সেনা সমর্থিত নেওয়াজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই

পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৮
নওয়াজ শরিফের দল ৭১ ইমরান খান সমর্থিত ৯৯

কারাবন্দি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বৃহস্পতিবারের সাধারণ নির্বাচনে নিজের বিজয় দাবি করে তার সমর্থকদের উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ঘোষিত ২৫০ আসনের ফলাফলে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ আসন- ৯৯টিতে জয়ী হয়েছে। নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) জয় পেয়েছে ৭১ আসনে এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৩ আসন। এ ছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ১০টি আসন।
স্বতন্ত্রদের নির্দিষ্ট কোনো দল না থাকায় আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেন, তার দল সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি অন্য দলগুলোকেও তার জোটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত কোনো দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথে দেখা যাচ্ছে না। যদিও চূড়ান্ত ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করা একটি ভিডিও বার্তায়, ইমরান দাবি করেছেন- তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন সত্ত্বেও তাদের ঐতিহাসিক বিজয় হয়েছে। তার দাবি, তিনি 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা একমত যে, যেখানে দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনী সমর্থিত নওয়াজ শরীফকে বিজয়ী ধরেই নেওয়া হয়েছিল,  সেখানে পিটিআই-সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের এমন সাফল্য অপ্রত্যাশিত।
পিটিআইকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে এই দলের স্বীকৃতি নেই। তাই এক হিসাবে নওয়াজের পিএমএল-এন এখন বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সুতরাং, সরাসরি বিজয় দাবি করতে যে-কোনো দলেরই এখনও কিছু সময় লাগতে পারে।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক বক্তৃতায় নওয়াজ স্বীকার করেছেন যে, তার একা সরকার গঠনের মতো আসন নেই। কিন্তু লাহোরে পিএমএল-এনের সদর দপ্তরের বাইরে সমর্থনের কথা উল্লেখ করে তিনি অন্য প্রার্থীদের তার সাথে জোটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। ভাষণে তিনি কঠিন সময় থেকে দেশকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দেন।
শুক্রবার বিবিসির নিউজনাইট অনুষ্ঠানের সাথে কথা বলার সময়, ইমরান খানের সাবেক বিশেষ সহকারী জুলিফকার বুখারি বলেছেন: "ইমরান খান এবং আমাদের রাজনৈতিক দল পিটিআই-এর নীতি সম্পর্কে যতটুকু জানি, আমার মনে হয় না যে আমরা কোনো জোট করব বা প্রধান দলগুলোর কোনো জোটের সাথে সরকার গঠন করব। তবে, সংসদে থাকার জন্য আমরা একটি জোট গঠন করব যা স্বতন্ত্র হিসেবে নয়; এক ব্যানারে, এক দলের অধীনে হবে।
এদিকে যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের ফলাফলের পাশাপাশি  ভোটের স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, যুক্তরাজ্য পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে তথ্যের অবাধ অধিকার, আইনের শাসন এবং মৌলিক মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে, তিনি সব দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি না দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার পাকিস্তানের নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলাকালীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা, জোট গঠন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের উপর অযাচিত বিধিনিষেধ আরোপের সমালোচনা করেছেন।
তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হিসাবে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর আক্রমণ এবং ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ পরিষেবার উপর নিষেধাজ্ঞাকে উল্লেখ করেছেন।
অনেক বিশ্লেষক বলেছেন যে এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে কম বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।
লাহোরের ভোটাররা বলেছেন, ভোটের দিন ইন্টারনেট বন্ধ করার অর্থ হলো, ভোট দেওয়ার জন্য যাতে ট্যাক্সি বুক করা না যায়। কেউ কেউ বলছেন, পরিবারের সদস্যদের সাথে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময় সমন্বয় করতে পারেননি তারা।
পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর সমর্থনকে রাজনৈতিকভাবে সফল হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখা হয় এবং বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন, অতীতে তাদের মতপার্থক্য থাকলেও নওয়াজ শরীফ এবং তার দলের প্রতি সমর্থন রয়েছে সামরিক বাহিনীর।
ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের ব্লাভাটনিক স্কুল অফ গভর্নমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক মায়া টিউডর বলেছেন, ইমরান খানের পিটিআই এই নির্বাচনে যা দেখিয়েছে, দেশের অতীত প্রেক্ষাপটে তা চমকপ্রদ। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্য প্রতিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী জিতেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি বলেছেন, পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট যাচ্ছে এখন। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে, পাকিস্তানের ভোটাররা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে।