যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধদের চাপে বৈধ ইমিগ্রান্টরা হতাশ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫

বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের অবাধ অনুপ্রবেশের ফলে বৈধ ইমিগ্রান্টদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাদের মধ্যে আশংকা সৃষ্টি হয়েছে যে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) অবৈধ ইমিগ্রান্টদের পেছনে যেভাবে সময় ও সম্পদ ব্যয় করছে তাতে বৈধ ইমিগ্রান্টদের আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে থাকবে। টেলিভিশন চ্যানেল আমেরিকা নিউজরুমের এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি ইমিগ্রান্ট মুহাম্মদ হাসান এবং জার্মান ইমিগ্রান্ট সেবাইন দুর্দেন-কোটলার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে, অবৈধ ইমিগ্রান্টদের যুক্তরাষ্ট্রে অবাধ প্রবেশ এবং তাদেরকে ইমিগ্রেশন সেবাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করার ফলে গ্রিন কার্ড ও সিটিজেনশিপের জন্য আবেদনকারী বৈধ ইমিগ্রান্টদের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। তারা বিধিবিধান অনুসরণ করে বছরের পর বছর ধরে সিটিজেনশিপ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
হাসান বলেন যে তিনি প্রায় ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের পর তিনি সিটিজেনশিপ লাভ করার পর প্রায় চার বছর যাবত চেষ্টা করছেন তার স্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রে আনার জন্য। তার মতে, প্রতিবার ইমিগ্রেশন বিভাগ একটি কাগজ চেয়ে পাঠায় এবং প্রতিবার সেগুলো পাঠানোর পর নীরবতা ছাড়া তাদের আর কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। তার স্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার প্রচেষ্টায় তিনি কংগ্রেসম্যান, সিনেটর, এমনকি হোয়াইট হাউজে পর্যন্ত যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, আইন অনুসরণকারী আমেরিকানরা যেসব উপায় অবলম্বন করতে পারে, আমি সব চেষ্টা চালিয়ে এখন পর্যন্ত সফল হতে পারিনি। বৈধ ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় হাসানের পক্ষে এখনও পরিবার শুরু করা সম্ভব হয়নি। তাকে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য পাকিস্তানে যেতে হয় এবং এজন্য বিপুল ব্যয়ও করতে হয়। কার্যত তাকে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রে দুটি ঘর সামলাতে হচ্ছে।
দুর্দেন-কোটলার ১৯৮৯ সালে রেসিডেন্ট এলিয়েন কার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ১৯৯৬ সালে বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। এ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন পড়েছে বিপুল অর্থ ও সময়। তিনি আমেরিকা নিউজরুমকে বলেন, বর্তমানে যেভাবে বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে এবং ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট যেভাবে তাদেরকে সহায়তা করছে তাতে আমি ক্ষুব্ধ, দু:খিত ও বিচলিত। আমেরিকায় এমন কিছু ঘটতে পারে দেখে আমি হতাশ। তিনি আরও বলেন, আমি একজন আমেরিকান সৈনিককে বিয়ে করেছি। তা সত্বেও আমাকে বৈধতা পেতে বিপুল পরিমাণে দলিল-দস্তাবেজ জমা দিতে হয়েছে এবং যা আয় করেছি, তা এ কাজেই ব্যয় করতে হয়েছে। দুর্দেন-কোটলারের জীবন বদলে যায় ২০১২ সালে, যখন তার ছেলে এক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। একজন আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট গাড়িচালক তার ছেলের বাইকে ধাক্কা দিয়েছিল। লোকটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ ও শাস্তিলাভের রেকর্ড ছিল। ২০১৪ সালে তাকে ডিপোর্ট করা হয়। তার মতে শুধু তার ক্ষেত্রে এমন ঘটেছে তা নয়, আরও অনেক ঘটনা আছে, সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে হত্যাকান্ড পর্যন্ত, যার একটি বড় অংশ সংঘটিত হচ্ছে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের দ্বারা। একজন নাগরিকের আইনের প্রতি যে নিষ্ঠা ও আনুগত্য থাকে, একজন অনাগরিকের মধ্যে থাকে না। বর্তমানে যে হারে অবৈধ ইমিগ্রন্ট যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে, তা আইন অমান্য করার প্রবণতা বেড়ে যাবে।
টেক্সাসের বিতর্কিত অভিবাসন আইন ‘ফ্রিজ’ করেছে আপিল আদালত
টেক্সাসে ইমিগ্রান্ট গ্রেফতার নিয়ে বিচারকরা বিভক্ত
একটি ফেডারেল আপিল আদালত অবৈধ ইমিগ্রান্টদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশকে অধিক এখতিয়ার প্রদান করে প্রণীত টেক্সাস স্টেটের একটি আইনের কার্যকারিতাকে স্থগিত করেছে। সংশ্লিষ্ট আইনের ওপর একটি মামলার প্রেক্ষিতে এ স্থগিতাদেশ জারি করে আদালত। তবে আপিল চলাকালে আইন এ আইন প্রয়োগ করা যাবে কিনা তা নিয়ে আদালতের তিন বিচারকের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা এখনো কোনো সিদ্ধা প্রকাশ করেননি। নিউ অরলিয়ন্সের তিনজন ফেডারেল বিচারকের একটি প্যানেল রাজ্যের অভিবাসী গ্রেপ্তার আইনের বিষয়ে যুক্তি শুনেছিল। বিচারক প্যানেলের মধ্যে মতবিভেদের বিষয়টি হলো কোনো স্টেটের আইনকে যখন সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়, তখন সেটি কার্যকর হতে পারে কিনা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘন্টাব্যাপী শুনানির সময় বিচারকদের মধ্যে মাত্র দুজন কথা বলেছিলেন এবং তাদের কথায় বিভক্তির সুর স্পষ্ট ছিল।
আদালতের প্রধান বিচারক প্রিসিলা রিচম্যান অবৈধ ইমিগ্রান্টদের গ্রেফতার বিষয়ক টেক্সাসের আইনের কার্যকারিতার সাংবিধানিক বৈধতার ব্যাপারে তার সন্দেহ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের আটক করে মেক্সিকো পাঠিয়ে দেওয়ার বিধান সংক্রান্ত ধারাটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সম্মত নয় বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। অন্য বিচারক অ্যান্ড্রু এস. ওল্ডহ্যাম, যিনি টেক্সাসের গভর্নরের সাবেক পরামর্শক, তিনি টেক্সাসের আইন কার্যকর করার পক্ষে ছিলেন। তৃতীয় বিচারক, ইরমা ক্যারিলো রামিরেজ কোনো থা বলেননি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে বিচারক পদে নিয়োগ করেছেন এবং কয়েক মাস আগে তা অনুমোদন লাভ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে টেক্সাসের আইনটিকে সংক্ষিপ্তভাবে কার্যকর করার যে অনুমতি দেয়া হয়েছিল, তা স্থায়ীভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে কিনা। এ আইনে স্টেট এবং স্থানীয় পুলিশ এজেন্সিগুলোকে পূর্বানুুমতি গ্রহণ না করেই টেক্সাসে অনুপ্রবেশকারী ইমিগ্রান্টদের গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যে ক্ষমতা কেবল ফেডারেল সরকারের জন্য সংরক্ষিত।
এদিকে রিপাবলিকান স্টেটগুলো টেক্সাসের অনুরূপ আইন প্রণয়ন ও কার্যকর কথা বিবেচনা করছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে।
এদিকে টেক্সাসের বিতর্কিত অভিবাসন আইন ‘ফ্রিজ’ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আপিল আদালত। বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাজ্য এ ধরণের যে কঠোর আইন করেছে টেক্সাসের আইনটি তার অন্যতম। এসবি৪ অনুমোদন দেয়ার কয়েক ঘন্টা পর আপিল শুনানিতে এমন রায় দেয়া হয়েছে। এসবি৪ নামের আইনটির মাধ্যমে যেসব অভিবাসী আনঅথোরাইজড বা অনুমোদনহীন তাদেরকে আটক ও বিচার করার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল টেক্সাসের কর্মকর্তাদের। এই আইনের অধীনে যেসব অভিবাসীকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদেরকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মেক্সিকো। আইনটিকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বিবিসি এ খবর দিয়ে বলছে, যদি এই আইনটি কার্যকর হতো তাহলে কিভাবে অভিবাসী বিষয়ক আইন প্রয়োগ করা হতো এবং তাতে বড় রকমের একটি পরিবর্তন দেখা দিতো। এর আগে আদালত রায়ে বলেছে, শুধু কেন্দ্রীয় সরকারই দেশে অভিবাসন বিষয়ক আইন প্রয়োগ করতে পারে। সেটা কোনো রাজ্য নিজেরা করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত বেআইনিভাবে অতিক্রম করা একটি ফেডারেল ক্রাইম হিসেবে দেখা হয়।
কিন্তু যারা সীমান্ত অতিক্রম করে ফেলেন বা এ নিয়ম লঙ্ঘন করেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিবাসন বিষয়ক আদালতের মাধ্যমে দেওয়ানি বা সিভিল মামলা হয়।
কিন্তু এসবি৪-এর অধীনে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে টেক্সাসে প্রবেশের কারণে ২০ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রাখা হয়। আইনটি অল্প সময়ের জন্য কার্যকর হয়েছিল। এখন আদালতের আদেশে তা বন্ধ হয়ে গেছে। ওদিকে এসবি৪ এর অধীনে টেক্সাস যেসব অভিবাসীকে বের করে দেবে, তাদেরকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মেক্সিকো। এর আগে এসবি৪ আইনকে অভিবাসী বিরোধী আখ্যায়িত করে এর কড়া সমালোচনা করেন মেক্সিকোর কর্মকর্তারা। তারা সতর্ক করে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক জটিল করে তুলতে পারে। একই কথার প্রতিধ্বনি তোলে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য।