চলমান বাস্তবতায় 'আমেরিকান ড্রিম' বা আমেরিকার স্বপ্ন ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। আমেরিকার ২২টি রাজ্যেই একটি বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য ক্রেতাকে ছয় অঙ্কের বেশি আয় করতে হবে। অর্থাৎ বছরে এক লাখ ডলারের কম আয় করে এমন লোকজনের জন্য বাড়ির মালিক হওয়া এখন দুরূহ হয়ে উঠেছে !
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের কঠোর পরিশ্রম, সংকল্প এবং উদ্যোগের মাধ্যমে সাফল্য এবং সমৃদ্ধি অর্জনের সমান সুযোগ থাকাকে আমেরিকার স্বপ্ন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আমেরিকার স্বপ্ন ধরার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের প্রবাহ এখনো অব্যাহত রয়েছে। যদিও নবাগতদের জন্য এ স্বপ্ন অনেকটাই এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।
ব্যাংকরেট ডট কম নামের সংস্থাটির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে বাড়ির মালিক হওয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও আমেরিকার কর্মজীবীদের মজুরি বৃদ্ধি ঘটেছে এ সময়ের মধ্যে। তারপরও আবাসনের উচ্চমূল্য অনেকটা যুক্তিহীন হয়ে পড়েছে। জেফ অস্ট্রোস্কি নামের বিশ্লেষক বলেছেন, কেন বাড়ির মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে গেলও হঠাৎ করে? তিনি বলেন এর উত্তরে প্রথমেই চাহিদা এবং সরবরাহের অসামঞ্জস্যকে দায়ী করা যেতে পারে।
করোনা মহামারির শুরু হওয়ার কিছু আগে থেকেই আমেরিকায় নতুন গৃহ নির্মাণে ভাটা পড়তে দেখা যায়। ২০২০ সাল থেকে খুব কমই বাড়ি নির্মিত হয়েছে বা নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, নির্মাণ শ্রমিকের অপ্রতুলতা, গৃহ ঋণ প্রাপ্তি কঠিন হয়ে ওঠাকে এ অবস্থার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। বাড়ি ক্রেতাদের জন্য মর্টগেজ পাওয়া এখন আগের চেয়ে অনেক কঠিন এবং উচ্চ সুদের হার অনেক নতুন ক্রেতার জন্য সহনীয় ক্ষমতার হয়ে উঠছে না।
আমেরিকায় বাড়ি ক্রয় যোগ্যতার জন্য শুধু ব্যক্তিবিশেষের আয়ের হিসেব দেখলেই হবে না। এ হিসেবে প্রতিজনের জন্য আলাদা আলাদা। আয়ের সাথে একজনের সঞ্চিত অর্থ, চলমান ব্যয় নির্বাহ, বাড়ি ক্রয়ের পর এর মর্টগেজ পরিশোধসহ অন্যান্য বিল পরিশোধের নিশ্চিত অর্থ প্রবাহ না থাকলে বাড়ি ক্রয় এখন দুঃসাধ্য। বাড়ি ক্রয়ের বিশ্লেষণে দেখা হয়েছে একজন বাড়ি ক্রেতা বাড়ির কয় মূল্যের ২০ শতাংশ নগদ পরিশোধ করবে। ৩০ বছরের জন্য মর্টগেজ গ্রহণ করলে হিসেব করে দেখতে হবে সুদ সহ বাড়ির মাসিক মর্টগেজ পেমেন্টের অঙ্ক। পাশাপাশি টেক্স , ইনস্যুরেন্স, ইউটিলিটি বিল সহ অন্যান্য ব্যয় সামাল দেয়ার নির্দিষ্ট আয় ক্রেতার রয়েছে কি না। আমেরিকার একজন বাড়ি ক্রেতার মর্টগেজ পেমেন্ট যেন বার্ষিক মোট আয়ের ২৮ শতাংশের বেশি না হয়ে থাকে।
রেডফিন নামের সংস্থাটির দেয়া তথ্য মনে আমেরিকার বাসযোগ্য শহরগুলোতে একটি মধ্যমানের বাড়ির গড় মূল্য এখন চার লাখ ডলারের উপরে। ফলে একজন ক্রেতাকে বাড়ি ক্রয়ের জন্য কমপক্ষে বার্ষিক এক লাখ দশ হাজার ডলারের বেশী আয় করতে হবে। ব্যংকরেট ডট কমের বিশ্লেষক অনুযায়ী রাজ্য ও নগর অনুযায়ী এ মূল্যমান ও আয়ের কিছুটা হেরফের হতে পারে। মিসিসিপি, ওহায়ো, ইন্ডিয়ানা, কেন্টাকি - এসব রাজ্যে এখনো বাড়ি ক্রয় করা যাচ্ছে বছরে ষাট থেকে সত্তর হাজার ডলারের আয় থাকলে। ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বাড়ি ক্রয়ের জন্য ক্রেতার আয় বছরে এখন এক লাখ ৯৭ হাজার ডলার হলে পর্যাপ্ত মনে করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে এক লাখ ৬৭, নিউইয়র্কে এক লাখ ৪৮ হাজার এবং নিউজার্সিতে বছরে এক লাখ ৫২ হাজার ডলার আয় থাকলেই একজন আমেরিকান এখন বাড়ি ক্রয়ের স্বপ্ন দেখতে পারে।
আমেরিকায় বাড়ি কেনা এখন একটি ফাঁদের মতো। বাড়িরত মালিক হলে আমেরিকার একটি পরিবার তার সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু এখন বাড়ির মালিক হওয়ার আগেই একজন ক্রেতার কিছু পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। হ্যারিস জরিপের তথ্য অনুযায়ী আমেরিকার ৭২ শতাংশ ভাড়াটে মনে করে এখন তাদের বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য নিজের উপার্জনই যথেষ্ট নয়। তাদের মতে উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া সম্পদ বা কারো দানের অর্থ লাগবে বাড়ির মালিক হতে হলে।