বিগত কয়েক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সূদের সর্বোচ্চ হার দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের আমেরিকানদের ওপর কঠোর আঘাত হেনেছে। সূদ হার দৃশ্যত কোনো প্রভাব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে না এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি স্থিতিস্থাপক বলে মনে হলেও উপরিভাগের নিচেই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের আমেরিকান পরিবারগুলো সংগ্রাম করছে। কেন্টাকির লুইসভিলের ক্রিস নান বলেছেন, বাড়ি কেনার জন্য ঋণের পরিমাণ এত কম ঋণ এবং সূদ হার এত বেশি, যা দিয়ে কারও পক্ষে বাড়ি কেনা সম্ভব নয়।
মর্টগেজ পরিশোধ করা সম্ভব না হওয়ায় ঋণের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে উচ্চ সুদ হার এখনো আমেরিকার আর্থিক ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করেনি। অর্থনীতিবিদরা যে আশঙ্কা করেছিলেন যে বেড়ে চলা সূদহার অনেকেকে দেউলিয়া করবে এবং অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি করবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কিন্তু লক্ষ লক্ষ নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের আমেরিকান পরিবারের জন্য সূদের উচ্চ হার শোচনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
ক্রেডিট কার্ড এবং অটো লোনের পেমেন্টে অনেক বেশিসংখ্যক আমেরিকান পিছিয়ে পড়ছে। কারণ অনেক বেশি সংখ্যক লোক এমনকি আগের চেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণ করছে। দুই বছর আগে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বৃদ্ধি করতে শুরু করার পর থেকে আমেরিকানদের মাসিক সুদের ব্যয় বেড়েছে। সূদের উচ্চহার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে জিনিসপত্রের উচ্চ মূল্যের কারণে। এর ফলে চাপে থাকা পরিবারগুলোর সঞ্চয় হ্রাস পেয়েছে। তাদের বেতন ও মজুরি বৃদ্ধির হার বেড়ে চলা বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় বর্ধিত ঋণের খরচ তাদেরকে আর্থিক প্রান্তিক অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
টেনেসির ক্লার্কসভিলের আর্মি ভেটেরান ওরা ডরসি বলেন, আমেরিকায় অর্থনৈতিক পাগলামি শুরু হয়েছে। ঋণের ফাঁদ থেকে মানুষের বের হয়ে আসা কঠিন করে তুলেছে এখনকার সূদ হার। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, যারা ঋণ নিয়েছে, তাদের পক্ষে শুধু ঋণের সূদ পরিশোধ করা সম্ভব, মূল ঋণ পরিশোধ করা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। মিসেস ডরসি কয়েক বছর ধরে কাজ করেছেন তার ঋণ পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে। আশা করেছিলেন তিনি ঋণভার থেকে মুক্ত হতে পারবেন। একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা তাকে সাময়িকভাবে কাজের বাইরে রেখেছিল।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যালেন্স ঋণসহ অন্যান্য ঋণের হাজার হাজার ডলার পরিশোধ করার চেষ্টায় তিনি এখন তিনটি কাজ করছেন। তিনি ঋণ পরিশোধ করে যাচ্ছেন, কিন্তু সূদের উচ্চ হার তাকে ঋণমুক্ত হতে কোনো সাহায্য করছে না। তিনি তার হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, “আমার পক্ষে কিভাবে কাজ থেকে অবসর নেয়া সম্ভব? আমি তো সঞ্চয় করতে পারছি না। সংকট মুহূর্তের জন্য যে তহবিল আছে তা থেকে আমাকে ঋণ শোধ করতে হচ্ছে।
ঋণ থেকে মিসেস ডরসির যথাশীঘ্র পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফেডারেল কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা সুদের হার তাদের বর্তমান স্তর আরও কয়েক মাস ধরে রাখবেন। নীতিনির্ধারকরা বলছেন যে, তারা মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশিতভাবে কমবে বলে ধরে নিয়ে শেষ পর্যন্ত হার কমানোর পরামর্শ দেবেন। মূল্য বৃদ্ধি আবার দ্রুত পেতে থাকলে তারা সূদ হার আরেক দফা বৃদ্ধির বিষয় বিবেচনা করতে পারেন।