২ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে ১০ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী

যুক্তরাষ্ট্র সংবাদদাতা
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গত প্রায় দুই বছরে ১০
লাখের অধিক অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করেছে। এ সংখ্যা বিশ্বের
যেকোনো দেশে, যেকোনো সময়ের অভিবাসী প্রবাহের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বলে বাইডেন
প্রশাসনের সমালোচকরা অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন। এসব ইমিগ্রান্টকে
সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে বাইডেন প্রশাসন বেশ কয়েকবার
যুক্তি প্রদর্শন করলেও তা ধোপে টেকার মতো নয় বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক
রিপোর্টে বলা হয়েছে।
বর্ডার পেট্রোল এজেন্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে আসা ইমিগ্রান্ট এবং
আন্তর্জাতিক মানবপাচার গ্যাংয়ের সহায়তায় মেক্সিকো থেকে মালবাহী ট্রেলার
ট্রাকে যেসব অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করেছেন তাদের সংখ্যা যোগ করলে
বাইডেনের আমলে আগত অবৈধ ইমিগ্রান্ট সংখ্যা আরও বেশি হবে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে আনডকুমেন্টেড বা অবৈধ
অভিবাসী সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ, তার দ্বিতীয় মেয়াদে এ সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ
ছাড়িয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেয়াদে অভিবাসী প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ
করা সত্ত্বেও অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি এবং এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,
ট্রাম্পের চার বছরে প্রায় ২০ লাখ বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করেছে। এর বাইরে
রয়েছে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৭ লাখ অভিবাসী, যারা শৈশবে মা-বাবার সঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল, যুক্তরাষ্ট্রেই বেড়ে ওঠেছে, কিন্তু বহু বছর অতিক্রান্ত হওয়া
সত্ত্বেও তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। ‘টিপিএস’ বা
টেম্পোরারি প্রটেকটেড স্ট্যাটাসের আওতায় রয়েছে আরও প্রায় ৫ লাখ বিদেশি,
যাদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান
করছে বহু বছর যাবত। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি অবৈধ
ইমিগ্রান্ট বসবাস করছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের মধ্যে
প্রায় দশ লাখ এসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে। এসাইলাম
অফিস থেকে যাদের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে তাদের বিষয় পুন:বিবেচনার জন্য
ইমিগ্রেশন জজদের কাছে পাঠানো হয় এবং ইমিগ্রেশন আদালতগুলোতে প্রায় ছয় লাখ
এসাইলাম কেস বিবেচনাধীন রয়েছে। লোকবলের ঘাটতির কারণে এসাইলাম অফিস ও
ইমিগ্রেশন আদালতগুলোতে অনিস্পন্ন এসাইলাম কেস ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আট-দশ
বছর যাবত আটকে থাকা কেস অসংখ্য। ২০১৪ বা ২০১৫ সালে এসাইলাম আবেদন
করেছেন এমন বহু এসাইলাম প্রার্থীর আজ পর্যন্ত ইন্টারভিউ হয়নি। এ ধরনের
আবেদনকারীদের একটি বড় অংশ পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাদের
ইমিগ্রেশন আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে তারা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েও যেতে
পারছেন না। এ ধরনের আবেদনকারীর মধ্যে ১৫০টি দেশের এসাইলাম প্রার্থী রয়েছেন
বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ইমিগ্রেশন আদালতের দলিলের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক
টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
যারা সীমান্তে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তারা সীমান্তেই ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের
সরবরাহ করা কাগজপত্রে এসাইলামের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সিটিতে চলে এসেছেন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ
তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও হাত খরচের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু এটা নিতান্তই সাময়িক
ব্যবস্থা। নিউইয়র্ক সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি, অরিগেনের পোর্টল্যান্ড সিটির নবাগত
অভিবাসী আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ঘুরে নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন যে
অভিবাসীদের চাপে তারা হিমশিম খাচ্ছে। অনেক স্থানে স্থানীয় হোটেল ভাড়া করে
অভিবাসীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পোর্টল্যান্ড সিটির কর্মকর্তারা
বলেছেন যে তাদের পক্ষে অভিবাসীদের আশ্রয়ের নিরাপত্তা প্রদান করা আর সম্ভব
হচ্ছে না। তাদের জরুরি আবাসন সামর্থ্য চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে। ২০২১ সালের
জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পোর্টল্যান্ড সিটি নবাগত ইমিগ্রান্টদের
পেছনে ৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইমিগ্রেশন ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের
সবচেয়ে উত্তপ্ত বিতর্কিত ইস্যু। দেশের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে স্রোতের তোড়ের মতো
ইমিগ্রান্ট প্রবাহ নিয়ে প্রশাসন চাপের মধ্যে থাকলেও ইমিগ্রান্ট প্রবেশ
কোনোভাবেই বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ইমিগ্রান্টদের একটি সময়ের জন্য
ডিটেনশনে বা নজরদারিতে রাখার পর তারা কোথায় যায়, কী করে সেদিকে প্রশাসন খুব
মনোযোগ দেয়। অনেকে জনস্রোতে মিশে যায়, হারিয়ে যায়। তাদের মধ্যে এমন একটি
অংশও আছে যাদের কেস ইমিগ্রেশন আদালতে বিবেচনাধীন, কিন্তু আদালতের চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত আসার আগেই তারা ডিপোর্ট হওয়ার আশঙ্কায় আর আদালতে হাজির হয় না,
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টে 'আইস’ হাজিরা দেওয়ার আবশ্যকতা
বিবেচনা করে না। ‘আইস’ এর এমন জনশক্তি নেই যে তারা পালিয়ে থাকা কোনো
ইমিগ্রান্টকে খুঁজে বের করবে। খুব স্বল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে তারা ডিপোর্টেশনের
আদেশপ্রাপ্ত অভিবাসীদের ধরে ডিপোর্ট করতে সক্ষম হয়।