যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরেজাহাজের ধাক্কায় সেতু ভেঙে ছয়জন নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। যদিও তাদের উদ্ধারে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় গুরুত্বপূর্ণ ওই সেতুটি ভেঙে পড়ে। এতে করে বেশ কয়েকটি গাড়ি পানিতে পড়ে যায়। তখন থেকে ছয়জন ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। কর্মকর্তাদের আশঙ্কা তারা মারা গেছেন।
মেরিল্যান্ডের গভর্নর জানিয়েছেন, ব্রিজের সাথে ধাক্কা লাগার কিছুক্ষণ আগে জাহাজের পাইলটরা ‘মে ডে’, অর্থাৎ জরুরি বিপদ বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যার ফলে কর্তৃপক্ষ অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, জাহাজের নাবিকরা তাদের বিদ্যুৎ সঞ্চালন সমস্যা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল।’
মোর বলেন ব্রিজের প্রধান দুটি কলামের একটির ধাক্কা খাওয়ার আগে, সিঙ্গাপুর পতাকাবাহী কন্টেইনার জাহাজ ডালির নিজস্ব কোন পাওয়ার ছিল না। নাবিকদের বিপদ বার্তার কারণে পরিবহন কর্মকর্তারা ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়া আন্তঃরাজ্য হাইওয়ে বন্ধ করে দিতে পেরেছিলেন।
গভর্নরের দাবি, ‘তারা সব নায়ক। তারা গত রাতে মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন।’
সেতুতে আঘাতের আগে যে বার্তা পাঠিয়েছিল জাহাজটি
সাড়ে ৯০০ ফিট লম্বা বিশাল ডালি জাহাজের কর্মীরা যখন বুঝতে পারলো যে, কী হতে যাচ্ছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরের ল্যান্ডমার্ক হিসাবে পরিচিত পাটাপস্কো নদীর ওপরে ফ্রান্সিস স্কট কী সেতুতে সেই জাহাজের ধাক্কায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সময় সেতুটিতে বেশ কয়েকটি যানবাহন অতিক্রম করছিলো। লাইনটি দুই দশমিক ছয় কিলোমিটারের ও বেশি দীর্ঘ ছিলো।
কর্মকর্তারা বলছেন, জাহাজটিতে বিদ্যুতের সমস্যা ছিল এবং দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে একটি ফোনকলে তা জানিয়েছিলো।
বাল্টিমোর বন্দর থেকে শ্রীলংকায় ২৭ দিনের যাত্রার শুরুতে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার পরে জাহাজটির বিদ্যুৎ একেবারেই চলে গিয়েছিল। এটি এ সময় সেটি ফ্রান্সিস স্কট কী সেতুর দিকে যাচ্ছিল৷
যখন জাহাজের আলো হঠাৎ নিভে যায় তখন মধ্যরাত ছিলো, জাহাজের নাবিকরা এ সময় অন্ধকারে ডুবে যায় ।
জাহাজটি অকার্যকর হয়ে গিয়েছিলো, কোনো ইলেকট্রনিক্স এবং ইঞ্জিনের পাওয়ার ছিলো না। যা ঘটছিল তখন তা থামানোর জন্য তাদের কোন উপায় ছিলো না।
সমস্যাটি সমাধান করতে এবং বিদ্যুৎ ফিরে পেতে নাবিকদের আপ্রাণ ব্যর্থ চেষ্টার সময় একাধিক অ্যালার্ম বেজে উঠেছিলো।
জাহাজের পাইলট নাবিকদের আদেশ দিয়েছিলেন, রাডারটিকে পোর্টের দিকে শক্তভাবে ধরে রাখতে এবং নোঙ্গর ফেলে দিতে বলেছিলেন যাতে স্টারবোর্ডটি ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।
একটি জরুরী জেনারেটর থাকলেও জাহাজের ইঞ্জিনগুলো ব্যবহার করা যায়নি।
জাহাজটির পাইলটের আর কোন উপায় ছিল না। দেড়টার কিছুক্ষণ আগে, তারা একটি মে ডে কল করে আসন্ন সংঘর্ষের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে।
রেডিও ট্র্যাফিক রেকর্ডে মেরিল্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটির একজন কর্মকর্তার কথা শোনা যায়, একটি জাহাজ আসছে যেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, যতক্ষণ না আপনি এটি নিয়ন্ত্রণে না পান, আমাদের সমস্ত ট্র্যাফিক বন্ধ করতে হবে।
সেতুটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর ছয়জন নিখোঁজ রয়েছে। তারা মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিখোঁজ ছয় জনের সন্ধানে নৌকা এবং হেলিকপ্টারগুলি অনুসন্ধান প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আরও দুজনকে পানি থেকে তোলা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
ইউএস কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল শ্যানন গিলরথ সন্ধ্যায় বলেছেন, পানির তাপমাত্রা এবং কতক্ষণ তারা পানির নিচে ছিল তার উপর ভিত্তি করে বাকি নিখোঁজ ব্যক্তি যারা পানিতে পড়েছিল তাদের মৃত বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।
ধসে পড়া সেতুর ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অন্তত তিন হাজার কনটেইনার বহনকারী বিশাল পণ্যবাহী জাহাজটি আটকে ছিল।
ততক্ষণে পুরো এলাকাটি অনুসন্ধান ও উদ্ধার চেষ্টার দৃশ্যে পরিণত হয়েছিলো।