যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘মানবিক সংকট’ দেখা দেওয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সিটি মেয়র ম্যুরিয়েল বাউসার ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন। বেআইনি পথে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এবং আরিজোনা স্টেটে ঢুকে পড়া হাজার হাজার অভিবাসীকে বাসযোগে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়ে দেওয়ায় এই সংকট ক্রমেই ঘনিভূত হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাইডেন প্রশাসনের কাছে গত জুলাইতে ন্যাশনাল গার্ড এবং অর্থ সহায়তা চেয়েছিলেন মেয়র বাউসার। ইতিবাচক সাড়া পাওয়া দূরের কথা হোয়াইট হাউজ এবং পেন্টাগণের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে সেই আবেদন নাকচ করা হয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ৮ সেপ্টেম্বর সিটি মেয়র বাউসার বাইডেন প্রশাসনের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টেক্সাস ও আরিজোনার রিপাবলিকান গভর্ণররা প্রতিদিন হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীর চাপে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বাইডেন প্রশাসনের নমনীয়তার সুযোগে মিছিল করে লোকজন ঢুকছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ অবস্থায় ডেমক্র্যাটদের শায়েস্তার অভিপ্রায়ে ডেমক্র্যাট শাসিত ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো এবং নিউইয়র্ক সিটিতে বাস ভরে বেআইনিভাবে ঢুকে পড়া বিদেশীদের পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কের সিটি মেয়র এরিক এডামস এই পরিস্থিতি সামলাতে হোয়াইট হাউজের সহায়তা চেয়েছেন। এখন পর্যন্ত তা পাননি মেয়র এডামস। নিজের সাধ্য অনুযায়ী সে সব অভিভবাসীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছেন এডামস। কিন্তু সাধ্যে আর কুলাচ্ছে না মেয়র বাউসার প্রশাসনের। সেজন্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘জরুরি অবস্থা’ (পাবলিক ইমার্জেন্সী) জারি করলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে অবৈধ অভিবাসীদের জন্যে ফেডারেল সহায়তা (ফুড স্ট্যাম্প, চিকিৎসা-সেবা ইতাদি) স্থগিত করা হয়েছিল। ৮ সেপ্টেম্বর বাইডেন প্রশাসন সেই স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নেওয়ার দিনই ডিসি মেয়র এই ঘোষণা দিলেন। বিপুলসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীর জন্য খাদ্য এবং আবাসন ব্যবস্থা করা তার সিটির পক্ষে একেবারেই অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। মেয়র বলেন, কয়েক সপ্তাহে বাস ভরে ৯৪০০ বিদেশী এসেছেন ডিসিতে। তাৎক্ষণিকভাবে ১০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান চেয়েছিলেন মেয়র বাউসার। বাইডেন প্রশাসন নাকচ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাইডেনের আমলে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজারের অধিক এবং গত ৮ মাসে ২০ লক্ষাধিক মানুষ মেক্সিকো হয়ে বেআইনিভাবে টেক্সাস ও আরিজোনায় ঢুকে পড়েছে। এদেরকে প্রতিহত করতে সীমাহীন নিরবতা অবলম্বন করছে হোয়াইট হাউজ-এমন অভিযোগ ঐ দুই স্টেট গভর্ণরের। তারা লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীর চাপে হিমসিম খাচ্ছেন। এর জবাব দিতেই ডেমক্র্যাট শাসিত সিটিতে বাস ভরে কিছু অবৈধ অভিবাসীকে পাঠানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। উল্লেখ্য, করোনা মহামারির কারণে ট্রাম্প প্রশাসন সীমান্ত সিল মেরে দিয়েছিল। গত এপ্রিলে বাইডেন প্রশাসন সে নির্দেশ উঠিয়ে নিয়েছে। ট্রাম্প আমলে আরেকটি বিধি জারি করা হয়েছিল যে, অবৈধ অভিবাসীরা ফেডারেল সহায়তা নিলে গ্রীণকার্ড পাবে না। সেই নির্দেশটিও প্রত্যাহার করা হয়েছে ৮ সেপ্টেম্বর। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী আলেজান্দ্রো মেয়রকাস ৮ সেপ্টেম্বর এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীগণের সাথে মানবিক আচরণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে ট্রাম্প আমলের অমানবিক পদক্ষেপকে রহিত করার বিকল্প ছিল না। বৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীগণের সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থেও এই ব্যবস্থা জরুরী হয়ে পড়েছিল।