আমেরিকার অভিবাসনের আবেদন

এবার মাত্র তিন শতাংশ লোক গ্রিন কার্ড পাবেন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৩৭

আমেরিকার অভিবাসন ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। নিয়মিত অভিবাসনের স্বাভাবিক পথ বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। সীমান্ত দিয়ে আসা নথিপত্রহীন লোকজন আর রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের স্তূপ এখন পাহাড়সম। নিয়মিত অভিবাসীদের মধ্যে এবছরে আবেদনকারীদের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশ লোকজন গ্রিন কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন অভিবাসন বিভাগের সূত্র অনুযায়ী বছরের শুরুতেই প্রায় সাড়ে তিন কোটি গ্রিন কার্ডের আবেদন পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে।
মার্কিন ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী বৈধ অভিবাসনের জন্য বছরে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা রয়েছে। যদিও কোন কোন বিশেষ ক্যাটাগরিতে এমন সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা নেই। সবমিলে ২০২৪ অভিবাসী বর্ষে মাত্র ১১ লাখ গ্রিন কার্ড ইস্যু করতে পারবে মার্কিন অভিবাসন বিভাগ। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত অভিবাসী হিসেবে আবেদনকারীর ৯৭ শতাংশই এবছরে তাদের গ্রিন কার্ড হাতে পাবে না।
১৯২০ সালের পর থেকে মার্কিন ইমিগ্রেশন বিভাগ কৌটা নির্ধারণ করে অভিবাসনের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে আসছে। সময়ে সময়ে আমেরিকায় অভিবাসীদের চাহিদা বেড়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি পরিকল্পিত উপায়ে যায়নি। মহামারি সময় পেরিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতিতে নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। চেষ্টা করেও আমেরিকার স্থল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অভিবাসী প্রবাহ সামাল দেয়ার জন্য চলমান অভিবাসন আইন একটি বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন ইমিগ্রেশন নিয়ে কাজ করা লোকজন দীর্ঘদিন থেকে নানা পরামর্শ দিয়ে আসছেন। আবেদন করা গ্রিন কার্ডগুলোকে সরাসরি ইস্যু করে জট কমিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে কংগ্রেস উদ্যোগই হয়ে আইন প্রণয়ন না করা হলে কিছুই হবে না। অভিবাসন নিয়ে রাজনীতি করে একে অপরকে ঘায়েল করার অশুভ চক্র চলমান রয়েছে। যদিও এখন কংগ্রেসকে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী উঠেছে সব মহল থেকে।
আমেরিকার সবচেয়ে পরিচিত অভিবাসন পদ্ধতি হচ্ছে পারিবারিক অভিবাসন। পারিবারিক অভিবাসনে গ্রিন কার্ডের জন্য ৮৩ লাখ আবেদন পড়ে আছে। চলতি বছরে এর মাত্র ৮ শতাংশের হাতে গ্রিন কার্ড পৌঁছবে। বাকিগুলো পেন্ডিং আবেদনের স্তূপে জমা পড়ে বিলম্ব হতেই থাকবে। কোনো-কোনো আবেদনকারীর জীবন চলে যাবে গ্রিন কার্ড পাওয়ার আসায়। লাখ লাখ আবেদনকারী  নিকটাত্মীয়ের জন্য আবেদন করে মারা যাবেন। আবেদনকারীর মৃত্যুর সাথে সাথে নিকটাত্মীয়ের জন্য অভিবাসন আবেদনেরও মৃত্যু ঘটবে।
পারিবারিক অভিবাসন প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমভাগে বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করা। এর মধ্যে গ্রিন কার্ডধারীদের স্পাউস এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান ছাড়াও মার্কিন নাগরিকের প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান ও ভাইবোনের ক্যাটাগরি রয়েছে। দেশ অনুযায়ী এসব ভিসার সর্বমোট বার্ষিক ২ লাখ ২৬ হাজার ভিসা প্রদান করা হয়। পারিবারিক অভিবাসনের অন্য ভাগটি হচ্ছে কোন কৌটা ছাড়া। এ ভাগে রয়েছে মার্কিন নাগরিকের স্পাউস, মামা বাবা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানরা। মার্কিন অভিবাসন বিভাগ অভিবাসনের কৌটাহীন খাতের গ্রিন কার্ডও ইস্যু করতে সক্ষম হয় না। ৮৩ লাখ পারিবারিক অভিবাসন আবেদন পেন্ডিং থাকার ফলে কোণ কোন ক্যাটাগরিতে অপেক্ষার জন্য এখন আমৃত্যু অপেক্ষা করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
আমেরিকার অভিবাসন ব্যবস্থাকে খুবই উদার বলা হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। পাশের দেশ কানাডার সাথে মিলিয়ে দেহলে দেখা যাবে অভিবাসী জনগোস্টির গড় অনুপাতের মধ্যে অনেক ফাঁক রয়েছে। এখনো আমেরিকা পশ্চিমা বহু উন্নত দেশের সংখ্যা অনুপাতে অল্প লোকেরই অভিবাসন নিশ্চিত করতে পেরেছে। যদিও আমেরিকার আদি জনগোস্টির মধ্যে সংখ্যা হ্রাস চলছে। আমেরিকার শরম বাজারে অভিবাসীদের চাহিদা এখন তীব্র। অর্থনীতি চালু রাখার জন্যই বাজারে শ্রমিকের যোগান আসছে অভিবাসীদের কাছ থেকেই।
একটি নিয়ন্ত্রণহীন অভিবাসন ব্যবস্থা শত বছর থেকে আমেরিকার সমাজে নানা অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে। সারে তিন কোটি গ্রিন কার্ডের  আবেদন সুরাহা করার উপায় এখন খুঁজতে হচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে এ কাজ সহজ বলে কোনো পক্ষই মনে করেন না। বিরাজমান মার্কিন অভিবাসন আইনও এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ দেখায় না। আমেরিকার সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, এমন অভিবাসীদের গ্রিন কার্ডের আবেদন ঝুলিয়ে না রেখে আগ্রাসী পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্যই এখন আইন প্রণেতাদের উপর চাপ বাড়ছে।