মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস নিজেকে হঠাৎ করে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, কমলা আগে তার কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয় সামনে আনতেন না। বুধবার (৩১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় বার্ষিক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প এ কথা বলেন। খবর রয়টার্সের।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘কমলা হ্যারিস সব সময় ভারতীয় ছিলেন। তিনি শুধু ভারতীয় ঐতিহ্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। কয়েক বছর আগে তিনি নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন, তখনই আমি জানলাম যে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ। এখন তিনি কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে গেলেন এবং এই পরিচয়ে পরিচিত হতে চান।’
ট্রাম্প যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন সম্মেলনে উপস্থিত এক হাজার দর্শকের মধ্যে অনেকে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গি করছিলেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি আসলে জানি না, তিনি (কমলা হ্যারিস) ভারতীয়, নাকি কৃষ্ণাঙ্গ? তবে আমি দুই পরিচয়কেই শ্রদ্ধা করি। কিন্তু নিশ্চিতভাবে তিনি সেটা করেন না। কারণ, তিনি শুরু থেকেই ভারতীয় ছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি সুর পাল্টে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত হলেন।’
তবে ট্রাম্পের কথাটি সঠিক নয়। পারিবারিক পরিচয়ের জায়গা থেকে কমলা হ্যারিস ভারতীয় ও জ্যামাইকান ঐতিহ্য বহন করেন। তিনি লম্বা সময় ধরেই নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। কমলা হ্যারিস প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় আমেরিকান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) যা বলেছেন, তা অত্যন্ত জঘন্য। এটা অপমানজনক।’
জুলাই মাসের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরু করার পর অনলাইনে লৈঙ্গিক ও বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হচ্ছেন কমলা হ্যারিস। কিছু উগ্র ডানপন্থী ব্যবহারকারী অনলাইনে তার বর্ণ পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। ট্রাম্প নিজেও ব্যক্তিগতভাবে কমলাকে আক্রমণ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্ল্যাক জার্নালিস্টসের ওই সম্মেলনে তিন কৃষ্ণাঙ্গ নারী সঞ্চালক ছিলেন। এর মধ্যে এবিসি নিউজের প্রতিবেদক রেচেল স্কট ট্রাম্পের বেশ কিছু বর্ণবাদী মন্তব্য তালিকাভুক্ত করেন এবং প্রশ্ন করেন, কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা কেন ট্রাম্পকে সমর্থন দেবেন? এ সময় সম্মেলনস্থলের পরিবেশ উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
জবাবে ট্রাম্প এ প্রশ্নকে ভয়াবহ, শত্রুতাপূর্ণ ও অসম্মানজনক বলে উল্লেখ করেন এবং এবিসিকে ভুয়া সংবাদমাধ্যম দাবি করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আব্রাহাম লিঙ্কনের পর আমি ছিলাম কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রেসিডেন্ট।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর দর্শকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালে ট্রাম্পের বিভিন্ন মিথ্যা মন্তব্যের কারণে দর্শকদের একজন চিৎকার করে বলেন, ‘স্যার, আপনার লজ্জা নেই?’ পরে অবশ্য অন্যরা তাকে চুপ করিয়ে দেন।
রিপাবলিকান কৌশলবিদ হুইট এরিস বলেন, হ্যারিসের বর্ণ ভিত্তিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প বিচক্ষণতার পরিচয় দেননি। হ্যারিসের পরিচয়ের বিষয়ে না বলে তার বিভিন্ন নীতি নিয়ে কথা বলতে পারতেন তিনি।