যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ৮ নভেম্বর। মধ্যবর্তী নির্বাচন। নির্বাচনের মাত্র ১০ দিন বাকি। নির্বাচনের মাত্র দেড় সপ্তাহ আগে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামী পল পেলোসি নিজেদের বাড়িতে এক হামলাকারীর ‘সহিংস আক্রমণের শিকার’ হয়েছেন। এ হামলার ঘটনার পর নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে ভয়ানক রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে সরকারের একটি সতর্কবার্তা। শুক্রবার পল পেলোসির ওপর হামলার খবরের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই মার্কিন সরকার সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে একটি বুলেটিন বিতরণ করেছে। বুলেটিনে বলা হয়েছে- নির্বাচনের আগে প্রার্থী এবং নির্বাচনী কর্মীদের ওপর সহিংসতা ও হামলার ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। আদর্শগতভাবে ক্ষুব্ধ চরমপন্থিরা এসে হামলা চালাবে।
এছাড়া গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ঘোষণা করেছে, পেনসিলভানিয়ার এক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা কংগ্রেসম্যানের বিরুদ্ধে একাধিক ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওই কংগ্রেসম্যান ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট এরিক সোয়ালওয়েল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যারা জয়লাভ করবে তারাই পরের বছর মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ পাবে। রিপাবলিকান পার্টি তার সমর্থকদেরকে বলছে যে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ঠেকানোর এটা শেষ সুযোগ। অন্যদিকে, ডেমোক্রেটরা বলছে যে, এই নির্বাচনে তারা হেরে গেলে মার্কিন গণতন্ত্রই ধংসের ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। এ নির্বাচনে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ও সেনেটের নিয়ন্ত্রণ কোন দলের হাতে যাবে তা নির্ধারিত হবে। রাজনৈতিকভাবে গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়া একটি পরিস্থিতিতে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ রিপাবলিকান পার্টির বহু নেতা ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে হামলায় উস্কানি দিয়েছিল। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিভাজন আরও তীব্র হয়েছে এবং মার্কিন গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে গেছে।
শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সান ফ্রান্সিসকোর বাড়িতে ঢুকে এক অনুপ্রবেশকারী তাকে দেখতে চেয়েছিল। না পেয়ে তার স্বামী পল পেলোসিকে (৮২) হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ২টার পর চালানো এ হামলায় পল মাথায় ও ডান হাতে আঘাত পান বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। হামলার পর পলকে দ্রুত সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার ফেটে যাওয়া মাথা, আঘাত পাওয়া ডান হাত ও বাহুতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন স্পিকার পেলোসির একজন মুখপাত্র। চিকিৎসকরা আশা করছেন, পল দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ঘটনাস্থল থেকে যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ডেভিড ডেপাপে (৪২) বলে শনাক্ত করেছে পুলিশ। ডেপাপেকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ডেপাপের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে হামলা, বৃদ্ধের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সহিংসতা, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে; তাকে সান ফ্রান্সিসকো কাউন্টি কারাগারে রাখা হবে।
মার্কিন ক্যাপিটল পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেট দলীয় স্পিকার পেলোসি যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের উত্তরাধিকারের সাংবিধানিক লাইনে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন, হামলার সময়টিতে ওয়াশিংটনে সুরক্ষিত অবস্থায়ই ছিলেন।
পুলিশ প্রধান স্কট জানান, কী উদ্দেশ্যে গভীর রাতে হামলাটি চালানো হয়েছে কর্তৃপক্ষ তা তদন্ত করে দেখছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জরুরি-৯১১ থেকে খবর পেয়ে পেলোসির বাড়িতে গিয়ে হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন ও হামলাকারীকে গ্রেফতার করেন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পল জরুরি নাম্বার ৯১১-এ ফোন দিয়ে ‘সাংকেতিকভাবে’ কথা বলেছিলেন, তিনি হামলার মধ্যে আছেন সরাসরি তা বলেননি; কিন্তু তিনি যার সঙ্গে কথা বলেন ওই লোক বুঝতে পারেন কিছু একটা অঘটন ঘটেছে।
পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন এমন একজনকে উদ্ধৃত করে পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশকারীকে পল বলেছিলেন তার বাথরুমে যাওয়া দরকার, তারপর গোপনে ৯১১-এ কল দেন; বাথরুমে তার মোবাইল ফোনটি চার্জে দেওয়া ছিল।
৯১১ অপারেটর তার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন, তাকে যা বলা হয়েছে ঘটনা তার চেয়ে জটিল কিছু; তিনি কলটিকে স্বাভাবিকভাবে না নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাঠান বলে স্কট জানিয়েছেন। ওই অপারেটরের সিদ্ধান্তকে ‘জীবন রক্ষাকারী’ আখ্যা দিয়ে তার প্রশংসা করেছেন সান ফ্রান্সিসকোর পুলিশপ্রধান। আর নয়তো ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতে পারত।
ঘটনার বিষয়ে অবহিত এক ব্যক্তি নাম না প্রকাশ করার শর্তে রয়টার্সকে জানান, অনুপ্রবেশকারী পেলোসির তিনতলা লাল ইটের বাড়িটির পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে, প্রবেশ করেই সে ‘ন্যান্সি কোথায়?’ বলে চেঁচাতে থাকে। তারপর ন্যান্সির স্বামী পলের ওপর হামলা চালায়।
সন্দেহভাজন হামলাকারীর বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে সে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক হতে পারে বলে কিছু ওয়েবসাইট ইঙ্গিত দিয়েছে।