জাতিসংঘে সোমবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি পাস নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করেছে ইসরাইল। এই প্রস্তাব পাসের পরপরই ওয়াশিংটনে একটি সিনিয়র ইসরাইলি প্রতিনিধি দলের সফর বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে তেলআবিব। এরমধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২৬ মার্চ (মঙ্গলবার) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
২৫ মার্চ (সোমবার) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি পাস হয়। ওই প্রস্তাবে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং আটক সব জিম্মির মুক্তির দাবি তোলা হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিল। এতে চটেছেন ইসরাইলি নেতা। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইলি প্রতিনিধিদের ওয়াশিংটন সফর বাতিল করে দেন তিনি।
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরাইলের আক্রমণ নিয়ে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহে ইসরেইলের একটি সিনিয়র প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটন যাওয়ার কথা ছিল।
গাজায় চরম মানবিক বিপর্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। রাফাহ শহরটি এখন ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের জন্য তুলনামূলকভাবে শেষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সেখানে হামলা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তাই নেতানিয়াহুকে সেখানে স্থল হামলার বিকল্প উপায় বিবেচনার জন্য একটি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সেই বৈঠক স্থগিত করেছে দেশটি। যার মনে রাফাহতে হামলা ঠেকানোর মার্কিন প্রচেষ্টার পথে একটি বড় নতুন বাধা সৃষ্টি হওয়া।
রাফাহতে আক্রমণের হুমকি দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। একইসঙ্গে নেতানিয়াহু যদি বাইডেনের কথা না রাখেন এবং যেভাবেই হোক রাফায় হামলা চালানোর জন্য এগিয়ে যান তবে ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক সহায়তা সীমিত করতে পারে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যের সাবেক আলোচক অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে বিশ্বাস ভেঙ্গে যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। এই সংকট যদি সাবধানতার সঙ্গে সমাধান করা না হয় তবে এটি আরও খারাপ হতে চলেছে।
জাতিসংঘে বরাবরই গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রত্যেকবারই নো ভোট দিয়েছে তারা। ইসরাইলকে রক্ষা করার দীর্ঘ মার্কিন নীতি মেনে চলার কয়েক মাস পর এবার জাতিসংঘে ভোটদান থেকে বিরত ছিল দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত ইসরাইলি নেতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান হতাশাকেই প্রতিফলিত করছে।
নভেম্বরে পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাইডেন। ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরাইলি তাণ্ডব থামানোর জন্য শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেরই নয় বরং নিজ দল ডেমোক্র্যাটদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছেন তিনি।
৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আন্তঃসীমান্ত হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী যা এখনও চলছে।
এদিকে, গাজা ইস্যুতে নিজ দেশে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছেন নেতানিয়াহুও। তার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ঘন ঘন প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন জিম্মিদের পরিবার ও তাদের সমর্থকরা। এ অবস্থায় তাকে অবশ্যই জিম্মিদের পরিবারকে বোঝাতে হবে তিনি যা করছেন জিম্মিদের মুক্তির জন্যই করছেন।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় সফর বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, রেজোল্যুশনে ভেটো প্রদানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা দেশটির আগের অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার একটি ‘স্পষ্ট ইঙ্গিত’। তিনি সতর্ক করেছেন, দেশটির এমন পদক্ষেপ ইসরাইলের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করবে।