‘প্রয়োজনে নিজের পরিবারকে সময় দেব। তবু যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে সময়ের অপচয় করবো না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ব্যক্তিবিশেষের পকেটে ঢুকে গেছে।’ - এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় বিএনপির একসময়ের দাপুটে নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানকে ভালোবাসি। তার আদর্শকে বুকে লালন করছি। দলের সঙ্গে বেঈমানি করবো না। কিন্তু বর্তমান নেতৃত্ব অকার্যকর।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাধিক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রায় এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি নেই। কমিটি দেওয়ার কথা বলে কেন্দ্রের অনেক নেতা যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করেছেন। কিন্ত তারা ফিরে গিয়ে কখনো কমিটি দেওয়ার সুপারিশ করেননি। তারা সুপারিশ করার মত যোগ্য নেতা কীনা, সেটাও আমরা জানতে পারিনি। সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টনকে কেন্দ্রীয় সদস্য করার পর তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভেবেছিলেন এবার হয়তো কমিটি আসবে। কিন্তু না। দীর্ঘ সময় পার হলেও কমিটি দেওয়া হচ্ছে না। ১৭টি স্টেট কমিটি ও নিউইয়র্ক মহানগর (দক্ষিণ ও উত্তর) আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। প্রথমে এসব কমিটি সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে তা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাওয়ার পর চার নেতাও অনেকটা চুপ হয়ে গেছেন। তারাও আর কমিটি নিয়ে কোনো কথা বলছেন না।
একসময় সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একজন নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বলতে কিছু নেই। জোর করে কী দল করা যায়? এর চেয়ে ব্যবসায় মনযোগী হয়েছি। ব্যবসার শাখা বেড়েছে। দল অবশ্যই করবো। তবে ব্যবহার হতে চাই না। আমরা মন্ত্রী-এমপি হওয়ার জন্য দল করিনি। আসলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বলতে কিছু নেই। আসলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এখন দুষ্টু লোকের পকেটে ঢুকে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একসময়ের সক্রিয় নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সবসময় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাদের উপেক্ষা করে আসছেন। আর এই ভুলের কারণে দেশে বিএনপির রাজনীতির কোনো পরিবর্তন ঘটছে না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিলের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে যতটুকু কর্মসূচি পালিত হয়েছে, দেশে তার কানাকড়িও হয়নি। ফলে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। বরং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে নিষ্ক্রিয় করতে যেসব নেতা সক্রিয়, তাদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রথম সারির একজন নেতা বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি বিভিন্ন দেশে কমিটি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। অবহেলিত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা। অথচ এরশাদবিরোধী আন্দোলন এবং ১/১১ এর সময় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ব্যাপক আন্দোলন করে। ১/১১ এর সময় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বন্দী। কোথাও তার বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে না, ঠিক তখন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দিয়েছিলেন। তার সেই বক্তব্য সারা বিশ্বে প্রচার করা হয়েছিল। সে সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতারা। তখন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি জাতিসংঘ এবং হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ করে। তারা জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে চিঠিও দিয়েছিলেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টেও চিঠি দিয়েছিলেন। তাদের আন্দোলন এবং চাপের কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ সুগম হয়েছিলো। সেই বিএনপির নেতাকর্মীদের কবর রচনা করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে নিষ্ক্রিয় রেখে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছে বিএনপি হাইকমান্ড।