যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হলে নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হবেন। প্রবাস থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো হবে। কিন্তু কমিটি না হলে কে বা কারা লাভবান হচ্ছে সেই প্রশ্ন জোরেশোরে সামনে আসতে শুরু করেছে। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অনেকে প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন, কমিটির লোভ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় বড় গিফট আদায় করছেন লন্ডনে অবস্থানরত কতিপয় লোভী নেতা। তারা ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের হাইকমান্ডকে ভুল বোঝাচ্ছেন। এককথায় দুষ্টু লোকের খপ্পড়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, এমনটি মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।
ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের অনেকে দেশে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনেকে ভবিষ্যত নেতৃত্ব দেবারও যোগ্য। এত যোগ্যতা থাকার পরও ১৩ বছরে কেন কমিটি হচ্ছে না, তা এখন পরিস্কার। হাইকমান্ড থেকে বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও কমিটির কোনো খবর নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট ও সিটিসমূহে বিএনপির কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অথচ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের ব্যাপারে হাইকমান্ড নিরব। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারাও কেন্দ্র থেকে এক প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিনেও তারা সরাসরি বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পাননি। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা ঠিকানাকে জানিয়েছেন, ১৩ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তিন নেতা লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিলেন। তখন তাদের কাছে কমিটি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর দীর্ঘ সময় পার হলেও কমিটি আর হয়নি। অথচ নেতারা এমন রাজনীতি করেন যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত দূরে থাক, কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘একজন চাকরও তার মনিবের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ পান। কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ন্যুনপক্ষে যোগাযোগের সক্ষমতা হারিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কথিত সিনিয়র নেতারা। বরং তাদের দেখলে মনে হয়, তারা বিএনপির রাজনীতি করেন না, চাকরগিরি করেন।’
নিউইয়র্ক : বিএনপি নেতা আব্দুস সালামকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন কমিটি না হলেও তীব্র হতাশার মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ব্যানারে নিজেদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছেন। তাদের মতে- ‘আমরা জিয়ার আদর্শের সৈনিক। দলকে ভালোবাসি। তাই দলের দুর্দিনে পাশে আছি।’ কিন্তু মুখে বললেও ধীরে ধীরে হতাশায় ডুবতে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। আগে বিভিন্ন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যেত। সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠান হলেও তাতে উপস্থিতি থাকে হতাশাব্যঞ্জক। অন্যদিকে কমিটি না থাকায় তিন-চার গ্রæপে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এদিকে ৩০ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে একটি পার্টি হলে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীর এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিলুপ্ত কমিটির অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ এবং যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব মিজানুর রহমান মিল্টন ভূঁইয়া।
অতীতের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির সমর্থনে মার্কিন কংগ্রেসসহ আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে নেয়ার জন্যেই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি দরকার বলে অনেকে অভিমত দেন ওই সভায়।
সভায় কেউ কেউ উল্লেখ করেন, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হতে না পারার খেসারত দিতে হচ্ছে কমিটিহীন অবস্থায় থেকে। বিএনপির মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, বেগম জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও বহুবার যুক্তরাষ্ট্রে এসে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানিয়ে গেছেন। কেউ কেউ নগদ-নারায়ন অথবা মূল্যবান উপঢৌকনের বিনিময়ে কাউকে কাউকে সভাপতি/সেক্রেটারি বানানোর অঙ্গীকার করে গেছেন। বাস্তবে কোনকিছুরই প্রতিফলন ঘটেনি।
গভীর রাত পর্যন্ত চলা ওই সভায় নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন- বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট, ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব সোলায়মান ভূইয়া, আলহাজ্ব বাবরউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক কাজী আজম, বাবুল চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন, নিয়াজ আহমেদ জুয়েল, সৈয়দ এম রেজা, ফিরোজ আহমেদ, মোশারফ হোসেন সবুজ, এম এ সবুর, রকিবুল ইসলাম দুলাল, হেলালউদ্দিন, আবু তাহের, কোষাধ্যক্ষ জসীমউদ্দিন, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, যুবদলের নেতা এম এ বাতিন, জাসাস নেতা ইঞ্জিনিয়ার সায়েম রহমান এবং জাহাঙ্গির সোহরাওয়ার্দি, ছাত্রদলের নেতা মাজহারুল ইসলাম জনি, বিএনপি নেতা আলহাজ্ব মাহফুজুল মাওলা নান্নু, পারভেজ সাজ্জাদ, মার্শাল মুরাদ, এস এম ফেরদৌস, শাহাদৎ হোসেন রাজু, গোলাম এন হায়দার মুকুট, হুমায়ূন কবীর, রাফেল তালুকদার, সরোয়ার খান বাবু, মোহাম্মদ জে মোল্লা, বাসেত রহমান, গোলাম মোহাম্মদ, কাওসার আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, রিয়াজ মাহমুদ, মিজানুর রহমান, এ জেড এম হাসান, হাসান মাহমুদ প্রমুখ।
সক্রিয় স্টেট ও সিটি বিএনপি: এদিকে সদ্য ঘোষিত নিউইয়র্ক স্টেট ও সিটি উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের সক্রিয় রেখেছেন। প্রায়ই এই তিন সংগঠনের ব্যানারে পৃথক পৃথক সভা-সমাবেশ হচ্ছে। তবে গত ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপি, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আহবায়ক আব্দুস সালাম মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন।
সভায় আব্দুস সালাম বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর তাই তাদের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেনা। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রয়োজনে জাতিসংঘের সহায়তা নিন। জাতিসংঘের অধীনে এ নির্বাচন দিন।
নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সদস্য সচিব সাইদুর রহমান সাইদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন স্টেট বিএনপির আহবায়ক মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আতিকুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক গোলাম ফারুক শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাকসুদুল এইচ চৌধুরী, নিউইয়র্ক মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, উত্তরের আহবায়ক আহবাব চৌধুরী খোকনসহ অনেকে।
পরে দেশ ও দলের সকলের কল্যাণ কামনায় দোয়া করা হয়। মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আতিকুর রহমান দোয়া পরিচালনা করেন।