আইনটি অনুমোদন দেন। ১৫ শতাংশ পর্যন্ত করারোপ করা হয়েছে।
আইনটি পাস করার আগে ৬ আগস্ট শনিবার রাতে সেখানে কয়েক ঘণ্টার বিতর্ক হয়, পাশাপাশি রবিবার বিকেলের অধিবেশেনে এটি পাস করা হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের টাই-ব্রেকিং ভোটে ৫১-৫০ ভোটের ব্যবধানে অর্থাৎ এক ভোটের ব্যবধানে এটি সংক্ষিপ্তভাবে পাস হয়। এটি পাস হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্টসহ ডেমোক্র্যাটিকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সিনেট সদস্যরা এই সময়ে চেম্বারের বাইরে চলে গিয়েছিলেন।
এই আইনের মাধ্যমে জলাবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন হচ্ছে এর প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য বড় ধরণের বিনিয়োগ করবে। এরই অংশ হিসেবে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করা হবে, বৈদুতিক যান কেনার জন্য উৎসাহিত করা হবে, ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্প স্থাপনার তাপ নির্গমন ৪০ শতাংশ হ্রাস করা হবে। এই খাতে ৩৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। সরকারকে ওষুধের দামের বিষয়ে ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির সাথে আলোচনা করার সুযোগ দিবে। আলোচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে ওষুধের দাম যাতে কমানো সম্ভব হয় সেটি সম্ভব হবে। পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বীমা খাতে ভর্তুকি দেয়া যায় তা দেখবে। এছাড়াও ইনফ্ল্যাশনের কারণে যে অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিলিয়ন ডলার মূল্যের কোম্পানিগুলোর ওপর ন্যূনতম ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা যায়। এই কর আরোপ করা হলে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।
এদিকে ইনফ্ল্যাশনের প্রভাব কাটানোর লক্ষ্যে পাশাপাশি আয় বাড়ানোর জন্য সরকার আইআরএসকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিবে। আইআরএস যাতে আরও বেশি সংখ্যক ফাইলের অডিট করতে পারে এবং অডিট করার পর যদি আইআরএস এর অর্থ পাওনা থাকে তা আয় করতে পারে সেই ব্যাপারে চেষ্টা করবে। বর্তমানে লোকবল সংকটসহ বিভিন্ন কারণে আইআরএস যেসব ফাইলে অডিট করা প্রয়োজন মনে করে সব সময় তা করতে পারে না। আগামী দিনে যাতে করতে পারে সেই জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। আইআরএসও আশাবাদী অডিট করার জন্য অর্থ পেলে যে পরিমাণ অর্থ দিবে এরচেয়ে বেশি ডলার তারা পাওনা কর থেকে আদায় করতে পারবে। আইআরএসকে শুরুতে ৮০ মিলিয়ন ডলার দিতে পারে। আর সেটি দিলে তা এর বেশে অর্থ অডিট করে আনতে পারবে। এছাড়াও লোকবল বাড়ানোসহ কর্মপরিধি বাড়াতে পারলে আগামী দিনে আরও বেশি সেবা দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে এই আইনটি কার্যকর হলে অর্থনীতির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।