সুড়ঙ্গের শেষে কোনো আলোর দেখা মিলছে না। নেতা-কর্মীরা আশায় বুক বাঁধলেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির জন্য কোনোই সুখবর নেই। প্রায় এক দশক পার হলেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হয়নি। আর হবেও না। দলের হাইকমান্ড এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে। আপাতত বিভিন্ন স্টেট কমিটি দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে। ঢাকা ও লন্ডনের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বিএনপিতে হাইকমান্ড বলতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেই বোঝায়। সেই তারেক রহমানই চান না যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নামে কোনো কমিটি হোক। বরং বিভিন্ন স্টেটে কমিটি করে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিএনপির কার্যক্রমকে চাঙ্গা করতে চান তিনি।
সূত্র জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের একেকটি রাজ্য বাংলাদেশের চেয়ে বড়। বরং তাদের উজ্জীবিত করতে রাজ্যভিত্তিক কমিটি হলে বরং নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হবেন। তৃণমূলে দলের শক্তি বাড়বে। এজন্য ইতিমধ্যে নিউইয়র্কসহ ১৭টি রাজ্যে কমিটি গঠন প্রায় শেষের পথে।
ঢাকার একটি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের ব্যাপারে হাইকমান্ডের আগ্রহ ছিল। কিন্তু নেতৃত্বের কোন্দলে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনে ব্যর্থ হয় হাইকমান্ড। বিশেষ করে সবাইকে ম্যানেজ করে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন দলের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এজন্য ওই বছরই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিদায়ী সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট, প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার, সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদ এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লুকে লন্ডনে ডেকে পাঠান তিনি। কিন্তু কে সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক হবেন তা নিয়ে শীর্ষ নেতারা সমঝোতায় পৌঁছতে না পারায় তারেক রহমান সেই সময় কোনো কমিটি দেননি। লন্ডন যারা গিয়েছিলেন তারাও তারেক রহমানের ওপর নিজেদের ভাগ্য ছেড়ে দিয়ে আসেন। কথা ছিল কিছুদিনের মধ্যেই তারেক রহমান নতুন কমিটি দেবেন। কিন্তু সেই কিছুদিন আর শেষ হয়নি। বিশ্বের নানা দেশে নতুন কমিটি হচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি আর আসে না।
দীর্ঘ এক দশকে মূল কমিটি না পেলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কমিটি পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে বইতে শুরু করেছিল ঐক্যের সুবাতাস। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস ও ঐক্যে এখন ভাটা পড়েছে। অনেক নেতাকর্মীর কমিটি থেকে বাদ পড়া এবং কমিটিতে অনেককে যথাযথ মূল্যায়ন না করার অভিযোগ ওঠে। এই বিবাদেও চরম বিরক্ত হয় দলের হাইকমান্ড। আর এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র কমিটি গঠনের চিন্তা থেকে সরে এসেছেন খোদ তারেক রহমান।
দীর্ঘদিন কমিটি না আসায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ হলেও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর থেকে আস্থা হারাননি। তাদের মতে- ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কেউ ভুল বুঝিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হবে। রাজ্য কমিটি গঠন শেষ হলেই কমিটি আসবে। এক দশক দেরী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলের হাইকমান্ডকে কেউ ভুল বুঝিয়েছে। তা না হলে কমিটি আসতে এত দেরী হবার কথা নয়।
গিয়াস আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা ত্যাগী ও পরীক্ষিত। তারা দলকে ভালোবাসেন। আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোনো বিকল্প নেই। তারপরও কেন্দ্র যদি মনে করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটির দরকার নেই, সেই সিদ্ধান্তই মেনে নেব। পদ-পদবীর জন্য বিএনপির রাজনীতি করি না।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লুর এ প্রসঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হওয়া উচিত। কমিটি না হলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে না। নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ ইতিমধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এটা দলের জন্য ভালো নয়। তিনি বলেন, রাজনীতিতে সঠিক নেতৃত্বের প্রয়োজন আছে। নেতৃত্ব ছাড়া সংগঠন চালানো যায় না।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাংশের নেতা ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আখতার হোসেন বাদল ঠিকানাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি নেই প্রায় এক দশক। কিন্তু আমি তো বসে নেই। দলকে ভালোবাসি। আমি শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করি। তিনি বলেন, পদে না থাকলেও এক দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির রাজনীতি থেকে দূরে ছিলাম না। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। তবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি এখন সময়ের দাবি।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, কমিটি নেই। পদ নেই। কিন্তু প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় আছি। তিনি বলেন, কমিটি না থাকলে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্দোলন করছি।
কমিটি গঠন নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, কমিটি দেয়ার নাম করে আমাদের সামনে মূলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কমিটি না দিলে বলে দেওয়া উচিত। এভাবে জিয়ার সৈনিকদের তিলে তিলে ধ্বংস করা হচ্ছে। তারা বলেন, ২০১২ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ভেঙে দেয়া হয় ওহি নাজিলের মাধ্যমে। কমিটি ভেঙে দেয়ার সময় দলের গঠনতন্ত্রও মানা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী সম্মেলন করে কমিটি করা হয়। সম্মেলনেই আগের কমিটি ভেঙে দেয়া হয় এবং নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এমনকী কমিটি ভেঙে দেয়ার পর আহ্বায়ক কমিটিও দেয়া হয়নি। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত কমিটি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন তো দূরে থাক – কমিটি না দিয়ে অপমান করা হচ্ছে।