ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট ক্লাব ইউএসএ-এর উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপিত হয়েছে। সাড়ম্বরভাবে নিউইয়র্কের উডসাইডের গুলশান টেরেসে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি দুই পর্বে সম্পন্ন হয়।
প্রথম পর্বে ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও র্যালির দ্বিতীয় পর্বে কেক কাটা, আলোচনা ও বিভিন্ন প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা এদিন দুপুরের পর থেকেই জড়ো হতে থাকেন নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসে। টি-শার্ট বিতরণের পর শুরু হয় র্যালি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বাঁশি, ঢোল-তবলা বাজিয়ে, গান গেয়ে র্যালিকে আরও আনন্দঘন করে তোলেন। উল্লেখ্য, র্যালীতে লালবাসের প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়। আরও ছিলো ঢাবিকে নিয়ে লেখা ভালবাসায় সিক্ত প্ল্যাকার্ড।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এনথেম গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে কেক কাটার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়পর্ব। মহুয়া মৌরি ও মুহাম্মদ শাফীর উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনভেনর মো. মাসুদুল ইসলাম, নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, ডেপুটি কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল ইসলাম, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজিং অফিসার এমডি লোকমান হোসাইন।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। তারা কেউ ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে মেতে উঠেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট ক্লাব ইউএসএ-এর সদস্যরা।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট ক্লাবের এই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছি কনসাল জেনারেল হিসেবে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে। যখন থেকে এই অনুষ্ঠানের খবর পেয়েছি, তখন থেকেই এই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিলাম। আমার মনের আঙিনায় এখন ভাসছে সেই টিএসসি, কলাভবন, নীলক্ষেত, মলচত্বর, কার্জন হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি আর রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের প্রতিটি স্মৃতি”।
গ্র্যাজুয়েট ক্লাবের আহ্বায়ক মাসুদুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে সত্য সুন্দর ও উজ্জ্বল আগামীর স্বপ্ন। জীবনের অনিবার্য ডাকে আমরা হয়তো ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে এসেছি, তবে আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয় কখনো প্রাক্তন হয় না। এই গ্র্যাজুয়েট ক্লাবের মাধ্যমে আমরা আবার সবাইকে এক সুঁতোয় গাঁথবো”।
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে ছিল- র্যাফেল ড্র টিকিট বিতরণ, তথ্যচিত্র প্রদর্শন, বক্তৃতা, স্মৃতিচারণ, দলীয় ও একক সংগীত পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি, ফ্যাশন শো, নৃত্য পরিবেশনা, ক্যাম্পাসভিত্তিক নাটিকা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
গ্র্যাজুয়েট ক্লাব কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি ম্যাগাজিন বের করা হয়।
‘অপরাজেয় মিলনমেলা ম্যাগাজিন- ২০২২’ নামের এই স্মরণিকায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক নিবন্ধ, কবিতা, এবং গল্প প্রকাশিত হয়েছে। ম্যাগাজিনটি সম্পাদনা করেছেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সিলভিয়া সাবেরীন ও মামুন রাশিদ।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট ক্লাব ইউএসএ-এর আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন- মোহাম্মদ মাসুদুল ইসলাম। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মশিউর রহমান, কহিনূর বেগম, মোহাম্মদ মহসিন উদ্দীন মোল্যা, মহুয়া পারভীন, মামুন রাশিদ, এবং সিলভিয়া সাবেরীন।
মিলনমেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর পরিচালনা করেন মামুন রাশিদ এবং সিলভিয়া সাবেরীন। রম্য বিতর্ক এবং ভিন্নধর্মী ফ্যাশন শো অনুষ্ঠানে আরও মনোরম করে তুলে। ফ্যাশন শো তে ঢাবি’র বিশেষ গুলো এবং ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়। মামুন রাশিদ আর আরিফিন টুলুর কন্ঠে জনপ্রিয় গান গুলো দিয়ে মুখরিত হয়ে উঠে গুলশান টেরেস। রাতের খাবারের পর র্যাফেল ড্র এর পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সবশেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় রাত ১১টায়।