পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র দেশ হিসেবে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারবে কি না , এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনকে সতর্ক করেছে। ১১ মার্চ সোমবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের বার্ষিক হুমকি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা এসেছে।
বৈশ্বিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিবিষয়ক ওই প্রতিবেদনে সাবধান করা হয়েছে যে চীন, ইরান ও রাশিয়া বর্তমান আন্তর্জাতিক বিধিবিধানভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মহলের সামগ্রিক উপলব্ধি প্রতিফলিত হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধবান ভঙ্গুর বিশ্বব্যবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে। বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ ব্যবস্থা নাজুক হচ্ছে। তা ছাড়া আন্তঃদেশীয় চ্যালেঞ্জ ও আঞ্চলিক সংঘাতও এর পেছনের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। চীন ও রাশিয়ার হুমকির আলোকে ওই প্রতিবেদনে ইউক্রেনে রুশ অভিযানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাত বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও কথা বলা হয়েছে তাতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চাভিলাষী ও উদ্বিগ্ন চীন, সংঘাতপ্রবণ রাশিয়া, আঞ্চলিক কিছু শক্তি—যেমন ইরান এবং আরও সক্ষম কিছু অরাষ্ট্রীয় গোষ্ঠী বিশ্বব্যবস্থার নিয়মনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্বও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। মার্কিন গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়া যখন যুদ্ধে লিপ্ত, তখন মস্কোকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক সহায়তা দিচ্ছে চীন। রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ছে। রাশিয়ায় সামরিক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে—চীন থেকে এমন সব পণ্যের রপ্তানি ২০২২ সাল থেকে তিন গুণ বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে আরও সামরিক সহায়তা পাঠানোর অনুমোদন দিতে মার্কিন আইপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক এভ্রিল হেইন্স। মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটিকে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের আরও সহায়তা ছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে পুনর্দখল করা অঞ্চলগুলো ইউক্রেন কীভাবে ধরে রাখবে, তা ‘কল্পনা করাও কঠিন’।
যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে চীন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের কোনো না কোনো পর্যায়ে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করতে পারে চীন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে বেইজিংয়ের সমালোচকদের ক্ষমতা থেকে সরানো এবং মার্কিন সমাজে বিভাজন বাড়ানোর অভিলাষ রয়েছে দেশটির।
এদিকে ইউক্রেনে আরও ৬০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাঠানোর একটি বিল অনুমোদনে ভোটাভুটি আয়োজনের বিষয়ে এখনো সম্মতি দেননি মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান পার্টির স্পিকার মাইক জনসন। যদিও বিলটি এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাট পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা উচ্চকক্ষ সিনেটে অনুমোদন পেয়েছে। ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তার ওপর জোর দিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিচালক উইলিয়াম বার্নস সিনেটে বলেছেন, ইউক্রেনকে সহায়তা চালিয়ে গেলে তা তাইওয়ান বা দক্ষিণ চীন সাগরে আগ্রাসন চালানোর বিষয়ে চীনকে একটি বার্তা দেবে।
গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে বিশ্বে নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক এভ্রিল হেইন্স। তিনি বলেন, আঞ্চলিক কোনো ঘটনা কীভাবে আরও বড় কিছুতে পরিণত হওয়ার, এমনকি বৈশ্বিকভাবে প্রভাব ফেলার আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে, তার স্পষ্ট উদাহরণ গাজা সংকট।
ফিলিস্তিনের শিশুদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এভ্রিল হেইন্স বলেন, বাস্তবতা হলো সেখানে শিশুরা অনাহারে রয়েছে। উপত্যকাটিতে তাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। এ কারণে তারা অপুষ্টিতে ভুগছে। যুদ্ধবিরতি ছাড়া সেখানে কার্যকরভাবে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো খুবই কঠিন। ইসরায়েলের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন নিয়ে কঠোর নীতি এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলোর কারণে একজন নেতা হিসেবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং কট্টর ডানপন্থী দলগুলোকে নিয়ে তাঁর জোট সরকার বিপদের মুখে পড়তে পারে।
মার্কিন প্রতিবেদনে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ‘যুদ্ধ শুরুর আগেই নেতানিয়াহুর শাসনক্ষমতা নিয়ে ইসরায়েলের মানুষের মধ্যে উচ্চমাত্রার অবিশ্বাস ছিল। এখন তা আরও বেড়েছে। আমরা ধারণা করছি, তাঁর পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে দেশটিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ–সমাবেশ হবে। দেশটিতে একটি ভিন্ন এবং আরও মধ্যপন্থী একটি সরকারের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’