চলতি মাসের শুরুতে লেবার ডে উইকেন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়, ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক এবং কানাডার মন্ট্রিয়ালে অনুষ্ঠিত হলো ৩৬তম ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলন। ২০২১ সালে ৩৫তম বিভক্ত ফোবানা সম্মেলন থেকে জন্ম হয়েছিল চার ফোবানার। চলতি বছর সম্মেলন শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা প্রবাসী
বাংলাদেশিদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখেছিলেন, ফোবানা প্রতি বছর একটি করে বাচ্চা প্রসব করে যাচ্ছে। ফোবানার বিরোধ বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে।
প্রবাসীদের সেই আশঙ্কা সত্যি হতে চলেছে। ৩৭তম সম্মেলন আগামী বছর। কিন্তু তার আগেই আবারো বিরোধের আভাস মিলছে। অর্থাৎ চার ফোবানা বেড়ে ৫, ৬, ৭ হতে পারে। ইলিনয়ের শিকাগো ফোবানা সম্মেলন শেষে আগামী বছর ৩৭তম সম্মেলন টেক্সাসের ডালাসে হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসকে। আর এতে আগুনে ঘি ঢালার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ নেতৃত্বের কোন্দল চলছে এই সংগঠনে। ইতিমধ্যে পাল্টাপাল্টি কমিটি হয়েছে। এমনকী বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতের রায় বা সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই একাংশকে ফোবানা আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের একাংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি লুৎফর রহমান স্বপন এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদা আলী। আরেক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন আহ্বায়ক হাসমত মুবিন এবং সদস্য সচিব সাঈদ চৌধুরী। কিন্তু ৩৭তম ফোবানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আহ্বায়ক কমিটিকে। ফলে এ নিয়ে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ডালাসের প্রবাসী বাংলাদেশিরা আশঙ্কা করছেন, এই বিরোধের জেরে ডালাসেই আগামী বছর দুটি ফোবানা সম্মেলন হতে পারে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের একাংশের নেতা কাজী চৌধুরী ঠিকানাকে জানান, হাসমত মুবিন ও সাঈদ চৌধুরীকে ৩৭তম ফোবানার হোস্ট করায় আমরা এক্সিকিউটিভ কমিটিকে চিঠি দিয়েছি। আদালতে মামলা চলছে বলেও জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের যে জবাব দিয়েছেন তা হতাশাব্যঞ্জক। তারা আমাদের জানিয়েছেন, তারা নিজেরাই ভাঙনের মধ্যে রয়েছেন। এই মুহূর্তে তার আর ভাঙন চান না। এ কারণে হাসমত মুবিন ও সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসকে ৩৭তম ফোবানার হোস্ট করা হয়েছে।
কাজী চৌধুরী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির জবাবের পর আমরা শিগগিরই বৈঠকে বসবো। এরপর প্রয়োজনে পাল্টা ফোবানা সম্মেলনের ঘোষণা দেব।
উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের স্বদেশ-সংস্কৃতির আলোকে ঐক্যবদ্ধ রেখে নতুন প্রজন্মে বাঙালিত্ব প্রবাহিত করা এবং মূলধারায় জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সংকল্পে ১৯৮৭ সালে জন্ম নেওয়া ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) একসময় ঐক্যবদ্ধ ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম ছিল এই ফোবানা। কালের বিবর্তনে নয়, নেতৃত্বের কোন্দলে ১৯৯৪-এ প্রথমবারের মতো বিভক্ত হয়ে যায় ফোবানা। এরপর থেকে চলছে শুধু ভাঙনের খেলা। গত ২৮ বছর ধরে বিভক্ত ফোবানার ব্যানারে পৃথক অনুষ্ঠান হচ্ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে ৩৫তম ফোবানা সম্মেলন শেষে দ্বিধাবিভক্ত ফোবানা ভেঙে হয় চারটি। এ বছর চারটি ফোবানাই অনুষ্ঠিত হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় ও নিউইয়র্ক এবং কানাডার মন্ট্রিয়ালে। এসব সম্মেলনে প্রবাসীদের উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক।
ফোবানার সঙ্গে একসময় ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন, কিন্তু বিরোধের কারণে দূরে সরে গেছেন, এমন বেশকয়েকজন নেতা বলেন, ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করার বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছু ‘দুষ্টু লোক’ ফোবানায় আসন গেঁড়ে বসেছেন। এসব লোকের কারণে ফোবানা কোনোদিনও ঐক্যবদ্ধ হবে না। বরং কমিউনিটিকে ভাঙছে তারা।
উল্লেখ্য, আগামী ৩৭তম ফোবানা সম্মেলনও হবে কমপক্ষে চারটি। শিকাগ্ োসম্মেলন থেকে পরবর্তী সম্মেলন ডালাস, লস অ্যাঞ্জেলেস সম্মেলন থেকে পরবর্তী সম্মেলন মন্ট্রিয়াল, নিউইয়র্ক সম্মেলন থেকে পরবর্তী সম্মেলন ভার্জিনিয়ায় এবং মন্ট্রিয়াল সম্মেলন থেকে পরবর্তী সম্মেলন কানেকটিকাটে হবে বলে ঘোষণা এসেছে। ফলে ফোবানা নিয়ে বিভক্তি ছাড়া ঐক্যের কোনো সুখবর নেই আপাতত। বরং চারটি বেড়ে কয়টি হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রবাসীরা।