বাংলাদেশের সঙ্গে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এপ্লিমেন্ট (জিসমিয়া) চুক্তি করার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি থাকায় যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি সম্পাদনে সম্প্রতি গভীরভাবে আগ্রহী হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্দিষ্টসংখ্যক সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয়, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ ক্রয় করবে। প্রয়োজনে সরঞ্জামাদি সংরক্ষণ, মেরামতের দায়িত্ব পালন করতে পারবে। চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। চীন ও ভারত থেকে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে থাকে। জাপান ও ফ্রান্সের সঙ্গেও সম্পাদিত এ ধরনের চুক্তির আওতায় বিমান ও নৌবাহিনীর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয় করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী অত্যাধুনিক সামগ্রী দিয়ে সুসজ্জিত করতে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশও এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী। উদ্দেশ্য তাদের দেশের উৎপাদিত সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ে বাংলাদেশকে আগ্রহী করা। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, নেদারল্যান্ডসও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। বাংলাদেশ আরও চারটি সাবরেমিন সমুদ্রের তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অন্বেষণ, রক্ষণাবেক্ষণে জাহাজ, কোস্টগার্ডের জন্য আটটি অত্যাধুনিক যানসহ বিভিন্ন উন্নত যান সংগ্রহের পরিকল্পনা নিচ্ছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে উৎসাহী করতে দেশসমূহ জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদে মূল্য পরিশোধের শর্তেও তাদের আপত্তি নেই। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ থেকে ঋণ সংগ্রহ করে দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় প্রতিরক্ষা খাতে প্রশিক্ষণ, তথ্য আদান-প্রদান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মহড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা রয়েছে। এক্সেস ডিফেন্স আর্টিক্যালের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রতিরক্ষাসামগ্রী দিয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য তারা দুটি বিশেষ ধরনের নৌযান, একটি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান, ৫৯টি মাইন প্রতিরোধ যানবাহন দিয়েছে। তবে এসব সামরিক যান পুরোনো। এগুলো কেনা হয় ১০ কোটি মার্কিন ডলারে। এসব প্রতিরক্ষাসামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণ ও যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করতে যন্ত্রাংশ ক্রয় করতে হয়। জানা যায়, এ বাবদ বছরে বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ কতে হয়। গত সাত বছরে যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ক্রয়, মার্কিন বিশেষজ্ঞদের পেছনেই ব্যয় হয়েছে ছয় কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এতে বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে না। তার পরও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন প্রতিরক্ষাসামগ্রী ক্রয়ের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ না করে বিবেচনায় রেখেছে বলে জানা যায়। তবে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েই স্পর্শকাতর সামরিক চুক্তি করার কথা ভাবা হচ্ছে।
ভারত ও চীন, বিশেষভাবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ কী ধরনের সামরিক চুক্তি করেছে এবং নতুন করে করতে যাচ্ছে, সেসব সম্পর্কে সতর্ক পর্যবেক্ষণ রাখছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। একইভাবে চীনও বাংলাদেশসহ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চুক্তি, ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলেই জানা যায়।