‘ভালো’র খাদ্য বিতরণ নিয়ে চ্যানেল ১১’র রিপোর্ট

নিউইয়র্কে ফ্রি খাদ্য সংগ্রহে ক্ষুধার্তদের দীর্ঘ লাইন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:২১


বাংলাদেশ রিপোর্ট: নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান ও স্থায়ী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ক্ষুধার্ত লোকদের সারি প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে। গত রোববার সিটির বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা জ্যামাইকার হিলসাইডে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবিক সাহায্য সংস্থা ‘ভালো’ নামের একটি নন-প্রফিট সংগঠনের দেওয়া বিনামূল্যে খাদ্য সংগ্রহকারীদের দীর্ঘ সারি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বেশ কয়েকটি ব্লক দীর্ঘ ছিল এই সারি এবং বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে জানার পর অনেকে বিতরণ শুরু হওয়ার ১৪ ঘন্টা আগে থেকে অপেক্ষা করছিল সারিতে । নিউইয়র্কের অনেক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে খবরটি । স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘পিক্স ১১ নিউজ’ তাদের খবরে বলেছে যে, খাদ্য সংগ্রহের জন্য ক্ষুধার্ত মানুষের এই ভিড় প্রমাণ করে যে, নিউইয়র্ক সিটি জুড়ে আশেপাশের এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও ক্ষুধা বিরাজ করছে। ‘ভালো’র স্বেচ্ছাসেবী সামিরা তাহসিন চ্যানেল পিক্স ১১ নিউজকে বলেছেন, “সকলে ভাবে যে, আমেরিকা একটি বিশাল ও ধনী দেশ। অতএব, তাদের খাদ্য সহায়তার কোনো আবশ্যকতা নেই। কিন্তু আমি মনে করি, এটা সত্য নয়।” এলাকাটি যেহেতু মুসলিম অধ্যুষিত, সেজন্য রমজান মাস শেষে ১০ এপ্রিল বুধবার অনুষ্ঠিতব্য ঈদের আগে যেসব মুসলিমের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন তাদের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণের জন্য ‘ভালো’ এই উদ্যোগ নিয়েছিল।
বিনামূল্যে খাদ্য সংগ্রহের জন্য সারিতে অপেক্ষমান ছিল আনুমানিক ১,৫০০ লোক। তাদের একজন ছিলেন কুইন্সের বাসিন্দা রাজ্জাক মোহাম্মদ। দোভাষীর মাধ্যমে তিনি পিক্স ১১ নিউজকে বলেন যে, তার আয় খুব সামান্য এবং বিনামূল্যে বিতরণ করা খাদ্য সংগ্রহ করতে পারলে তার এবং তার পরিবারের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। চ্যানেল পিক্স ১১ নিউজ বলেছে, নিউইয়র্ক সিটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার রূঢ় বাস্তবতা হলো যে, আগে যেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সিটির বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হতো, এখন অনেক স্থানে তা প্রাত্যহিক বিতরণে প্রসারিত হয়েছে। ‘ভালো’ হেরাল্ড স্কোয়ারে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনেরও বেশি হোমলেস লোক এবং অন্যদের খাদ্য সহায়তাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করে। এ সংগঠনটি নন-প্রফিট সংস্থাগুলোর ক্রমবর্ধমান নেটওয়ার্কের অংশ, যারা করদাতাদের অর্থে দরিদ্র মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে। ‘ভালো’র অপারেশন ডাইরেক্টর জে, রহমান বলেছেন, ‘ভালো’র মত আরো বেশ কিছ ু কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন প্রায়ই স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা মূল্যায়ন করে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য বিতরণ করে থাকে, যেসব খাদ্য তারা খেতে অভ্যস্ত। জে, রহমান আরো বলেছেন, ‘“আমাদের কমিউনিটির লোকজন নির্দিষ্ট ধরণের খাবার খেতে অভ্যস্ত। সেজন্য তারা টিনজাত কোনো খাবার নিচ্ছে না। আমাদের এমন ধরণের খাবার প্রয়োজন, যা আমাদের কমিউনিটির সদস্যদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। আমাদের লোকজন যেসব খাবার খেয়ে অভ্যস্ত নয়, সেগুলো বিতরণ করা হলে তা অপচয় হবে ভেবে, যাতে অপচয় রোধ করা যায়, আমরা সেদিকে খেয়াল রাখি। নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়ামস, যিনি খাদ্য বিতরণ উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলেছেন যে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তিনি খাদ্য সংগ্রহকারীদের দীর্ঘ লাইনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তিনি বলেন, আমি বলতে চাই যে, সিটিতে এসাইলাম আবেদনকারীরা আসার আগে থেকেই এটি একটি সমস্যা ছিল। মানুষের দীর্ঘ সারি দেখাটা বিরক্তিকর। প্রতি উইকএন্ডে আমরা সিটিজুড়ে মানুষের এমন লাইন দেখতে পাই।
উল্লেখ্য নিউইয়র্ক সিটিতে করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে দেখা দিলে সাধারণ মানুষের মাঝে খাবার ও স্বাস্থ্য রক্ষা সামগ্রী পৌছে দিতে রাস্তায় নামেন ভালো’র একদল তরুণ। করোনাকালে একদিনও ঘরে বসে থাকেনি তারা। “মানুষ মানুষের জন্য” এ শ্লোগান সামনে রেখে জীবনের মায়া পেছনে ফেলে রাস্তায় নেমে আসেন। এজন্য একটি খাবারের ট্রাকও ক্রয় করা হয়। ভালো’র মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচী অব্যাহত রাখা হয়েছে। নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন কমিউনিটির এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোই অলাভজনক এ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।