নিউইয়র্কের সাবওয়েতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন

অপরাধ করলে ৩ বছর ট্রেনে নিষেধাজ্ঞা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ১২:৩০

নিউইয়র্কের সাবওয়ে ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ৬ মার্চ বুধবার তাদের বিশ্বের বৃহত্তম সাবওয়ে সিস্টেমে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। যারা সন্দেহের ক্ষেত্রে যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশী করবে। এই আদেশ জারি করার কিছু সময় পরই স্টেট গভর্নর ক্যাথি সি হকুল গত বুধবার ভিন্ন এক আদেশ জারি করেছেন যে ন্যাশনাল গার্ড যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশী করবে, তবে তারা তাদের সঙ্গে বড় আকারের বা দীর্ঘ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবে না। নতুন এই ব্যবস্থার সমন্বয় করবে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নরের অফিস। গভর্নরের একজন মুখপাত্রের মতে, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে সিটি সাবওয়েতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করার আদেশ বাস্তবায়নের জন্য বুধবার গভর্নর হকুল এই পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশীকালে দীর্ঘ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। তবে যারা সাবওয়ে স্টেশনে ব্যাগ তল্লাশীর কাজে নিয়োজিত থাকবে না, ন্যাশনাল গার্ডের সেইসব সদস্যকে সম্ভবত দীর্ঘ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার অনুমতি দেওয়া হবে।
সম্প্রতি সিটির সাবওয়ে ভেতরে হত্যাকান্ড, গোলাগুলি ও সাধারন যাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিউইয়র্ক স্টেট এ পদক্ষেপ নিলো। এমটিএ পুলিশ ও সিটির ২ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ অফিসার সাবওয়ে সিস্টেমে নিয়োগ করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছিল না। ফেব্রুয়ারিতে ব্রংকসে ৪ ট্রেন লাইনে প্রকাশ্য দিবালোকে সাবওয়ের প্লাটফরমের ওপর বন্দুক যুদ্ধ হয়েছে। এতে ২ জন প্লাটফরমেই মারা যান। যাত্রীরা দিনদিন বাস ও ট্রেন বিমুখ হয়ে পড়ছেন। সাবওয়েগুলোর শতকরা ২৫ ভাগ দখল করে রাখেন হোমলেসরা। যাত্রীরা বাস ট্রেনে উঠে অস্তিকর পরিবেশে পড়েন। এমতাবস্থায় গর্ভনর ৭৫০ জন ন্যাশনাল গার্ড ও ২৫০জন স্টেট পুলিশ নিয়োগের নির্দেশ দিলেন। তারা প্রয়োজনে ব্যস্ততম স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশীও করবেন।
গর্ভনর গত ৬ মার্চ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, যাত্রীরা কাজে যাবেন, আত্মীয়স্বজন কিংবা ডাক্তারের কাছে যাবেন। কিন্তু ট্রেনে ওঠার পর যদি তাদের মনে হয় পাশে বসা যাত্রীর কাছে অস্ত্র রয়েছে। যেকোন সময় তিনি অঘটনের শিকার হতে পারেন। এমন দুঃসহ চিন্তা নিয়ে মানুষ সাবওয়েতে উঠতে চাইবে না। ভয়মুক্ত সাবওয়ের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রতি সাবওয়ের ভেতর যেভাবে সাধারন মানুষের রক্ত ঝরেছে তা আর বরদাস্ত করা হবে না। এইতো সেদিন ৬৪ বছর বয়স্ক একজন নিউইয়র্কারকে পেন স্টেশনে ট্রাকের ভেতর ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া হলো। ২৭ বছর বয়সের একজনকে ম্যানহাটনে এ ট্রেনের ভেতর চাকু দিয়ে আঘাত করা হলো। ২৯ বছর বয়স্ক ট্রেন কন্ডাক্টরের ঘাড়ে চাকু মারা হলো। সাবওয়ের ভেতর ভয় ও রক্ত ঝরার পরিবেশ বন্ধ করতে যা প্রয়োজন তা করা হবে। গর্ভনর বলেন, আমি একটি আইন প্রনয়ন করা উদ্যোগ নিচ্ছি যাতে ক্রিমিনালরা সাবওয়ের উঠতে পারবে না। তারা সাবওয়েতে নিষিদ্ধ থাকবে। একই সাথে ডিডব্লিউআই নেয়ায় অভিযুক্ত ড্রাইভাররা আর হুইলের পেছনে বসতে পারবে না। নতুন এই আইন অনুসারে ‘কেউ সাবওয়ের ভেতর অন্য কাউকে আঘাত করলে হামলাকারি ৩ বছরের জন্য সাবয়েতে নিষিদ্ধ হবে। কোনভাবেই আর ট্রেন স্টেশনে ঢুকতে পারবে না।
এমটিএ সিইও জানো লাইবার বলেছেন, ২০২৩ সালে সাবওয়ের কর্মচারিদের ওপর হামলার অপরাধে ৩৮ জন গ্রেফতার হয়েছিলো। তদন্ত করে দেখা যায় তারা ৬০০ বার ক্রাইমের জন্য গ্রেফতার হয়েছিলো। অপরাধীর সংখ্যা খুবই কম। কিছু অপরাধীই ঘুরেফিরে অপরাধ করে থাকে। তাদের নিয়ন্ত্রন করতে পারলেই ক্রাইম কমে আসবে। মডার্ন টেকনোলোজি ব্যবহার করে সাবওয়ে ক্রিমিনালদের দূরে রাখা সম্ভব। আমরা তা প্রয়োগের দিকেও এগুচ্ছি।
নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিচালক ডোনা লিবারম্যান ব্যাগ তল্লাশী করার স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে এক ধরনের ‘স্বস্তি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, গার্ডের ভূগর্ভস্থ উপস্থিতি ভীতির ওপর ভিত্তি করে গৃহীত অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া।’ তিনি আরো বলেন, সাবওয়েতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করার ফলে নিউইয়র্কবাসীরা নিরাপদ বোধ করবে না। এটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে কৃষ্ণাঙ্গ, বাদামী নিউইয়র্কবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং তাদেরকে আরো অপরাধী হিসেবে চিহ্নিতকরণের আবহ সৃষ্টি করবে।’ গভর্নর হকুল বলেছেন, বলেছেন যে, গৃহীত ব্যবস্থায় নিরাপত্তা রক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। নিউইয়কর্ ন্যাশনাল গার্ডের ৭৫০ সদস্য ছাড়াও পুলিশ ও মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটির অতিরিক্ত ২৫০ জন কর্মী নিয়োজিত থাকবে সাবওয়ে যাত্রীর নিরাপদ বোধ করতে সহায়তা করার জন্য।
সাবওয়ে নিরাপত্তা নিউইয়র্কবাসীদের স্থায়ী এক উদ্বেগ এবং সরকর ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য এটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণপরিবহনে অপরাধ বৃদ্ধি স্পর্শকাতর একটি বিষয়, যা সরকার ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জনপ্রিয়তায় ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উল্লেখ্য, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একই সময়ের তুলনায় বছরের প্রথম মাসে সাবওয়েতে বড় ধরনের অপরাধ ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার পর মেয়র এরিক অ্যাডামস সাবওয়েতে অতিরিক্ত ১,০০০ পুলিশ অফিসারকে মোতায়েন করার নির্দেশ দেন। সিটির দেওয়া তথ্য অনুসারে সাবওয়েতে অপরাধের হার হ্রাস পেয়েছে এবং ৩ মার্চ পর্যন্ত চলতি বছর বড় অপরাধের সামগ্রিক বৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ।